কলকাতা, 20 অক্টোবর : আপন ভাবনায় মা দুর্গার রূপ ৷ ছবি এঁকে ফুটিয়ে তুলেছে এক হাজার শিশু । এই এক হাজার শিশুর আঁকা ছবি দিয়েই এবার মণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি । এটাই এবার এখানকার পুজোর থিম । এই থিমের নাম দেওয়া হয়েছে সহজিয়া । এমন উদদ্যোগে উৎসাহ দিতে তৃতীয়ার দিন পুজো মণ্ডপে ক্যানভাসের ছবি আঁকলেন শিল্পী সনাতন দিন্দা । বলা ভালো, ক্যানভাসে মা দুর্গার ছবি আঁকা শুরু করলেন এই শিল্পী, আর ছবি শেষ করল বেশ কয়েকজন শিশু ।
COVID-19 পরিস্থিতিতে হতাশা আর দুঃখের মধ্যে এ বছর শারদ উৎসবের আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে এক সময় অনিশ্চয়তা ছিল । অবশেষে, শারদ উৎসবের আয়োজন করেছে বিভিন্ন পুজো কমিটি । হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির সহ সম্পাদক সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "যখন থেকে লকডাউন হয়েছে, তখন থেকে অনিশ্চিয়তা ছিল কী করবো ৷ শুরুতে শুধুমাত্র কাপড়ের মণ্ডপের কথা হয়েছিল । তখন আমরা ভাবলাম কাউকে এনগেজ করি, ছোটদের এনগেজ করি । শুধুমাত্র সিম্পল, হাইফাই মম্যাটেরিয়ালস নয়, শুধুমাত্র ছোটদের আঁকা, ছোটদের ডেডিকেট করেই এই প্ল্যানিংটা করা হয় ।"
এই বছর এই পুজো কমিটির থিম সহজিয়া । শিশুদের নিয়ে কাজ । হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির সহ সম্পাদক আরও বলেব, "সারা পৃথিবী হতাশা এবং দুঃখের কথা বলছে । লকডাউনের মধ্যে এক হাজার শিশুকে খোঁজ করে ওদের ড্রয়িং কিট এবং একটি সাবজেক্ট দিয়ে দেওয়া হয় ৷ তাঁদের ভাবনায় দুর্গাপুজো । সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া হয়েছে ।" একটি বাচ্চা বা শিশু যেটা ভাববে, সেটা নিয়েই এ বছর দুর্গাপুজো করা হয়েছে । শিল্পী কৃষাণু পাল, সহশিল্পী আলোকসজ্জায় আশিস সাহা এবং, আবহতে শতদ্রু কবীর । তিনজনের প্রয়াসে এই মণ্ডপ তৈরি হয়ে উঠেছে । সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, "এবার আনন্দের একটি জায়গা করতে চেয়েছি হাজরা পার্ক প্রাঙ্গণে । এই উৎসাহের খবর শুনে বিখ্যাত শিল্পী সনাতন দিন্দা আমাদের এখানে চলে আসেন ৷ ক্যানভাসে উনি ড্রয়িং করেন এই কারণে যে, পড়াশোনা বাদ দিয়েও ছোটদের যে এক্সট্রা কারিকুলারে তাঁদের যে আর্টেরও ট্যালেন্ট আছে, তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ।" তিনি আরও বলেন, "আমি আশা করব বাবা-মায়েরাও ছোটদের এই আনন্দের জায়গাটা যেন ভুলে না যান এবং আরও উৎসাহ দেন ।"
এবিষয়ে এদিন শিল্পী সনাতন দিন্দা বলেন, "হাজরা পার্ক পুজো মণ্ডপে যেভাবে ছোটদের নিয়ে শিল্পকীর্তি ভেবেছে, সেটা অভাবনীয় । ছোটরা অনেকদিন ধরে দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছে । সেই জায়গা থেকে তাঁদেরকে কাজে ফিরিয়ে আনা, আনন্দে ফিরিয়ে আনা, এটা ভালো উদ্যোগ, আমি স্বাগত জানাই ।" এদিন তিনি আরও বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেয়েছিলাম মানুষ কাজে ফিরুক, কাজের মধ্যে আসুক । এই প্যানডেমিকে পৃথিবীর 80 শতাংশ মানুষ কর্মহীন । তাঁরা যদি এই দুর্গাপুজোর শিল্পের মাধ্যমে কিছু কাজ পান, কিছু পরিবার বাঁচবে । শুধুমাত্র ত্রাণ দিয়ে একটি পরিবারকে, মানুষকে বাঁচানো যায় না । কাজের দরকার তাঁদের । কাজের বিনিময়ে টাকা দরকার ।"