কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর: মধ্যরাত পার অনেকক্ষণ । সাসপেন্স যেন কাটছে না । যেন চলছে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ । চুপ নবান্ন, কোনও সাড়া নেই রাজভবনেরও । আর এই নীরবতাকে সঙ্গী করে বাড়ছে জল্পনার পারদ । গত কয়েকদিন ধরেই রাজভবন বনাম সরকারের সংঘাতের উত্তাপ চড়ছিল । কিন্তু শনিবার সেই উত্তাপ অন্য মাত্রা পায় । কারণ উপাচার্যদের নিয়ে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নিজেই জানিয়েছিলেন, মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ৷ তার পাল্টা দিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু । সেই মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে কয়েক ঘণ্টা আগেই ৷ রাজভবনের তরফে মুখবন্ধ খামে একটি চিঠি নবান্ন ও একটি চিঠি দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেলেও, চিঠির বয়ান নিয়ে এখনও সকলেই অন্ধকারে ৷
রাজ্যপালকে কটাক্ষ করেই ব্রাত্য বসু সামাজিক মাধ্যমে শনিবার এক বার্তায় লেখেন, "সাবধান! সাবধান! সাবধান! শহরে নতুন রক্তচোষা (ভ্যাম্পায়ার) এসেছে । নাগরিকেরা দয়া করে সতর্ক থাকুন । ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী, ‘রাক্ষস প্রহরের’ জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি ।" গতকাল এসবের মাঝেই রাজভবন সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল, কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন রাজ্যপাল । কিন্তু কী সেই কড়া পদক্ষেপ, তা নিয়ে মুখ খুলছিলেন না কেউ । এসবের মধ্যেই আবার গতকাল বিকেলে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বীবেদিকে রাজভবনে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল । এক ঘন্টার বেশি তাঁদের মধ্যে বৈঠক হয় । তারপরেও নীরবতা । রাত তখন বারোটা ছুঁইছুঁই । রাজভবন থেকে আচমকাই বার্তা আসে । তাতে লেখা, "পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপাল দু’টি গোপনীয় চিঠিতে সই করে আজ রাতে মুখবন্ধ করে একটি নবান্নে ও একটি দিল্লিতে পাঠিয়েছেন ।"
ব্যাস ওটুকুই । তারপর থেকে আবার সব চুপ । রাজভবন, নবান্ন কেউ কিছু বলছে না । প্রশ্ন উঠছে, কী নিয়ে মুখবন্ধ খামে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল । রাজভবনের বার্তা থেকে স্পষ্ট সেখান থেকে মুখবন্ধ খামে একটি চিঠি গিয়েছে নবান্নে অন্যটি গিয়েছে দিল্লিতে । কিন্তু চিঠির বিষয়বস্তু কি? কোনও সূত্র থেকেই তা স্পষ্ট হচ্ছে না । আর সেখান থেকেই বাড়ছে জল্পনা । এসবের মাঝেই আজ তৃণমূল মুখপাত্র তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে কড়া আক্রমণ করেছেন । তিনি বলেন, "এসব মধ্যরাতের ব্যাপার ! নিশাচরীয় কাজকর্ম । আমরা আশা করব রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে কাজ করবেন । তাঁর ক্ষমতার কোনও অপব্যবহার তিনি করবেন না । একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, রাত জাগছেন কেন ! কারা রাত জাগেন ! কবিগুরু তো লিখে গেছেন 'জাগরণে যায় বিভাবরী, আঁখি হতে ঘুম নিলো হরি ।' আসলে ব্রাত্য বসু ওনার ঘুম কেড়ে নিয়েছেন । তাই উনি জেগে বসে আছেন । চিঠি লিখেছেন । গভীর প্রেম বা গভীর হিংসা না থাকলে তো নিজেকে কেউ চিঠি লেখে না । খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে উনি কি লিখেছেন ! সেটা উনিই বলতে পারবেন, আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি উনি বিজেপির এজেন্ট হয়ে চিঠি লিখছেন । কিছু একটা করতে চাইছেন । কিছু জল্পনা আছে তবে আমি সে নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না । কিন্তু কোন ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা ঠিক হচ্ছে না ।"
আরও পড়ুন: 'মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, দেখুন কী করতে চলেছি'; ব্রাত্যকে পালটা হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের
এর পালটা জবাব দিয়েছে বিজেপিও । বিজেপি নেতা তথা সংসদ দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, রাজ্যপাল তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন । যারা ভয় পেয়ে যাচ্ছেন তারা গালাগালি দিচ্ছেন । সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে । উনি সাংবিধানিক প্রধান-যা করছেন তা সংবিধান মেনে করছেন কি না এটাই শুধু বিচার্য বিষয় বাকি কিছু না । এদিকে এই জল্পনার আবহে মুখ খুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও । তিনি বলছেন, "আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলায় এরকম একজন রাজ্যপাল এসেছেন । তাও আবার তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের টাইটেল নাকি গ্রহণ করেছেন । যার জন্য তাঁর টাইটেল নাকি বোস হয়েছে । জানিনা এই বোস বাংলাকে আর কত বসাবে । শুধু এটুকুই বলব রাজ্যপালের পদে থেকে এ ধরনের জোকারগিরি না করলেই ভালো হয় ।"
আরও পড়ুন: খলজি ভেবেছিলাম, তুঘলক হবে বুঝিনি; রাজ্যপালকে কটাক্ষ শিক্ষামন্ত্রীর
কংগ্রেসের পাশাপাশি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও । তবে তিনি রাজ্যপালের পাশাপাশি একই সঙ্গে আক্রমণ করেছেন রাজ্য সরকারকেও । তাঁর কথায়, রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে যা চলছে তা একটা নিকৃষ্টমানের ঝগড়া । এটা খুব খারাপ হচ্ছে । এক একজন এক এক রকম বলছেন । মুখ্যমন্ত্রী আচার্য হতে চান । রাজ্যপাল আচার্য হয়ে উপাচার্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে চান । কার্যত যেন তৃণমূল বিজেপির ঝগড়া ঝগড়া ভাব । কোথায় চলে গেলেন একজন, বলছেন মাঝরাতে পদক্ষেপ নেবেন । অন্যজন বলছেন, মাঝরাতে একজন রাক্ষসী বেরোবে । শিক্ষামন্ত্রী এবং রাজ্যপাল মিলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বারোটা বাজিয়ে দিতে চলেছে । এটা চলতে পারেনা ।