কলকাতা, 22 মে : ঘূর্ণিঝড় যশ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করল রাজ্য সরকার । আগামী 72 ঘণ্টায় এই ঘূর্ণিঝড় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে সমস্ত রাজ্যবাসীকে, বিশেষত যারা উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন, তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে । গতবছর আমফানের তাণ্ডবে রাজ্যে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার স্মৃতি এখনও টাটকা । তাই এবছর বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাগুলিকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে ।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, 22 তারিখ অর্থাৎ আজ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর আন্দামান সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে । তারপর এটি ধীরে ধীরে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাবে এবং 24 মে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ৷ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পরও এর অভিমুখ উত্তর-পশ্চিম দিকেই থাকবে এবং আরও শক্তি বৃদ্ধি করবে বঙ্গোপসাগরের উপরেই । এরপর 26 মে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলের দিকে পৌঁছে যাবে । ফলে 25 তারিখ থেকে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী সমস্ত জেলাতেই বৃষ্টিপাত শুরু হবে ৷ সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে । সমুদ্রে থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড়ের গতি থাকবে 40 থেকে 50 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা । কখনও কখনও এই গতিবেগ 60 কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে । 25 মে এই গতিবেগ আরও বৃদ্ধি পেয়ে 70 কিলোমিটারের উপরে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস । শুধু তাই নয়, উপকূলের দিকে এই ঘূর্ণিঝড় যত অগ্রসর হবে তত এই ঝড়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে ৷ অর্থাৎ 25 মের রাত থেকে এই ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করতে তৎপর হয়েছে নবান্ন । আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য । এগুলি হল :
- ঝড়ের গতিবেগ জানার জন্য টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রের দিকে নজর রাখুন ।
- কাঁচা বা দুর্বল বাড়িতে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের ঝড়ের অনেক আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে । মূল্যবান কাগজ এবং দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে যেতে হবে ।
- নদীতীরে বা বাঁধের পাশে বা উপরে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা কোনও নিকটবর্তী আশ্রয়স্থলে অবশ্যই চলে যাবেন ৷ কারণ ঝড় হলে জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
- নদী বাঁধের কোনও অংশ দুর্বল মনে হলে সেচ দফতর, স্থানীয় পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসনের নজরে আনুন ।
- কোনও মরা গাছ বা শুকনো ডাল থাকলে সেটাকে কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে।
- ফ্লাড-সেন্টারে পৌঁছানোর পর বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না । ঝড় সম্পূর্ণ থেমে গেলে তবেই বের হবেন । রাতের অন্ধকারে পথ চলতে অবশ্যই টর্চ বা হারিকেন সঙ্গে রাখতে হবে
- প্রসূতি বা বিকলাঙ্গ বা জরাগ্রস্তদের ঝড়ের অনেক আগেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলতে হবে ।
- রাস্তায় পড়ে থাকা কোনও ছেঁড়া তারে হাত দেওয়া যাবে না ।
- মাঠে পাকা বোরো ধান বা পরিণত শস্য থাকলে ঝড়ের আগেই তুলে নিতে হবে ৷
- সবজি ও অন্যান্য ফল যেগুলো ঝড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তা আগাম তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন ।
- সমস্ত যানবাহন ও খেয়া চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে ।
- ব্লক ও পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে 24×7 কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে ৷ কোনও সাহায্যের প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করুন ।