কলকাতা, 30 মার্চ: সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন নবান্ন থেকে বিজেপি এবং কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ লোকসভা নির্বাচনে কোনও জোট না-গড়ে তাঁর দল একাই লড়বে বলেও সেদিন জানান তৃণমূল নেত্রী ৷ কিন্তু রাহুল গান্ধির সাংসদ বাতিলের পর থেকে, কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর আগের অবস্থান কিছুটা হলেও নরম করেছেম মমতা ৷ কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি রাহুলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন ৷
বৃহস্পতিবারও রেড রোডে তাঁর ধরনা মঞ্চ থেকেও বিরোধীদের সার্বিক জোটের পক্ষেই সওয়াল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বৃহস্পতিবার রাহুলের নাম না-করলেও পদ বাতিল প্রসঙ্গে বিজেপির সমালোচনা করেছেন মমতা ৷ কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর সুর বদল এদিনও ধরা পড়েছে ৷ বৃহস্পতিবার রেড রোডে আম্বেদকার মূর্তির তলায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী যা বললেন তা কার্যত উলট পুরান বলা যায় ।
এদিন দু'দফায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রেখেছেন রেড রোডের ধরনা মঞ্চে । তাঁর এই দু'বারের বক্তৃতাতেই বাম এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ কড়া থাকলেও কংগ্রেসের আক্রমণের ক্ষেত্রে একটা শব্দও খরচ করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো । বরং দ্বিতীয় দফায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সবাইকে নিয়ে জোট গঠনের কথা উত্থাপন করেছেন মমতা । যেহেতু সব বিরোধী শক্তির কথা এখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সেক্ষেত্রে কংগ্রেসও এখন আর তাঁর কাছে অচ্ছুৎ নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
আর এখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি কেন্দ্রের বঞ্চনা, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অতিসক্রিয়তা আর রাহুল গান্ধির সদস্য পদ খারিজ আবার কংগ্রেস এবং তৃণমূলের কাছাকাছি আসার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করছে? সেদিক দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর এদিনের মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে সরাসরি কংগ্রেস প্রসঙ্গ না আসলেও ঘুরিয়ে কংগ্রেসের প্রতি সমর্থনের সুর পাওয়া গিয়েছে ।
বিরোধী সব দলকে জোট বাধার ডাক দিয়েছেন মমতা । এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, "যেহেতু বলছি, সব বিরোধীরা জোট বাঁধুন, তাই সকলে দুর্নীতিগ্রস্ত? সকলেই কালা আদমি ? সকলে কালো আর বিজেপি সাদা? সকলে দেশবিরোধী আর বিজেপি একা জাতীয়তাবাদী?" এদিন তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যে একবারও সরাসরি রাহুল গান্ধি এবং কংগ্রেসের নাম না এলেও ঘুরিয়ে তাদের প্রতি সমর্থনের বার্তা ছিল ৷
আরও পড়ুন: ধরনা মঞ্চ থেকে 'দিল্লি চলো'র ডাক মমতার, বিজেপিকে রুখতে সর্বস্তরে জোট বাঁধার আহ্বান
নাম না নিলেও, রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ প্রসঙ্গ এদিন এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ৷ তিনি বলেন, "কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি ক্রমশ সামন্ততান্ত্রিক জমিদার হয়ে উঠছে । কেউ বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে! তাঁকে সংসদ থেকে বার করে দিচ্ছে ।" খুব স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে অসুবিধা হয় না এই বক্তব্যে রাহুল গান্ধির কথাই বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । আর সেই জায়গা থেকেই রাজনৈতিক মহলে কংগ্রেস ও তৃণমূলের কাছাকাছি আসা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে ৷