ETV Bharat / state

অবৈজ্ঞানিকভাবে লকডাউন ? চন্দ্রিমা বলছেন "দলনেত্রীই বিশেষজ্ঞ" - কোরোনা ভাইরাসের মোকাবিলা

রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কারা আছেন ? প্রশ্নটা করতেই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ কমিটিতে কারা আছেন জানা নেই । আপনি দপ্তরে বিষয়টির খোঁজ নেবেন । সবই মন্ত্রী জানবে এমন কোনও কথা নেই । আমাদের বিশেষজ্ঞ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।"

Unscientific Lockdown
লকডাউনের কলকাতা
author img

By

Published : Sep 11, 2020, 3:59 PM IST

কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর : গোটা দেশে চলছে আনলক পর্ব । কোরোনা আবহে বন্ধ রুটি-রুজির যোগানের সংকট কাটাতে এ ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা । তাঁদের অনেকেই বলছেন, 54 দিনের লকডাউন এ যখন ফল আসেনি, তখন লকডাউন সমাধান নয় । প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ প্রয়োগ । ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে নিউ নর্মালে । আর তখন এ রাজ্যে মাঝেমধ্যেই চলছে লকডাউন । প্রশাসনের দাবি, বিশেষজ্ঞ দলের মতামতেই চলছে লকডাউন । এতে নাকি কমবে সংক্রমণ ।

রাজ্য সরকারের শেষ বুলেটিনে রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা 1 লাখ 93 হাজার 175 জন। গত 24 ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 3112 জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সুস্থতার সংখ্যা 1 লাখ 66 হাজার 27 জন । গত 24 ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন 3035 জন । অর্থাৎ মাঝে কিছুদিন কম থাকলেও, সুস্থতার থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও বেশি । রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে 3771 জনের । পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয় । হয়ত বা সেই কারণেই রাজ্য প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও সপ্তাহে একদিন, কোনও সপ্তাহে আবার দু'দিন লকডাউনের ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার । কিন্তু সপ্তাহে কোনও দিন লকডাউন নেই এমন ঘোষণাও হয়েছে । বিষয়টিকে অপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজ্যের বেশ কিছু চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যরা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা । তবে প্রশাসনের দাবি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশেই হচ্ছে এই লকডাউনের প্রক্রিয়া । যদিও বিশেষজ্ঞ কমিটির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যের অন্যতম বিরোধী নেতা সুজন চক্রবর্তী । তাঁর প্রশ্ন, আদৌ কি কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে ? আবার এই বিশেষজ্ঞ কমিটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা বাম নেতা ডাক্তার ফুয়াদ হালিম । যে বিশেষজ্ঞ কমিটির কথা রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, সেখানে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা চিকিৎসক নেই বলে দাবি তাঁর । বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা পর্যন্ত দায়ের করেছেন তিনি । ফুয়াদ হালিমের মতো একই দাবি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার সজল বিশ্বাসেরও । তাঁর সংগঠন সার্ভিস ডক্টর ফোরামের তরফেও বিশেষজ্ঞ কমিটির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ।

এখনও পর্যন্ত রাজ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোন কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছে ?

লকডাউনের শুরুতেই রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দু'টি টাস্কফোর্স গঠন করে । সেইসঙ্গে নবান্নে কন্ট্রোল রুম এবং হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয় । তখন মার্চ মাস । 27 মার্চ 12 সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর । বলা হয়, এই কমিটি রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতির উপর নজরদারি করবে । সেই কমিটিতে ছিলেন দু'জন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তা, পাঁচজন সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, পাঁচজন বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ । বলা হয় এই কমিটি হবে সর্বশক্তিমান । তাঁরা কোরোনা মোকাবিলায় কী করা উচিত, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবার সবকিছু দেখে রাজ্যকে পরামর্শ দেবে । এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটিতে কারা কারা আছেন...

1. ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
2. ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরি, হেপাটলজি
3. ডাঃ আশুতোষ ঘোষ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার
4. ডাঃ মামেন কেনেডি, ডিরেক্টর, টাটা মেডিক্যাল সেন্টার
5. ডাঃ সুবীর দত্ত, প্যাথলজি
6. ডাঃ বিভূতি সাহা, মেডিসিন
7. ডাঃ ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়, চেস্ট মেডিসিন
8. ডাঃ বিভু কল্যাণী দাস, আনাস্থেসিয়া
9. ডাঃ সৌমিত্র ঘোষ, মেডিসিন
10. ডাঃ প্লাবন মুখোপাধ্যায়, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি
11. ডাঃ দেবাশীষ ভট্টাচার্য, ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন, কনভেনার
12. ডাঃ অজয় চক্রবর্তী, ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেস

আরও পড়ুন : রেকর্ড সংক্রমণ ! 45 লাখ ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা

এই কমিটি নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ ফুয়াদ হালিমের । প্রসঙ্গত তিনি প্যানডেমিকের সময়েও জনসেবা করে চলেছেন । এর মধ্যে তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন কোরোনায় । একটা সময় তাঁর জীবন সংশয় পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু এই বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ আমি একটা পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (জনস্বার্থ মামলা) ফাইল করেছি কলকাতা হাইকোর্টে । সেখানে আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে সর্বপ্রথম, একজন ভাইরোলজিস্ট এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে নেই । একজন এপিডেমিওলজিস্ট এই কমিটিতে নেই । একজন পাবলিক হেলথ সাইন্সের লোক এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে নেই । ফলে প্যানডেমিক নিয়ে সারা জীবন বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত থাকা লোক কেউই এক্সপার্ট কমিটিতে নেই। ফলে যাঁরা আছেন তাঁরা না ভাইরাস নিয়ে কাজ করেছেন, না প্যানডেমিক নিয়ে কাজ করেছেন । ফলে তাঁদের পরামর্শ কতখানি কার্যকর হবে এই বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে । আর সেই কারণেই মামলা দায়ের করেছি ।"

এ প্রসঙ্গে সার্ভিস ডক্টর ফোরাম-এর সম্পাদক তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সজল বিশ্বাস বলেন, “ আমরা প্রথমেই সুনির্দিষ্টভাবে দাবি জানিয়েছিলাম, এই কমিটিতে প্যানডেমিক বিশেষজ্ঞদের রাখতে হবে । কমিটিতে রাখতে হবে ভাইরোলজিস্ট, প্য়ানডেমিক বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ । পাশাপাশি আমাদের মত যে সংগঠনগুলি বিভিন্ন প্যানডেমিক নিয়ে কাজ করেছে সামাজিক দিক থেকে তাদের পরামর্শ নেওয়া হোক । কিন্তু সেই পরামর্শে রাজ্য সরকার কর্ণপাত করেনি । তারা তাদের মত মনগড়া কমিটি তৈরি করেছে । ফলে সেই কমিটি কী সুপারিশ করেছে সেটা দিয়ে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি হয় না । আমাদের মেডিকেল সাইন্সের জন্য বিশেষ বিশেষ বিভাগ রয়েছে। কোনও একটি বিভাগের সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞ অন্য বিভাগে গিয়ে সেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন না । সুতরাং যাঁরা শুধুমাত্র আমার কথায় ওঠাবসা করবেন তাঁদের নিয়ে আমি একটা কমিটি বানিয়ে রেখে দিলাম তার কোনও মূল্য নেই ।"

আরও পড়ুন : কোরোনায় আরও 2 চিকিৎসকের মৃত্যু কলকাতায়

রাজ‍্যে আদৌ কোন বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, “ কোন কমিটির কথা আমরা ধরব । ডাক্তার মুখোপাধ্যায়ের কমিটি, ডাক্তার গঙ্গোপাধ্যায়ের কমিটি, নাকি নোবেলজয়ী অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল কমিটি ? আদতে রাজ্যের কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটি নেই । মুখ্যমন্ত্রী যা ভাববেন সেটাই শেষ কথা ।"

আদতে 2 এপ্রিল রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ডাঃ ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, “রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা 53। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের।” রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে সেই দাবি করেন তিনি । একইসঙ্গে জানান সেই সময় শেষ 24 ঘণ্টায় রাজ্য নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 16 জন । তার ঘণ্টা দুয়েক পর সন্ধে ছ'টা নাগাদ রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান আক্রান্তের সংখ্যা 34, আর মৃতের সংখ্যা 3। তারপরেই নবান্ন সভাঘরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা 38 ।" অভিযোগ, তারপর থেকেই বিশেষজ্ঞ কমিটির তেমন কোনও ভূমিকা আর দেখা যায়নি এবং তারপরেই রাজ্য সরকারের তরফে তৈরি করা হয় মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি। সেই কমিটি তৈরি হয় পাঁচ সদস্যের।

সেই কমিটিতে ছিলেন কারা?

1. ডাঃ বিশ্বরঞ্জন সৎপতি, প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা
2. ডাঃ দেবাশীষ ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা
3. ডাঃ প্লাবন মুখোপাধ্যায়, কার্ডিওথোরাসিক এন্ড ভাসকুলার সায়েন্স
4. ডাঃ আশুতোষ ঘোষ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন
5. ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল, মেডিসিন

আরও পড়ুন : অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা যায়নি, মৃত্যু কোরোনা রোগীর

কমিটি তৈরির পরই এই বিরোধীরা সমালোচনা শুরু করেন । রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকড় প্রশ্ন তোলেন, “ রাজ্যে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশের জন্য অডিট কমিটির রিপোর্টের উপর নির্ভরতা কেন ?"

সেই কমিটি গঠনের 29 দিনের মাথায় কার্যত ডিগবাজি খায় রাজ্য । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বলেন, “ ডেথ অডিট কমিটি আমি বানাইনি । ওই কমিটি তৈরি করেছেন স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার । তারই এই কমিটি করার অধিকার রয়েছে ।" রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা জানান তখন থেকে শুধুমাত্র শিক্ষামূলক এবং গবেষণার কাজে যুক্ত এই কমিটি। পাশাপাশি নবান্নের তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয় ICMR এর নির্দেশ মেনে ঘোষণা করা হবে মৃত্যুর সংখ্যা।

আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের অন্যতম বিরোধী নেতা সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, “ কোন বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে রাজ্যে লকডাউন হচ্ছে না । হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছামতো । তিনি যা চাইছেন তাই করছেন । কিন্তু আদতে রাজ্যবাসীর কোন লাভ হচ্ছে না ।"

বিষয়টি বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকদের একাংশও । এ প্রসঙ্গে ফুয়াদ হালিম বলেন, “ আমাদের দেশ এবং রাজ্যের সরকার প্যানডেমিক পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্রটা কি তা তুলে ধরছে না । ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মত কোন মুহূর্তে কি করা উচিত তা বোঝা যাচ্ছে না । সেটাই চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক।"

সজল বিশ্বাস বলেন, “ যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লকডাউন করা হত তবে বিষয়টা অন্যরকম হত । লকডাউন করা উচিত ভাইরাসের সংক্রমনের চেইনটা ভাঙার জন্য । আমরা জানি এই ভাইরাসের সংক্রমনের স্থায়িত্ব 14 দিন । অর্থাৎ সঠিকভাবে বিচার করে একটানা 14 দিনের লকডাউন করা বিজ্ঞান সম্মত হবে । তাতে সংক্রমণ চেইন ভাঙতে পারে । কিন্তু সেটা না করে 'ইয়েস ম্যান' কয়েকজনকে নিয়ে কমিটি তৈরি করে যদি নিজের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়ে নেওয়া হয় সেটাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। শুধু শুধু মানুষের হয়রানি হয় । মনে রাখতে হবে লকডাউনের আগের এবং পরের দিন অধিক সংখ্যক লোক পথে বেরোন । যেটাতে ক্ষতির সম্ভাবনাই প্রকট হয় । যদি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে সব করা হত, তবে ওইভাবে উৎসব,পরব কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনক্ষণ দেখে লকডাউনের দিন পরিবর্তন হতে পারত না । লকডাউনের এই পুরো বিষয়টি অবৈজ্ঞানিকভাবে চলছে।"

রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কারা আছেন ? প্রশ্নটা করতেই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ কমিটিতে কারা আছেন জানা নেই । আপনি দপ্তরে বিষয়টির খোঁজ নেবেন । সবই মন্ত্রী জানবে এমনটা কথা নেই । আমাদের বিশেষজ্ঞ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।"

কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর : গোটা দেশে চলছে আনলক পর্ব । কোরোনা আবহে বন্ধ রুটি-রুজির যোগানের সংকট কাটাতে এ ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা । তাঁদের অনেকেই বলছেন, 54 দিনের লকডাউন এ যখন ফল আসেনি, তখন লকডাউন সমাধান নয় । প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ প্রয়োগ । ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে নিউ নর্মালে । আর তখন এ রাজ্যে মাঝেমধ্যেই চলছে লকডাউন । প্রশাসনের দাবি, বিশেষজ্ঞ দলের মতামতেই চলছে লকডাউন । এতে নাকি কমবে সংক্রমণ ।

রাজ্য সরকারের শেষ বুলেটিনে রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা 1 লাখ 93 হাজার 175 জন। গত 24 ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 3112 জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সুস্থতার সংখ্যা 1 লাখ 66 হাজার 27 জন । গত 24 ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন 3035 জন । অর্থাৎ মাঝে কিছুদিন কম থাকলেও, সুস্থতার থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও বেশি । রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে 3771 জনের । পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয় । হয়ত বা সেই কারণেই রাজ্য প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও সপ্তাহে একদিন, কোনও সপ্তাহে আবার দু'দিন লকডাউনের ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার । কিন্তু সপ্তাহে কোনও দিন লকডাউন নেই এমন ঘোষণাও হয়েছে । বিষয়টিকে অপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজ্যের বেশ কিছু চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যরা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা । তবে প্রশাসনের দাবি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশেই হচ্ছে এই লকডাউনের প্রক্রিয়া । যদিও বিশেষজ্ঞ কমিটির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যের অন্যতম বিরোধী নেতা সুজন চক্রবর্তী । তাঁর প্রশ্ন, আদৌ কি কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে ? আবার এই বিশেষজ্ঞ কমিটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা বাম নেতা ডাক্তার ফুয়াদ হালিম । যে বিশেষজ্ঞ কমিটির কথা রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, সেখানে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা চিকিৎসক নেই বলে দাবি তাঁর । বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা পর্যন্ত দায়ের করেছেন তিনি । ফুয়াদ হালিমের মতো একই দাবি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার সজল বিশ্বাসেরও । তাঁর সংগঠন সার্ভিস ডক্টর ফোরামের তরফেও বিশেষজ্ঞ কমিটির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ।

এখনও পর্যন্ত রাজ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোন কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছে ?

লকডাউনের শুরুতেই রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দু'টি টাস্কফোর্স গঠন করে । সেইসঙ্গে নবান্নে কন্ট্রোল রুম এবং হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয় । তখন মার্চ মাস । 27 মার্চ 12 সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর । বলা হয়, এই কমিটি রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতির উপর নজরদারি করবে । সেই কমিটিতে ছিলেন দু'জন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তা, পাঁচজন সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, পাঁচজন বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ । বলা হয় এই কমিটি হবে সর্বশক্তিমান । তাঁরা কোরোনা মোকাবিলায় কী করা উচিত, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবার সবকিছু দেখে রাজ্যকে পরামর্শ দেবে । এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটিতে কারা কারা আছেন...

1. ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
2. ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরি, হেপাটলজি
3. ডাঃ আশুতোষ ঘোষ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার
4. ডাঃ মামেন কেনেডি, ডিরেক্টর, টাটা মেডিক্যাল সেন্টার
5. ডাঃ সুবীর দত্ত, প্যাথলজি
6. ডাঃ বিভূতি সাহা, মেডিসিন
7. ডাঃ ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়, চেস্ট মেডিসিন
8. ডাঃ বিভু কল্যাণী দাস, আনাস্থেসিয়া
9. ডাঃ সৌমিত্র ঘোষ, মেডিসিন
10. ডাঃ প্লাবন মুখোপাধ্যায়, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি
11. ডাঃ দেবাশীষ ভট্টাচার্য, ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন, কনভেনার
12. ডাঃ অজয় চক্রবর্তী, ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেস

আরও পড়ুন : রেকর্ড সংক্রমণ ! 45 লাখ ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা

এই কমিটি নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ ফুয়াদ হালিমের । প্রসঙ্গত তিনি প্যানডেমিকের সময়েও জনসেবা করে চলেছেন । এর মধ্যে তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন কোরোনায় । একটা সময় তাঁর জীবন সংশয় পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু এই বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ আমি একটা পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (জনস্বার্থ মামলা) ফাইল করেছি কলকাতা হাইকোর্টে । সেখানে আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে সর্বপ্রথম, একজন ভাইরোলজিস্ট এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে নেই । একজন এপিডেমিওলজিস্ট এই কমিটিতে নেই । একজন পাবলিক হেলথ সাইন্সের লোক এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে নেই । ফলে প্যানডেমিক নিয়ে সারা জীবন বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত থাকা লোক কেউই এক্সপার্ট কমিটিতে নেই। ফলে যাঁরা আছেন তাঁরা না ভাইরাস নিয়ে কাজ করেছেন, না প্যানডেমিক নিয়ে কাজ করেছেন । ফলে তাঁদের পরামর্শ কতখানি কার্যকর হবে এই বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে । আর সেই কারণেই মামলা দায়ের করেছি ।"

এ প্রসঙ্গে সার্ভিস ডক্টর ফোরাম-এর সম্পাদক তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সজল বিশ্বাস বলেন, “ আমরা প্রথমেই সুনির্দিষ্টভাবে দাবি জানিয়েছিলাম, এই কমিটিতে প্যানডেমিক বিশেষজ্ঞদের রাখতে হবে । কমিটিতে রাখতে হবে ভাইরোলজিস্ট, প্য়ানডেমিক বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ । পাশাপাশি আমাদের মত যে সংগঠনগুলি বিভিন্ন প্যানডেমিক নিয়ে কাজ করেছে সামাজিক দিক থেকে তাদের পরামর্শ নেওয়া হোক । কিন্তু সেই পরামর্শে রাজ্য সরকার কর্ণপাত করেনি । তারা তাদের মত মনগড়া কমিটি তৈরি করেছে । ফলে সেই কমিটি কী সুপারিশ করেছে সেটা দিয়ে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি হয় না । আমাদের মেডিকেল সাইন্সের জন্য বিশেষ বিশেষ বিভাগ রয়েছে। কোনও একটি বিভাগের সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞ অন্য বিভাগে গিয়ে সেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন না । সুতরাং যাঁরা শুধুমাত্র আমার কথায় ওঠাবসা করবেন তাঁদের নিয়ে আমি একটা কমিটি বানিয়ে রেখে দিলাম তার কোনও মূল্য নেই ।"

আরও পড়ুন : কোরোনায় আরও 2 চিকিৎসকের মৃত্যু কলকাতায়

রাজ‍্যে আদৌ কোন বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, “ কোন কমিটির কথা আমরা ধরব । ডাক্তার মুখোপাধ্যায়ের কমিটি, ডাক্তার গঙ্গোপাধ্যায়ের কমিটি, নাকি নোবেলজয়ী অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল কমিটি ? আদতে রাজ্যের কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটি নেই । মুখ্যমন্ত্রী যা ভাববেন সেটাই শেষ কথা ।"

আদতে 2 এপ্রিল রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ডাঃ ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, “রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা 53। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের।” রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে সেই দাবি করেন তিনি । একইসঙ্গে জানান সেই সময় শেষ 24 ঘণ্টায় রাজ্য নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 16 জন । তার ঘণ্টা দুয়েক পর সন্ধে ছ'টা নাগাদ রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান আক্রান্তের সংখ্যা 34, আর মৃতের সংখ্যা 3। তারপরেই নবান্ন সভাঘরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা 38 ।" অভিযোগ, তারপর থেকেই বিশেষজ্ঞ কমিটির তেমন কোনও ভূমিকা আর দেখা যায়নি এবং তারপরেই রাজ্য সরকারের তরফে তৈরি করা হয় মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি। সেই কমিটি তৈরি হয় পাঁচ সদস্যের।

সেই কমিটিতে ছিলেন কারা?

1. ডাঃ বিশ্বরঞ্জন সৎপতি, প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা
2. ডাঃ দেবাশীষ ভট্টাচার্য, আহ্বায়ক, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা
3. ডাঃ প্লাবন মুখোপাধ্যায়, কার্ডিওথোরাসিক এন্ড ভাসকুলার সায়েন্স
4. ডাঃ আশুতোষ ঘোষ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন
5. ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল, মেডিসিন

আরও পড়ুন : অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা যায়নি, মৃত্যু কোরোনা রোগীর

কমিটি তৈরির পরই এই বিরোধীরা সমালোচনা শুরু করেন । রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকড় প্রশ্ন তোলেন, “ রাজ্যে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশের জন্য অডিট কমিটির রিপোর্টের উপর নির্ভরতা কেন ?"

সেই কমিটি গঠনের 29 দিনের মাথায় কার্যত ডিগবাজি খায় রাজ্য । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বলেন, “ ডেথ অডিট কমিটি আমি বানাইনি । ওই কমিটি তৈরি করেছেন স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার । তারই এই কমিটি করার অধিকার রয়েছে ।" রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা জানান তখন থেকে শুধুমাত্র শিক্ষামূলক এবং গবেষণার কাজে যুক্ত এই কমিটি। পাশাপাশি নবান্নের তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয় ICMR এর নির্দেশ মেনে ঘোষণা করা হবে মৃত্যুর সংখ্যা।

আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের অন্যতম বিরোধী নেতা সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, “ কোন বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে রাজ্যে লকডাউন হচ্ছে না । হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছামতো । তিনি যা চাইছেন তাই করছেন । কিন্তু আদতে রাজ্যবাসীর কোন লাভ হচ্ছে না ।"

বিষয়টি বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকদের একাংশও । এ প্রসঙ্গে ফুয়াদ হালিম বলেন, “ আমাদের দেশ এবং রাজ্যের সরকার প্যানডেমিক পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্রটা কি তা তুলে ধরছে না । ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মত কোন মুহূর্তে কি করা উচিত তা বোঝা যাচ্ছে না । সেটাই চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক।"

সজল বিশ্বাস বলেন, “ যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লকডাউন করা হত তবে বিষয়টা অন্যরকম হত । লকডাউন করা উচিত ভাইরাসের সংক্রমনের চেইনটা ভাঙার জন্য । আমরা জানি এই ভাইরাসের সংক্রমনের স্থায়িত্ব 14 দিন । অর্থাৎ সঠিকভাবে বিচার করে একটানা 14 দিনের লকডাউন করা বিজ্ঞান সম্মত হবে । তাতে সংক্রমণ চেইন ভাঙতে পারে । কিন্তু সেটা না করে 'ইয়েস ম্যান' কয়েকজনকে নিয়ে কমিটি তৈরি করে যদি নিজের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়ে নেওয়া হয় সেটাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। শুধু শুধু মানুষের হয়রানি হয় । মনে রাখতে হবে লকডাউনের আগের এবং পরের দিন অধিক সংখ্যক লোক পথে বেরোন । যেটাতে ক্ষতির সম্ভাবনাই প্রকট হয় । যদি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে সব করা হত, তবে ওইভাবে উৎসব,পরব কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনক্ষণ দেখে লকডাউনের দিন পরিবর্তন হতে পারত না । লকডাউনের এই পুরো বিষয়টি অবৈজ্ঞানিকভাবে চলছে।"

রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কারা আছেন ? প্রশ্নটা করতেই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ কমিটিতে কারা আছেন জানা নেই । আপনি দপ্তরে বিষয়টির খোঁজ নেবেন । সবই মন্ত্রী জানবে এমনটা কথা নেই । আমাদের বিশেষজ্ঞ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.