কলকাতা, 6 জানুয়ারি: শহরের বুকে সন্ধ্যা নামলেই কলকাতা হয়ে ওঠে আলোকজ্জ্বল । আর সেখানেই শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ব্রহ্মপুরে অন্ধকারে এতদিন ঢাকত সকিনা শেখের বাড়ি । দীর্ঘ 36 বছর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় জীবন যাপন করেছে গড়িয়ার ব্রহ্মপুরের শেখ পরিবার । শেষে সেই অন্ধকার কাটিয়ে তাঁদের ঘরে জ্বলল আলো । বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাসিত শেখ পরিবারের সকলেই (poor family of Kolkata gets electricity after 36 years) ।
কলকাতায় গরমে তীব্র দাবদাহে যখন গলদঘর্ম মানুষ নাভিশ্বাস তুলছেন, স্বস্তি পেতে ফুল স্পিডে পাখা অথবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালিয়েছেন তখন অসহায় এই পরিবারের কাছে হাতপাখাই ছিল ভরসা ৷ টিভি দেখতে বা মোবাইলে চার্জ দেওয়ার জন্য শেখ পরিবারের সদস্যরা নির্ভর করতেন প্রতিবেশীদের উপর ৷ কারণ তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে তা দেওয়ার সামর্থও এই পরিবারটির ছিল না ৷ ফলে এভাবেই বছরের পর বছর, দিনের পর দিন কেটেছে শেখ পরিবারের সদস্যদের ৷
তবে অবশেষে এই না পাওয়ার অবসান ঘটেছে ৷ অন্ধকার ঘরে জ্বলেছে আলো । রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সহযোগিতায় শুক্রবার ব্রহ্মপুরের শেখ পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে । অন্ধকার মুক্তির এই স্বাদ পেয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন বাড়ির সদস্যরা ৷ এ যেন এক অন্য প্রাপ্তি ৷ কলকাতা পৌরনিগমের অন্তর্গত 111 নং ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুর জি ব্লক । কলকাতা সংলগ্ন এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বেশ কয়েক বছর আগেই । আর সেখানেই দীর্ঘ 36 বছর বিদ্যুৎহীন থেকেছে এই পরিবার (Poor Family Gets Electricity)।
আরও পড়ুন: ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানির ইতিহাস আঁকড়ে আজও পূজিত হন বনদুর্গা
বাড়ির কর্ত্রী সকিনা শেখের সঙ্গে থাকেন তাঁর মেয়ে ও জামাই । কিছু দিন আগে ব্রহ্মপুরে এসেছিলেন টালিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস । তাঁকে সামনে পেয়েই সকিনা শেখ তাঁর অসহায়তার কথা জানান । কলকাতা পৌরনিগমের আওতাধীন এলাকায় এমন কাণ্ডে কার্যত হতচকিত হয়ে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Aroop Biswas) । অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের তিনি নির্দেশ দেন ওই পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ।
মন্ত্রীর এই নির্দেশের পরে কালক্ষেপ করেননি দফতরের কর্তারা ৷ স্থানীয় কাউন্সিলর সন্দীপ দাসের সহায়তায় দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পায় পরিবারটি । অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশেই কাউন্সিলর সন্দীপ দাস বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সমস্ত প্রক্রিয়া চালান । দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে খুশি সাকিনার পরিবার । সাকিনা বলেন, "36 বছর ধরে এখানকার বাসিন্দা । বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না । সেভাবে কাউকে বলে উঠতে পারিনি, সাহায্যের কথা । তবে সময়ের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না । তাই বাধ্য হয়ে নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়েছিলাম মন্ত্রী ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে ৷ তাঁরা উপকার করেছেন । তাঁদের সহায়তায় অন্ধকার ঘুচে ঘরে আলো ফুটলো ।"
বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি, পানীয় জলের লাইনও এসেছে সাকিনাদের বাড়িতে ৷ এই প্রসঙ্গে 111 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপ দাস বলেন, "বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে ওই পরিবার মুখে হাসি ফুটেছে এটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি । বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি পানীয় জলের লাইনও । এভাবেই মানুষের পাশে থেকে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে কাউন্সিলর হিসেবে আমি সফল বলে মনে করব নিজেকে ।"