কলকাতা, 26 জানুয়ারি: বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের (governor jagdeep dhankhar in assembly) মধ্যে বেনজির সংঘাত । রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক মঞ্চকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ তুললেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee on Jagdeep Dhankhar)। এখানেই শেষ নয়, তিনি দাবি করেছেন, "পরের বার রাজ্যপাল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিধানসভায় আসতে চাইলে, তাঁর কাছে জানতে চাইব কেন তিনি আসতে চাইছেন ।"
সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের শেষে বিধানসভায় গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee vs Jagdeep Dhankhar)। সে সময় তিনি বলেন, "অতীতে অনেক রাজ্যপাল বাংলায় এসেছেন । বিধানসভায় এসে তাঁরা পুষ্প প্রদর্শনী, বনমহোৎসব উদ্বোধন করেছেন ৷ এমনকী প্রেস কর্নারে গিয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কথাও বলেছেন । তবে কোনও রাজ্যপাল বিধানসভায় এসে এ ধরনের আচরণ করেননি । রাজ্যপাল নিজেই আসতে চেয়েছিলেন বিধানসভায় । তাঁকে মর্যাদা দিয়ে আমরা এনেছি । আমরা বুঝতে পারিনি, তিনি এই প্ল্যাটফর্মকে একটা রাজনৈতিক বক্তব্য রাখার জন্য ব্যবহার করবেন ।"
মঙ্গলবার অর্থাৎ 25 জানুয়ারি বিধানসভায় বিআর আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করতে এসে নজিরবিহীন ভাবে অধ্যক্ষকে আক্রমণ করেন রাজ্যপাল । ধনকড়ের আচরণ অসৌজন্যমূলক ছিল বলে দাবি করেন স্পিকার । জগদীপ ধনকড় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা অন্তত রাজ্যপাল হিসেবে তাঁকে মানায় না বলেই মন্তব্য করেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ।
আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankhar slams state govt: বিধানসভার অনুষ্ঠানে সরকারকে তোপ রাজ্যপালের, পাল্টা বিমানের
স্পিকারের আরও বক্তব্য, রাজ্যপালের কিছু বলার থাকতেই পারে । কিন্তু সে রকম হলে তিনি রাজভবনে ডেকে তাঁকে তা বলতেই পারতেন । 25 জানুয়ারি স্পিকারের পাশে দাঁড়িয়েই রাজ্যপাল মন্তব্য করেছিলেন যে, বিধানসভা কর্তৃপক্ষ সংবিধানকে মান্যতা দিচ্ছে না । তার প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে বিধানসভা । অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পরবর্তীকালে যদি রাজ্যপালের তরফ থেকে এমন কোনও ইচ্ছা প্রকাশ করা হয় যে তিনি বিধানসভায় আসতে চান, তা ভেবে দেখা হবে ।
তিনি আরও বলেন, "আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে সিডি চেয়ে পাঠিয়েছি । সেটা পরীক্ষা করে আমরা দেখব । গতকাল আমি পেছনে ছিলাম বলে রাজ্যপালের সম্পূর্ণ বক্তব্য শুনতে পাইনি । ওই সিডি দেখার পর কী করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব ।"
গতকাল বিল নিয়ে রাজ্যপাল যে দাবি করেছিলেন, তাকেও নস্যাৎ করে দিয়েছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "আমি একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই । বিল যখন পাঠানো হয় সেই বিল বিধানসভা থেকেই যায় । সেই বিলের ভাগ্য কী হল তা বিধানসভাকে জানাতে হয় ৷ আমি অতীতে যে বিলগুলোর কথা উল্লেখ করেছি, তার ভাগ্য কী হয়েছে তা আমরা এখনও পর্যন্ত জানি না । তিনি সেই বিলে সম্মতি দিয়েছেন নাকি রাস্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন, নাকি সেই বিল প্রত্যাখ্যান করেছেন, এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই । তিনি যে সব কথা বলে গেলেন কোনও কথাই সত্য নয় । আমরা চিন্তাভাবনা করে দেখব । তাঁর কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে । কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে বিধানসভায় আসতেই হবে । সে ক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই । কিন্তু তিনি যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিধানসভায় আসতে চান, সে ক্ষেত্রে আমরা জানতে চাইব কী কারণে তিনি আসতে চাইছেন । এ ক্ষেত্রে এখানে তাঁর ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়েও আমাদের জানতে হবে (reason to be asked if governor jagdeep dhankhar wants to come to assembly voluntarily)।"
প্রসঙ্গত, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত কোনও নতুন বিষয় নয় ৷ এই দৃষ্টান্ত অতীতেও বহু রয়েছে । যেমন গোপালকৃষ্ণ গান্ধি, যিনি 2004 সাল থেকে 2009 সাল পর্যন্ত বাংলার রাজ্যপাল ছিলেন । একাধিক ইস্যুতে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বাদানুবাদ হয় । কিংবা তারও আগে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অজয় মুখোপাধ্যায়ের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে হইচই ফেলে দেন রাজ্যপাল ধরমবীর । কিন্তু রাজ্যপাল বনাম স্পিকারের এই সংঘাত নজিরবিহীন । বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিধানসভা কর্তৃপক্ষ কিংবা স্পিকারকে আক্রমণ, এই নজির পূর্বে বাংলায় দেখা যায়নি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা । আর অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় একে কোনওভাবেই হালকা ভাবে দেখছেন না ।