কলকাতা, 5 অক্টোবর: 2021 সালে সাবর্ণ পাড়া বড়িশা সর্বজনীন দুর্গোৎসব (Barisha Sarbajanin Durga Puja) সমিতির 73তম বর্ষের নিবেদন '300 কোটির প্রস্তুতি'। কেন এমন নামকরণ ? আছে এক লম্বা ইতিহাস । যে ইতিহাসের গবেষক সাংবাদিক সম্রাট চট্টোপাধ্যায় ।
জানা যায়, 15 শতকের শেষ দিকে অবিভক্ত বাংলার রাজশাহীর রাজা উদয় নারায়ণ পরিকল্পনা করেছিলেন দেশে দুর্গোৎসব করবেন । কিন্তু 1590-তে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে সেই পরিকল্পনা ধামাচাপা পড়ে যায় । এরপর 1605 সালে তাঁর নাতি রাজা কংসনারায়ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি দাদুর স্বপ্ন পূরণ করবেন । তাই পরের বছর থেকেই শুরু করেন দুর্গা পুজো । প্রাচীন পুঁথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, সেই সময়কার অন্যতম সেরা চিত্রশিল্পী প্রশান্ত চিত্রকরকে দিয়ে প্রস্তাবিত দুর্গা প্রতিমার ছবি আঁকানো হয় । প্রশান্ত চিত্রকরের হাতের জাদুতে সেই প্রতিমার চিত্রকলা হয়ে উঠেছিল সেই সময়ের তুলনায় অনেক আধুনিক ।
এরপর পাঁচজন মৃৎশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলাদা আলাদা করে প্রতিমা গড়ার । যাঁর প্রতিমা সবথেকে ভালো হয় সেই রমেশ ভাস্করের দুর্গা মূর্তি প্রথম দুর্গোৎসবে পূজিত হয় । পুজোর জায়গাটিকে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পড়ে সনাতন পণ্ডিতের উপর । ফলে বলতে দ্বিধা নেই, চলতি সময়ের ভাষায় তিনিই প্রথম থিম মেকার ।
আরও পড়ুন: Raiganj Durga Puja: 300 বছরের পুরনো সেনবাড়ির পুজোয় প্রবেশ নিষেধ মহিলাদের
প্রতিমা নির্মাণ কার্য শেষ হয়ে যায় 1605-এই । ও দিকে কংস নারায়ণের ঘোষণা অনুযায়ী উৎসব হবে 1606-এ । কিন্তু শরৎকাল চলে এসেছে । ফলে সভাপণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শে অস্থায়ী দালানেই ঘটপুজোর মাধ্যমে মাতৃ প্রতিমার পুজো হয় । একইসঙ্গে চলতে থাকে পরের বছরের উৎসবের প্রস্তুতি । আজ থেকে 415 বছর আগে 1606 সালে সেই উৎসবের জন্য রাজা কংস নারায়ণ ব্যয় করেছিলেন 9 লক্ষ টাকা । অর্থনীতিবিদরা হিসেব কষে জানিয়েছেন, 415 বছর আগের 9 লক্ষ টাকার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় 300 কোটি টাকা । 2021 সালে সাবর্ণ পাড়া বড়িশা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির 73তম বর্ষের নিবেদন সেই ইতিহাস মাথায় রেখেই । তাই নামকরণ '300 কোটির প্রস্তুতি'।
সাংবাদিক তথা ঐতিহাসিক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বাংলার দুর্গোৎসবের উপর 431 বছরের গবেষণা পত্রের একটা ছোট্ট অংশ নিয়েই সমসাময়িক শিল্প ধারার মাধ্যমে একটু ভিন্ন কায়দায় ইতিহাস ও আধুনিকতার মেলবন্ধন উপস্থাপিত হচ্ছে '300 কোটির প্রস্তুতি', জানালেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বরুণ ঘোষ ।
আরও পড়ুন : Mankundu Durga Puja: মানকুণ্ডুর খাঁ বাড়িতে অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা’ রূপে পূজিত হন
প্রতিমা প্রখ্যাত চিত্রকর সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় এঁকেছেন বহুকাল আগে । সেটিকে নির্মাণ করেছেন সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় এবং শিল্পী কৃশানু পাল । 2 অক্টোবর পুজো প্রাঙ্গণে এসে সেই মূর্তিতে রঙ লেপে দিলেন চিত্রকর সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় । শিল্পীর কথায়, "আমার নিজের মা'ই আমার মা দুর্গা । মা কখনও মারতেন না আমাদের । শাসন করার জন্য কথা বন্ধ করে দিতেন । মারতেন না কারণ তিনি তাঁর সন্তানকে যেভাবে আঘাত করবেন তাতে তাঁর সন্তানের থেকেও বেশি তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হবেন । আমার আঁকাতে মায়ের হাত তাই খুব নরম, ফুলের মতো । তাঁর ত্রিশূলও ফুলের মতো । ত্রিশূলও অত শক্তিশালী নয় । আমি মাকে যেমনটি দেখাতে চেয়েছি আমার ছবিতে, শিল্পী কৃশানু পাল ঠিক তেমনিভাবে সাজিয়েছেন মূর্তি ।"
আরও পড়ুন : London Durga Puja : ফের মিলছে প্রবাসের বরাত, ছন্দে ফিরছে কুমোরটুলি
মায়ের মূর্তির সামগ্রিক রূপায়ণে শিল্পী কৃশানু পাল । আবহে দিশারী চক্রবর্তী । আলো দিয়েছেন বাবলু সরকার । এ দিনের অনুষ্ঠান শেষে পায়রা উড়িয়ে শান্তির বার্তা দেন চিত্রকর সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যরা ।