কসবা, 20 সেপ্টেম্বর: বৈকুণ্ঠ ঘোষ রোডে ফ্ল্যাটের পাশে ময়লা ফেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার বাসিন্দাদের তাক করে গুলি চালানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই পুলিশের জালে এক যুবক । ঘটনায় প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করা হয়েছে সৌমিত মণ্ডলকে। কিন্তু তদন্তে নেমে এই সৌমিতের বিরুদ্ধে একাধিক সময় একাধিক অভিযোগের কথা জানতে পারলেন তদন্তকারীরা । এলাকার বাসিন্দাদের নাকি অতিষ্ঠ করে তুলতেন সৌমিত। অভিযোগ বিভিন্ন সময় ধমকানো চমকানো থেকে শুরু করে মারধরের ইতিহাস রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশকর্মীরা সৌমিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছেন তাঁর বাবা প্রাক্তন পুলিশকর্মী আর সেখান থেকেই নাকি তিনি একটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন । যদিও সেটি লাইসেন্স প্রাপ্ত। তবে সৌমিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তুষ্ট নন তদন্তকারীরা ৷ কারণ তাঁর কথাবার্তায় রয়েছে পূর্ণ অসঙ্গতির ছাপ । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "ওই যুবকের কাছে কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছল সেটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে । আদৌ সেটি তাঁর বাবার আগ্নেয়াস্ত্র কি না, সেটাও দেখছি আমরা । আর যদি তাঁর বাবারও আগ্নেয়াস্ত্র হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে যে বাবার আগ্নেয়াস্ত্র কীভাবে ব্যবহার করল ছেলে ?"
তদন্তে নেমে কসবা থানার মহিলা পুলিশকর্মীরা ইতিমধ্যেই সৌমিতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন । যদিও প্রাথমিকভাবে তাঁর স্ত্রী এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ । বছরখানেক আগে সৌমিত একটি বাইক কেনে বলে এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছে । কিন্তু সৌমিত আদৌ কী কাজ করত সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে । তাদের অভিযোগ, নিজের গাড়িতে প্রেস এবং পুলিশের স্টিকার সেঁটে ঘুরে বেড়াত সে । এলাকার বন্ধুদের কাছে দাবি করেছিল সে নাকি রাজ্য পুলিশে চাকরি পেয়েছে । আর সাংবাদিকতা নাকি তার ভালো লাগে । তার জন্যই গাড়িতে প্রেস এবং পুলিশ লেখা দুটো স্টিকার লাগিয়ে ঘুরত ।
যদিও তদন্তকারীরা দাবি করছেন, ওই যুবকের কথাবার্তায় পূর্ণ অসঙ্গতি রয়েছে । ইতিমধ্যেই তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা । এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছে যে, এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল সৌমিত। নিজেকে রাজ্য পুলিশের পুলিশকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোককে ধমকানো চমকানো থেকে শুরু করে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নোংরা-আবর্জনা ফেলা তাঁর কাজ ছিল ।
যদিও এই বিষয়ে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "আমরা সব জায়গা থেকেই অভিযোগ পাচ্ছি । অভিযোগের সত্যতা এখনও যাচাই করা হয়নি । আমরা সমস্ত কিছু পরীক্ষা করব । এলাকার বাসিন্দারা ভয়ে এতদিন পুলিশকে কিছু না-জানাতে পেরে এই ঘটনার পর পুলিশকে সামনে পেয়ে অভিযোগ করেন যে, নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোককে সে বিভিন্ন কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিত । এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলে নোংরা করত বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এলাকার বাসিন্দারা । আর প্রতিবাদ করলেই কথায় কথায় পুলিশে যাবার হুমকি দিত সে নিজেই ।"
আরও পড়ুন : আবর্জনা ফেলাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের ঝামেলা, কসবায় চলল গুলি