কলকাতা, 30 নভেম্বর: বুধবার কলকাতায় সভা করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ ধর্মতলার মঞ্চ থেকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে সরব হন এবং কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দাগেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ এমনকী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও অনুব্রত মণ্ডলকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি ৷ একযোগে আক্রমণ করতে ছাড়েননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ৷ আর অমিত শাহের সেই সভার পর দিনই যেন তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে সিবিআই । নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর থেকে বিধায়কের বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । শাহী সভা শেষে বৃহস্পতিবারেই এই তল্লাশি অভিযানকে ঘিরে সরগরম রাজনৈতিক মহল ৷ ইতিমধ্যে তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি ৷
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসার 24 ঘণ্টা কাটতে না-কাটতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিবিআই হানা নিছকই কাকতালীয় বলে দাবি বিজেপির ৷ এ নিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "অমিত শাহ আসার সঙ্গে আজকের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশির কোনও সম্পর্ক নেই ৷ এতগুলো তৃণমূল নেতা যে জেলে রয়েছেন, এতগুলো তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে, তখন কী অমিত শাহ রাজ্যে এসেছিলেন ৷ বিনা অমিত শাহতেই তল্লাশি ও কারাবাস হয়েছে তাঁদের ৷ আজকের হানা কাকতালীয় ব্যাপার ৷ অমিত শাহের হাতে কিছু নেই, কলকাতা হাইকোর্ট সব করাচ্ছে ৷ আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার মূলচ্ছেদ করতে হবে ৷ আর সেই মূলচ্ছেদ করার জন্যেই আজকের এই তল্লাশি অভিযান ৷ যা আগামিদিনেও চলবে ৷"
অন্যদিকে বিজেপি অমিত শাহের রাজ্যে আসার সঙ্গে তল্লাশি অভিযানকে এক লাইনে না-রাখতে চাইলেও সরব হয়েছে তৃণমূল ৷ তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "বিজেপি এভাবে আমাদের সঙ্গে লড়তে পারবে না। এজেন্সি পুলিশ এগুলো দিয়ে লড়াই করা যায় না। লড়াই হয় মানুষের সংগঠন এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ দিয়ে। ওদের শুধু মেরে দেব, ভেঙে দেব, জেলে ঢুকিয়ে দেব, এসব দিয়ে সংগঠন হয় না ৷ পায়ের তলায় মাটি পাওয়া যায় না । যত আমরা আক্রান্ত হব, তত মানুষের হৃদয়ে আমরা জায়গা পাব ।"
এর পালটা রাহুল সিনহা বলেন, "আসলে তৃণমূল বিষয়টিকে রাজনৈতিক পর্দার আড়ালে রাখতে চাইছে ৷ কারণ এমনিতে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের মুখ দেখানোর জো নেই ৷ সর্বত্রই চোর চোর চিহ্ন পড়ে গিয়েছে ৷ ফলে একটা রাজনৈতিক আবরণ দিতে পারলে তার পিছনে লুকিয়ে পড়ার রাস্তাটা সহজ হবে ৷ কিন্তু ওই সমস্ত করে কিছু হবে না ৷ ফিরহাদ হাকিম ভয় ও আতঙ্কে ওইসব কথা বলছে ৷ কার নম্বর এরপরে আসবে সেই ভয় কাজ করছে ৷ এর ফলে জনগণের ওদের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে না ৷ সবাই জেনে গিয়েছে ওরা চোর ৷ এত বড় টাকার পাহাড় তৃণমূল ছাড়া সারা দেশে কোনও দলের নেতার কাছে পাওয়া যাবে না ৷ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল চোর ৷ কয়লা, চাল থেকে শিক্ষক সবক্ষেত্রে তৃণমূল চুরি করেছে ৷ তারা যত গ্রেফতার হবে মানুষ তত তালি বাজাবে ৷"
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার একাধিক জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে সিবিআই ৷ দীর্ঘ সময় ধরে চলছে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ । এদিন কলকাতা, বিধাননগর-সহ অন্যান্য পৌরনিগমের কাউন্সিলরদের বাড়িতে হানা দেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ৷ সেই তালিকায় রয়েছেন কলকাতার 101 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত । তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত । পাশাপাশি বিধাননগরের মেয়র পরিষদ সদস্য দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই ।
আরও পড়ুন:
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্যর বাড়িতে সিবিআই হানা
পৌরসভা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ! সিবিআই হানা অদিতি মুন্সীর স্বামী তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজের বাড়ি
মুর্শিদাবাদেও একাধিক জায়গায় সিবিআই হানা, তল্লাশি বিধায়কের বাড়িতেও