ETV Bharat / state

লকডাউনে রোজগার নেই বাঁশ শিল্পীদের

কোরোনার সংক্রমণের জেরে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প কারিগরদের অবস্থা শোচনীয় ৷ অভাবের তাড়নায় হস্তশিল্প ছেড়ে করতে হচ্ছে মাটি কাটার কাজ ৷ অভিযোগ, পাচ্ছেন না সরকারী কোনও সাহায্য ৷

The condition of bamboo handicraftsmen is critical in Corona situation
কোরোনা আবহে বাঁশ হস্তশিল্প কারিগরদের অবস্থা সঙ্কটজনক
author img

By

Published : Jun 30, 2020, 7:57 PM IST

কলকাতা, 29 জুন : বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাঁশ দিয়ে তৈরি সূক্ষ্ম হস্তশিল্পের কাজ । দেশ-বিদেশে প্রসিদ্ধ রাজ্যের বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প পাড়ার অবস্থা বর্তমানে সঙ্কটজনক ৷ কাজের বরাত না থাকায় পেটের টানে বহু হস্তশিল্পের কারিগর মাটিকাটা ও ভ্যান চালানোর কাজ করছেন । অনেকে কাজ না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন । হেঁসেলে চড়ছে না হাঁড়ি । এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পথ খুঁজছেন কারিগররা ।

কলকাতার অদ্বৈত মল্লিক লেন ও রমেশ দত্ত স্ট্রিটে বাঁশের তৈরি ক্ষুদ্র শিল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত হাজারেরও বেশি মানুষ । সাধারণত, প্যান্ডেলের কাঠামো, দুর্গা প্রতিমার চালি, অন্যান্য সূক্ষ্ম বাঁশের কাজ করে থাকে তারা । কলকাতাসহ গোটা রাজ্যের অধিকাংশ স্থানেই বাঁশের যাবতীয় কাজ এখান থেকেই সরবরাহ হয় । শুধুমাত্র শহর বা রাজ্য নয়, বিদেশের মাটিতেও পাড়ি দেয় এখানকার কারিগরদের তৈরি বহু কাজ । প্রায় 200 বছরের বেশি সময় ধরে বেশ সুনামের সঙ্গেই কাজ করে চলেছেন অদৈত্য মল্লিক লেন, রমেশ দত্ত স্ট্রিটের এই কারিগররা ৷ কাজের বরাত নিতে এখানকার কারিগরদের গ্রাহকদের কাছে যেতে হয় না । গ্রাহকরা নিজেরাই এসে রীতিমতো লাইন দিয়ে বরাত দিয়ে যান । কিন্তু বেশ কয়েক পুরুষ ধরে করে চলা এই কাজের ছেদ ঘটাল কোরোনা ভাইরাস । গত 3 মাসের বেশি সময় যাবৎ মেলেনি কাজের বরাত । উপার্জন হয়নি কোনও টাকা । জমানো টাকাও প্রায় শেষ । বিশেষ করে পুজোর আগের এই সময়টাতে কাজের ফুরসত অবধি মেলে না । ব্যস্ত থাকে কারিগরেরা । পুজোর প্যান্ডেলের কাঠামো, দুর্গার মূর্তির চালি তৈরি-সহ বাঁশ দিয়ে তৈরি অন্যান্য কাজগুলো করতে করতেই ভুলতে হয় নাওয়া-খাওয়া । ব্যবসার অধিকাংশ অর্থ এই সময়টায় উপার্জন করে ফেলতেন তাঁরা ।

কিন্তু বর্তমানে সম্পূর্ণ অন্য ছবি । কোরোনা সংক্রমণ কেড়ে নিয়েছে এদের রুজিরুটি । নষ্ট করেছে জীবন জীবিকা । এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুজোর জন্য বাঁশের কাঠামো তৈরির কোনও কাজের বরাত পায়নি তাঁরা । যেখানে এক সময় বাঁশের কাজের ব্যাপ্তিতে পা রাখার জায়গা থাকত না । খট খট শব্দে ঝালাপালা পড়তো কান । সেখানে এখন শুধু নিঃশব্দতা । সর্বত্র ফাঁকা । দিনদুপুরে কাজের সময়টিতে তাস খেলে বা অন্য বিনোদনে যোগ দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন কারিগরেরা ।

কেমন আছেন বাঁশ হস্তশিল্প কারিগররা?

রমেশ দত্ত স্ট্রিটের কারিগর শক্তি মোহন দাস বলেন, " লকডাউনের শুরু থেকেই কোনও কাজ নেই । খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছি । আমরা এবার আশায় বসে আছি, সরকার আমাদের জন্য কী ব্যবস্থা করবে ৷ পূর্বপুরুষ থেকে এই কাজ করে আসছি । অন্য কোনও কাজ করতে জানি না । তা সত্ত্বেও অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে পেট চালানোর জন্য মাটি কাটা ও ভ্যান চালানোর মতো কাজ করছি । " অন্য এক কারিগর জীবেশ দাস বলেন, " আমরা পুরোপুরি বসে রয়েছি । কোনও কাজ নেই । এই সময় কাজের চাপ থাকে । আর এখন ফাঁকা । আমাদের এখান থেকে সারা ভারতে কাজ যায় । এমনকি আমাদের 6 জন ছেলে রাশিয়াতে গিয়েও কাজ করে এসেছে । পরিস্থিতি খারাপ তবুও সরকারি সাহায্য পাচ্ছি না ৷ এর আগে কখনও আমরা সরকারের সাহায্য পাইনি ৷ এখনও পাইনি ৷ " আরও এক কারিগর অদৈত্য লেনের কাশীনাথ দত্ত ৷ তিনি বলেন, " পরিস্থিতি খুব খারাপ লকডাউনে । কাজের অবস্থাও খুব খারাপ ৷ না বাঁশ পাওয়া যাচ্ছে, না অর্ডার আসছে ৷ সাহস করে কেউ অর্ডার দিতে চাইছে না । আজ কাজ হচ্ছে , কাল হচ্ছে না ৷ আগে প্রতিদিন 200 টাকা আয় হত । এখন 50 টাকাও উপার্জন নেই । কোনও অর্ডার নেই ৷ ফলে খাব কী করে । অবস্থা খুবই খারাপ ৷ "

এবিষয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, " লকডাউন - কোরোনা ভাইরাসের কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনা পয়সায় রেশনের চাল-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন । আমরা নজর রাখছি । "

কলকাতা, 29 জুন : বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাঁশ দিয়ে তৈরি সূক্ষ্ম হস্তশিল্পের কাজ । দেশ-বিদেশে প্রসিদ্ধ রাজ্যের বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প পাড়ার অবস্থা বর্তমানে সঙ্কটজনক ৷ কাজের বরাত না থাকায় পেটের টানে বহু হস্তশিল্পের কারিগর মাটিকাটা ও ভ্যান চালানোর কাজ করছেন । অনেকে কাজ না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন । হেঁসেলে চড়ছে না হাঁড়ি । এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পথ খুঁজছেন কারিগররা ।

কলকাতার অদ্বৈত মল্লিক লেন ও রমেশ দত্ত স্ট্রিটে বাঁশের তৈরি ক্ষুদ্র শিল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত হাজারেরও বেশি মানুষ । সাধারণত, প্যান্ডেলের কাঠামো, দুর্গা প্রতিমার চালি, অন্যান্য সূক্ষ্ম বাঁশের কাজ করে থাকে তারা । কলকাতাসহ গোটা রাজ্যের অধিকাংশ স্থানেই বাঁশের যাবতীয় কাজ এখান থেকেই সরবরাহ হয় । শুধুমাত্র শহর বা রাজ্য নয়, বিদেশের মাটিতেও পাড়ি দেয় এখানকার কারিগরদের তৈরি বহু কাজ । প্রায় 200 বছরের বেশি সময় ধরে বেশ সুনামের সঙ্গেই কাজ করে চলেছেন অদৈত্য মল্লিক লেন, রমেশ দত্ত স্ট্রিটের এই কারিগররা ৷ কাজের বরাত নিতে এখানকার কারিগরদের গ্রাহকদের কাছে যেতে হয় না । গ্রাহকরা নিজেরাই এসে রীতিমতো লাইন দিয়ে বরাত দিয়ে যান । কিন্তু বেশ কয়েক পুরুষ ধরে করে চলা এই কাজের ছেদ ঘটাল কোরোনা ভাইরাস । গত 3 মাসের বেশি সময় যাবৎ মেলেনি কাজের বরাত । উপার্জন হয়নি কোনও টাকা । জমানো টাকাও প্রায় শেষ । বিশেষ করে পুজোর আগের এই সময়টাতে কাজের ফুরসত অবধি মেলে না । ব্যস্ত থাকে কারিগরেরা । পুজোর প্যান্ডেলের কাঠামো, দুর্গার মূর্তির চালি তৈরি-সহ বাঁশ দিয়ে তৈরি অন্যান্য কাজগুলো করতে করতেই ভুলতে হয় নাওয়া-খাওয়া । ব্যবসার অধিকাংশ অর্থ এই সময়টায় উপার্জন করে ফেলতেন তাঁরা ।

কিন্তু বর্তমানে সম্পূর্ণ অন্য ছবি । কোরোনা সংক্রমণ কেড়ে নিয়েছে এদের রুজিরুটি । নষ্ট করেছে জীবন জীবিকা । এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুজোর জন্য বাঁশের কাঠামো তৈরির কোনও কাজের বরাত পায়নি তাঁরা । যেখানে এক সময় বাঁশের কাজের ব্যাপ্তিতে পা রাখার জায়গা থাকত না । খট খট শব্দে ঝালাপালা পড়তো কান । সেখানে এখন শুধু নিঃশব্দতা । সর্বত্র ফাঁকা । দিনদুপুরে কাজের সময়টিতে তাস খেলে বা অন্য বিনোদনে যোগ দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন কারিগরেরা ।

কেমন আছেন বাঁশ হস্তশিল্প কারিগররা?

রমেশ দত্ত স্ট্রিটের কারিগর শক্তি মোহন দাস বলেন, " লকডাউনের শুরু থেকেই কোনও কাজ নেই । খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছি । আমরা এবার আশায় বসে আছি, সরকার আমাদের জন্য কী ব্যবস্থা করবে ৷ পূর্বপুরুষ থেকে এই কাজ করে আসছি । অন্য কোনও কাজ করতে জানি না । তা সত্ত্বেও অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে পেট চালানোর জন্য মাটি কাটা ও ভ্যান চালানোর মতো কাজ করছি । " অন্য এক কারিগর জীবেশ দাস বলেন, " আমরা পুরোপুরি বসে রয়েছি । কোনও কাজ নেই । এই সময় কাজের চাপ থাকে । আর এখন ফাঁকা । আমাদের এখান থেকে সারা ভারতে কাজ যায় । এমনকি আমাদের 6 জন ছেলে রাশিয়াতে গিয়েও কাজ করে এসেছে । পরিস্থিতি খারাপ তবুও সরকারি সাহায্য পাচ্ছি না ৷ এর আগে কখনও আমরা সরকারের সাহায্য পাইনি ৷ এখনও পাইনি ৷ " আরও এক কারিগর অদৈত্য লেনের কাশীনাথ দত্ত ৷ তিনি বলেন, " পরিস্থিতি খুব খারাপ লকডাউনে । কাজের অবস্থাও খুব খারাপ ৷ না বাঁশ পাওয়া যাচ্ছে, না অর্ডার আসছে ৷ সাহস করে কেউ অর্ডার দিতে চাইছে না । আজ কাজ হচ্ছে , কাল হচ্ছে না ৷ আগে প্রতিদিন 200 টাকা আয় হত । এখন 50 টাকাও উপার্জন নেই । কোনও অর্ডার নেই ৷ ফলে খাব কী করে । অবস্থা খুবই খারাপ ৷ "

এবিষয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, " লকডাউন - কোরোনা ভাইরাসের কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনা পয়সায় রেশনের চাল-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন । আমরা নজর রাখছি । "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.