কলকাতা, 13 অক্টোবর: বাঙালি সুযোগ পেলেই ঘুরতে যায়। অল্প ক'দিনের ছুটি হোক বা দুর্গাপুজোর টানা ছুটি- কাছে কিংবা দূরে ঘুরে আসার লোভ বাঙালি সামলাতে পারে না। আর এবার সেই চিত্রই দেখা যাচ্ছে পূর্ব রেলের ওয়েটিং লিস্টের তালিকায়। কার্যত অতীতের সমস্ত নজির ভেঙে দিয়েছে এবারের পুজোর সময় ট্রেনের ওয়েটিং লিস্ট।
বাঙালির সর্বশ্রেষ্ট উৎসব দুর্গাপুজোর বাকি আর মাত্র ক'টা দিন। আর তারপরেই চার সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি ঘুরতে আসবেন উমা। এই ক'টা দিন বছরের রুটিন থেকে বেরিয়ে সবাই নিজের মতো করে সকলে আনন্দে মেতে ওঠেন। কেউ নিজের শহরে থেকে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে ভালোবাসেন। আবার ভ্রমণ পিপাসু বহু মানুষ টানা ছুটির সদ্ব্যবহার করে বেরিয়ে পড়েন কাছে কিংবা দূরে ঘুরতে। দু'বছর করোনা কাটিয়ে গতবছর থেকে সকলে হাত, পা ঝেরে মাস্কহীন হয়ে পুজোয় পুরোদমে আনন্দ করেছেন। তাই এই বছর অনেকেই লম্বা ছুটি হাতে পেয়ে বেরিয়ে পড়তে চলেছেন।
পূর্ব রেলের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে এই বছর পুজোর বেশ অনেক আগের থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল টিকিট বুকিং। তাই যারা অনেক আগেই সেরে রেখেছিলেন তাতে তাঁরা নিশ্চিন্ত। তবে যাঁরা এখনও পরিকল্পনা করছেন কোথায় যাবেন কিংবা ঠিক করে ফেলেছেন তাঁরা অনলাইনে বা কাউন্টারে টিকিট কাটতে গিয়ে সমস্য়ায় পড়ছেন। রেল সূত্রে খবর, প্রতিবছরই এই সময় বহু মানুষ শহর এবং রাজ্যের বাইরে বেড়াতে যান। যেমন দার্জিলিং, পুরী, দিঘা এবং আরও দূরে কোথাও। কিন্তু এই বছর ওয়েটিং লিস্ট একপ্রকার কল্পনাতিত। বেশ কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ব রেল এই চিত্র দেখেনি।
একদল মানুষ যেমন টিকিট কেটে একেবারে কনফার্ম টিকিট হাতে নিয়ে এবারে জামা-কাপড় প্যাক করার প্রস্তুতিতে লেগে পড়েছেন তেমনই অন্যদিকে, আরেক দল হন্যে হয়ে ঘুরছে কীভাবে তাদের ওয়েটিং লিস্টের টিকিট কনফার্ম করানো যায়। পুজোর সময় বা তার কিছু আগে কলকাতার থেকে যেই ট্রেনগুলি ছাড়ছে সেগুলির ওয়েটিং লিস্ট দেখলে তাক লেগে যাচ্ছে রেল কর্মীদেরই। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছরের মধ্যে পুজোর সময় ওয়েটিং লিস্টের এহেন হিড়িক আগে পড়েনি।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র কিছুটা মজার ভঙ্গিতেই বলেন, "এবার মনে হচ্ছে পুজোর সময় কলকাতা জনশূন্য হয়ে যাবে। পূর্ব রেলের ওয়েটিংয়ের তালিকা দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে। কালকা মেলে এখন যাঁরা টিকিট বুক করতে যাচ্ছেন তাঁদের 'রিগ্রেট' পাঠানো হচ্ছে। অর্থাৎ ওই দিন ওই ট্রেনে সেকেন্ড এসিতে আর একটিও বার্থ নেই। এছাড়া থার্ড এসি তেও 300-র উপর ওয়েটিং লিস্ট চলছে। কালকা স্লিপার ক্লাসের ক্ষেত্রে ওয়েটিং পৌঁছে গিয়েছে 400-র উপর। শিয়ালদা-রাজধানীর ক্ষেত্রেও ছবিটা এক। ওই ট্রেনেও 200 থেকে 300-উপর ওয়েন্টিং লিস্ট চলছে। দার্জিলিং মেলে 20 অক্টোবর 300-র উপর ওয়েটিং।"
সাধারণ ট্রেনগুলির পাশাপাশি সেমি হাই স্পিড বন্দেভারত এক্সপ্রেস ট্রেনেরও চাহিদা রয়েছে। কারণ পুজোর সময় বন্দে ভারতের 19 ও 20 অক্টোবর মিলিয়ে 250 উপর ওয়েটিং রয়েছে। এমনকী একিকিউটিভ ক্লাসেও 80-এর উপর ওয়েটিং লিস্ট। পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা দেখলে বোঝা যাবে, এই বছর ঘুরতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের চাহিদা ঠিক কতটা।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই মহকুমা তকমার পেল ধূপগুড়ি, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে