কলকাতা, 20 মার্চ: নিজাম প্যালেসে আজ অর্থাৎ সোমবার হাজিরা দিচ্ছেন না কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র । তাঁর দাবি, তাঁকে নাকি ডাকা হয়নি । বরং বেশ কিছু নথিপত্র চাওয়া হয়েছে আজ ৷ সেগুলি নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনেই তাঁর আইনজীবীরা সেই সকল নথিপত্র পৌঁছে দেবেন নিজাম প্যালেসে । গত সপ্তাহে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুকে বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নিজাম প্যালেসের সিবিআইয়ের আধিকারিকরা ।
সেই সময় তাঁর বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিরা লক্ষাধিক টাকা আদান প্রদান করেছে । এই টাকার উৎস এবং আদান-প্রদান সংক্রান্ত কোনও তথ্য পরিষ্কার করে এখনও সিবিআইয়ের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujoy Krishna Bhadra on WB Recruitment Scam)। ফলে সোমবার তাঁর ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাগজপত্র ও আয় ব্যয়ের হিসাব ছাড়াও তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে নিজাম প্যালেসে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় সিবিআই । গত পরশু শনিবার রাতে সিবিআই আধিকারিকরা বেহালার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে গিয়ে সেই নোটিশ দিয়ে আসেন বলে নিজাম প্যালেস সূত্রের খবর ।
কালীঘাটের কাকুর নাম প্রথম সোনা গিয়েছিল গোপাল দলপতির মুখে । এরপরই কালীঘাটের কাকু আদতে কোন ব্যক্তি তা খুঁজে বের করেন গোয়েন্দারা । আর এই কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল হুগলির সদ্য বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষের । গোপাল দলপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা প্রথম জানতে পারেন যে কুন্তল ঘোষ বারংবার গোপালকে শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের লভ্যাংশে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিত । তাঁকে বারবার কুন্তল ঘোষ বলত শিগগিরই কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে হবে ।
আরও পড়ুন : তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরও ‘কালীঘাটের কাকু’র উত্তরে সন্তুষ্ট নয় সিবিআই, খবর সূত্রের
ফলে সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের অনুমান, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় যে কোটি কোটি কালো টাকা আসত তা কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত । গোয়েন্দাদের অনুমান, এই টাকা সাদা করার জন্য নিজের স্ত্রী এবং মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কাজে লাগাতেন সুজয় । ফলে তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখতে চান সিবিআইয়ে গোয়েন্দারা ।
তদন্তকারীদের প্রশ্ন, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার টাকা গোপাল দলপতি মারফত কুন্তল ঘোষ এবং কুন্তল ঘোষের থেকে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে পৌঁছনোর পর সেই টাকা কোন কোন প্রভাবশালীদের ব্যাঙ্কে ঢুকেছে তা খুঁজে বের করতে হবে ৷ কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ রয়েছে, তা জানতে চান সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা । গত বুধবার সুজয়ের কাছ থেকে তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা আদান-প্রদান সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হলে তিনি একাধিক অসংগতিপূর্ণ উত্তর দিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর ।
মূলত সিবিআইয়ের অভিযোগ, শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর মত প্রভাবশালীদের হাতেই যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা জাল বিস্তৃত হয়েছে তেমনটা নয়, বরং জেলা এবং ব্লকস্তরেও একাধিক ছোটখাটো মিডিলম্যান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তি সরাসরিভাবে যুক্ত রয়েছেন এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় । এই সকল ব্যক্তিরা কেউ প্রভাবশালী না হলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে রীতিমত তাদের যোগাযোগ ছিল এবং তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে প্রভাব খাটিয়ে একাধিক অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছে ।
ইতিমধ্যেই তদন্ত নেমে প্রথমে প্রভাবশালীদের টার্গেট করা উচিত নাকি একেবারে গ্রাসরুট লেভেলে যারা অভিযুক্ত রয়েছে সেখান থেকে তদন্তের জাল গোটানো উচিত সেই বিষয়ে জানার জন্যই আগামী 10 মার্চ দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতরে একটি বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর ।
আরও পড়ুন : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে তলব সিবিআইয়ের