কলকাতা, 16 মার্চ: 'প্রভাবশালী' যদি কেউ হন, তাহলে তিনি কুন্তল ঘোষ ! "আমি নই" ! শোনা যাচ্ছে, নিজের এবং কুন্তলের সম্পর্কে নাকি এমনই মন্তব্য করেছেন বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় (Santanu Banerjee on Kuntal Ghosh) ! শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষ, নিয়োগ দুর্নীতিতে (WB Recruitment Scam) জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের দু'জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ অন্যদিকে, দলও তাঁদের বহিষ্কার করেছে ৷ কিন্তু, ফারাক রয়েছে দু'জনের গ্রেফতারি ও বহিষ্কারের মাঝের সময়সীমায় ৷ আর সময়ের সেই ফারাককেই কুন্তলের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করছেন শান্তনু !
ইডি (ED) সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তনু তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তিনি আর যাই হোন, 'প্রভাবশালী নন' ! কারণ, তিনি যদি প্রভাবশালী হতেন, তাহলে গ্রেফতার হওয়ার (10 মার্চ, 2023) মাত্র 4-5 দিনের মাথায় দল তাঁকে বহিষ্কার (14 মার্চ, 2023) করত না ৷ অন্যদিকে, কুন্তলকে দল থেকে বহিষ্কার (14 মার্চ, 2023) করা হয় গ্রেফতারির (21 জানুয়ারি, 2023) 50 দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর ! শান্তনুর যুক্তি, কুন্তল 'প্রভাবশালী' বলেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করতে এতটা সময় নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ আর তিনি 'প্রভাবশালী নন' বলেই তাঁকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে !
শান্তনুর এই যুক্তির কতটা সারবত্তা আছে, তা তদন্ত সাপেক্ষ ৷ কিন্তু, ঘটনা হল মাত্র গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি তৈরি করেছেন শান্তনু ৷ দিনের পর দিন নিজের অফিসে যাননি, তারপরও মাসে মাসে মোটা বেতন তাঁর ব্যাংক অ্য়াকাউন্টে ঢুকেছে ! সূত্রের দাবি, বিদ্যুৎ দফতরের কার্যালয়ে শান্তনুর রোজের গরহাজিরা সরকার বা প্রশাসনের অজানা ছিল না ৷ তারপরও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি ! এমনকী, তিনি একইসঙ্গে সরকারি অফিসে 'কাজ' করেছেন, আবার জেলা পরিষদের কর্মধ্যক্ষের দায়িত্বও সামলেছেন ৷ প্রশ্ন উঠছে, 'প্রভাবশালী' না হলে এতকিছু একসঙ্গে করা কি সম্ভব ?
ইডি সূত্রে ইতিমধ্য়ে জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে একসঙ্গে 'কাজ' করতেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল ৷ কিন্তু, গ্রেফতার হওয়ার পর তিনজনই একে-অপরের দিকে কাদা ছুড়তে ব্যস্ত ! প্রত্যেকেই দায় ঠেলছেন অন্যের ঘাড়ে ! তাহলে কি আপাতত 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' নীতিতেই বিশ্বাস রাখছেন এই তিন অভিযুক্ত ? আর সেই কারণেই কুন্তলকে 'প্রভাবশালী' তকমা দিয়ে নিজে কিছুটা হলেও 'নিরাপদে' থাকার চেষ্টা করছেন শান্তনু ?
আরও পড়ুন: বুটিকের টাকা জমিয়ে প্রোমোটিং শুরু করেছিলেন শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা !
এদিকে, বুধবার শান্তনুর স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা ৷ সূত্রের দাবি, কুন্তলের বিসালবহুল আবাসনে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও বেঠক হত কিনা, হলে সেই বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত থাকতেন, টাকা লেনদেন কার কার সঙ্গে এবং কীভাবে হত, এসবই জানতে চাওয়া হয়েছে জয়শ্রীর কাছে ৷ অন্যদিকে, শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকেও তদন্তকারী সংস্থার তরফে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে ৷ কিন্তু, এখনও পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হননি ৷