কলকাতা, 12 ফেব্রুয়ারি : কোরোনা আতঙ্কের মাঝেই গতবছর রাজ্যে ধেয়ে এসেছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান । তছনছ করে দিয়েছিল সবকিছু। ভিটে হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। এবার সেই ভিটে হারানো মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি । মূলত, 1991 সালের ব্যাচের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে শুরু করা হয়েছে 'ছাদ' প্রকল্প । যে প্রকল্পে আমফানে মাথার 'ছাদ' হারানো 500 পরিবারকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছেন প্রাক্তনীরা। ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্যে এক পা এগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তৈরি হচ্ছে পাঁচটি বাড়ি । বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, পয়লা বৈশাখেই সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে আমফান ঘূর্ণিঝড়ে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনা । যার মধ্যে সুন্দরবন ব-দ্বীপ এবং অন্যান্য এলাকা সহ উপকূলবর্তী অঞ্চলও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি প্রাথমিক অনুমানে বলা হয়েছে প্রায় 10 লাখ বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । বাসস্থান বলতে মূলত 'কাঁচাবাড়ি' অর্থাৎ মাটির বাড়ির কথা বলা হয়েছে । যেগুলি যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আমফানেও এই ধরনের ভিটেমাটি হারানো মানুষগুলির পাশে দাঁড়াতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রস্তাব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের 1991 সালের ব্যাচ। কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রামের অধীনে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাক্তণীদের সঙ্গে যৌথভাবে "ছাদ" নামে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
"ছাদ" প্রকল্পের লক্ষ্য আগামী দুই বছরে 500টি কংক্রিট স্ট্রাকচারের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া । তার পরবর্তী বছরগুলিতে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে । প্রতিটি গ্রামে 10টি করে বাড়ি তৈরি করা হলে মোট 50টি গ্রামে প্রথম ধাপে 500টি বাড়ি তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর 24 পরগনার বেলিয়াডাঙা গ্রামের হাসনাবাদ ব্লকে পাঁচটি বাড়ি তৈরির কাজ চলছে । পয়লা বৈশাখে সেগুলি পাঁচটি পরিবারকে দেওয়া হবে। ওই গ্রামেই আরও পাঁচটি বাড়ি তৈরি হবে। একটি লিভিং রুম কাম বেডরুম, একটি কিচেন ও একটি করে টয়লেট থাকবে বাড়িগুলিতে । বাড়িগুলি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ভারি বৃষ্টিপাত ও তীব্রবেগে হাওয়া সহ্য করতে পারে ।
বিস্তর গবেষণার পর প্রথম গ্রাম হিসেবে বেলিয়াডাঙা গ্রামকে নির্বাচন করেছে "ছাদ" কমিটি। এই প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবেন তা নির্বাচনে সাহায্য করেছেন গ্রামবাসী, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতি এবং হাসনাবাদের ব্লক আধিকারিকের অফিস ।
প্রাক্তনীদের সঙ্গে মিলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ নিয়ে আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাশ বলেন, "আমি সবসময় মনে করি, মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা একমাত্র রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয় । রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সমাজেরও উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। আর সম্পর্ক যখন মজবুত হয় তখনই এরকম জনহিতকর কার্য সম্ভব হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এটাই করার চেষ্টা করেছে । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আলাদা ঐতিহ্য আছে। স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে, অরবিন্দ ঘোষের হাত ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এর ঐতিহ্যের অনেকগুলি ধারা রয়েছে। একটি জাতীয়তাবাদের ধারা, একটা গণতন্ত্রের ধারা ও আরেকটি সমাজকল্যাণ বা সামাজিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে সজাগ থাকা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা তাই করেছে এবং এই 'ছাদ' উদ্যোগের মাধ্যমে প্রমাণ করল সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা। আমি গর্বিত। আশা করব আগামীদিনে এই রকম আরও প্রকল্প হবে। যারা এই প্রকল্পের জন্য এগিয়ে এসেছেন আমি তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি ।"