কলকাতা , 24 এপ্রিল : অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আগে মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরিকল্পনা ছিল ৷ কিন্তু লকডাউনের কারণে তা আর হচ্ছে না । লকডাউনের মধ্যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চললেও থমকে রয়েছে ফলপ্রকাশের প্রক্রিয়া । মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি জানাচ্ছেন , লকডাউনের মধ্যে কিছু করা সম্ভব নয় । তবে, লকডাউন ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুততার সঙ্গে মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের লক্ষ্যে কাজ করবে পর্ষদ ও শিক্ষক মহল উভয়েই । জানা গেছে , ইতিমধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষকদের কাছে পড়ে থাকা উত্তরপত্রগুলির দু'বার করে মূল্যায়নের কাজ শেষ হয়ে গেছে । লকডাউন ওঠার পরদিনই সেই উত্তরপত্র প্রধান পরীক্ষকদের কাছে জমা পড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
18 ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা । শেষ হয়েছিল 27 ফেব্রুয়ারি । এই বছর সঠিক সময়ে ফল প্রকাশ করতে প্রথম থেকেই পরীক্ষকদের সময়ে মূল্যায়ণ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । সেই কারণে পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছিল উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ । তার মধ্যেই কোরোনা মোকাবিলায় লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় মাঝপথেই থমকে যায় মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ ৷ পাশাপাশি নম্বর ও উত্তরপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে । মাধ্যমিকের প্রতিটি বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করে দু'টি ভাগে প্রধান পরীক্ষকদের কাছে উত্তরপত্র ও নম্বর জমা করতে হত পরীক্ষকদের । দু'টি ভাগে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত সেই নম্বর পর্ষদের কাছে জমা করতে হত প্রধান পরীক্ষকদের । লকডাউন শুরুর আগেই প্রধান সাতটি বিষয়ের প্রথম ভাগের উত্তরপত্র ও নম্বর পরীক্ষকরা প্রধান পরীক্ষকদের কাছে জমা করে দিয়েছিলেন । কিন্তু, তারপর লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় ভাগের উত্তরপত্র ও নম্বর জমা করতে পারেননি পরীক্ষকরা । প্রথম ভাগের নম্বরও প্রধান পরীক্ষকরা পর্ষদের কাছে জমা করতে পারেননি।
প্রথমে 15 এপ্রিল পর্যন্ত ও তারপর 10 জুন পর্যন্ত রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার । লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে 3 মে পর্যন্ত করা হয়েছে । বর্তমানে মাধ্যমিকের পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকরা সকলেই গৃহবন্দী । সাধারণত, অন্যান্য বছর মে মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ হয়ে থাকে । কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশে দেরি হওয়া অনিবার্য । কিছুদিন আগে লকডাউন উঠলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের চেষ্টা করা হবে বলে পরীক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় । সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল তার কয়েকদিন পরই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে পরীক্ষকদের জন্য জারি হওয়া একটি বিজ্ঞপ্তিতে । সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষকদের কাছে যে উত্তরপত্রগুলি রয়েছে সেগুলি অন্ততপক্ষে দুবার পরীক্ষা করে , মার্কস-ফয়েলে নম্বর দিয়ে সেগুলি ও উত্তরপত্রগুলি প্রধান পরীক্ষকদের কাছে জমা করার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে । লকডাউন শিথিল হলেই পর্ষদ নম্বর জমা দিতে বলতে পারে । সেই কারণেই পরীক্ষকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে ।
এর মধ্যেই ফলপ্রকাশের কাজে গতি আনতে প্রধান পরীক্ষকদের বাড়ি থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নম্বর সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেছে বলে জল্পনা-কল্পনা চলছিল পরীক্ষক মহলে । যদিও লকডাউনের মধ্যে এই ধরনের কোনও পরিকল্পনা করা হয়নি বলে সাফ জানিয়ে দেন পর্ষদ সভাপতি । তিনি বলেন , " রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে 60 হাজারের উপর পরীক্ষক আছে । সেখানে থেকে খাতা তুলে আনা যায় ? এটা হয় না । লকডাউন যতক্ষণ না উঠবে ততক্ষণ কোনও ভাবনাচিন্তাই নেই আমাদের । এখন একটা যুদ্ধ চলছে । সেটা আগে ঠিক হোক ।" প্রধান পরীক্ষকরাও জানাচ্ছেন , তাঁদের কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করা নিয়ে কোনও ফোন পর্ষদের তরফে করা হয়নি ।
মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গতিবিধি নিয়ে জানা যাচ্ছে , পরীক্ষকদের কাছে পড়ে থাকা উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে । এখন পরীক্ষকদের বাড়িতে উত্তরপত্র পড়ে আছে । লকডাউন ওঠার পরদিনই হয়তো সব উত্তরপত্র প্রধান পরীক্ষকদের কাছে জমা পড়ে যাবে । এরপরে স্ক্রুটিনির কাজ হবে । জানা গেছে, প্রধান পরীক্ষকদের কাছে জমা পড়া প্রথম ভাগের উত্তরপত্রগুলির স্ক্রুটিনির কাজও কিছু হয়েছে , কিছু বাকি থেকে গেছে । লকডাউন ওঠার পর দ্বিতীয় ভাগের উত্তরপত্রগুলি প্রধান পরীক্ষকদের কাছে জমা পড়ার পরেই জোরকদমে প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের উত্তরপত্রগুলি স্ক্রুটিনির কাজ শুরু হয়ে যাবে । যেখানে প্রথম ভাগের স্ক্রুটিনির কাজ হয়ে গেছে সেখানে দ্বিতীয় ভাগের উত্তরপত্র স্ক্রুটিনির কাজ হবে । দ্রুততার সঙ্গে স্ক্রুটিনির কাজ করে পর্ষদের কাছে নম্বর জমা করতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ।