আজমেঢ়, 6 ডিসেম্বর: জি-20 বৈঠকে যোগ দিতে এখন দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার দুপুরে কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি পৌঁছন তিনি ৷ আগামী বছর সেপ্টেম্বরে জি-20 সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবে ভারত ৷ তার প্রস্তুতিতে গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেন ৷ তাতে অংশ নিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ৷ আজ তাঁর রাজস্থানে যাওয়ার কথা (CM Mamata Banerjee in G20 Meet in New Delhi) ৷
নভেম্বর মাসে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, এবার দিল্লি গিয়ে আজমেঢ় শরিফ ও পুষ্কর পরিদর্শন করবেন তিনি। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই দুই ধর্মীয়স্থানকে রেলপথে সংযুক্ত করেছিলেন। সুফী ধর্ম সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান আজমেঢ় এবং হিন্দু-শিখদের ধর্মীয়স্থান পুষ্কর ৷ তাই এই দু'টি ধর্মস্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রীতির বার্তা দেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ যদিও তাঁর এই পদক্ষেপে জড়িয়ে ভোটের অঙ্ক, মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
রাজ্য রাজনীতিতে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী শিবিরের তোপের মুখে তৃণমূল সরকার ৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Recruitment Scam) আদালতের সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার ৷ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে একসময় দলের দুই নম্বর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং সরকারের দু'নম্বরে থাকা প্রাক্তন শিক্ষা তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন হাজতে ৷ দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে সরকারি আমলার নামও জড়িয়েছে ৷
আরও পড়ুন: দিল্লি যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী ? দেখুন ভিডিয়ো
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ছাড়া রয়েছে কয়লা ও গরুপাচার মামলায় (Coal Smuggling and Cattle Smuggling Case) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতাদের যুক্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে ৷ এমতাবস্থায় গতানুগতিক পন্থা ছেড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তায় হাঁটার পথ বেছে নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷
সিপিএমের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে নতুন করে মাটি খোঁজার প্রয়াস বলে উল্লেখ করা হচ্ছে ৷ অন্যদিকে বিজেপি একে 'তুষ্টিকরণ' বলে কটাক্ষ করেছে ৷ বিজেপি নেতা রাজর্ষি লাহিড়ী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই তুষ্টিকরণের এই রাজনীতি করেন ৷ তিনি আদৌ আজমেঢ় শরিফের ইতিহাস জানেন কি না, তা জানি না । কেন সেখানে মানুষ যায় ! যতই ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হোক না কেন, আদতে এটি ধর্মনিরপেক্ষ স্থান কি না ! সেখানে একটা ভুলে যাওয়া ইতিহাস রয়েছে ।" তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল সুপ্রিমো মানুষকে 'বিজেপি চলে আসবে' এই জুজু দেখানোর চেষ্টা করছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব করছেন 30 শতাংশ ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে ৷ আর বাকি 70%-র মধ্যে একটা বড় অংশের সমর্থন পেতেই তাঁর পুষ্কর যাওয়া ৷ রাজর্ষির কথায়, "এই অংকটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালো বোঝেন ৷ আর সে কারণেই আজ এই দু'টি ধর্মস্থানে যাচ্ছেন ৷" তবে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, এই যাত্রার পরেও তৃণমূল কংগ্রেসের খুব একটা লাভ হবে না ৷
আরও পড়ুন: জি-20 বৈঠকে তৃণমূল নেত্রীর পাশে বাম-কংগ্রেস, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাজ্য সরকার
এদিকে সিপিএম নেতা রবীন দেব এই সফর সম্পর্কে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে ৷ এই মুহূর্তে সরকার, সরকারের একেকজন অফিসার, থেকে মন্ত্রী দুর্নীতির জালে জড়াচ্ছেন ৷ প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন এবার আজমেঢ় শরিফ ও পুষ্করে যাবেন ৷ তবে দু'টি ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ।" প্রবীণ বামনেতার অভিযোগ, রাজ্য এই মুহূর্তে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত ৷ সেগুলিকে অবহেলা করে তিনি ধর্মীয় স্থানে যাচ্ছেন ৷ রবীন দেব বলেন, "আগে লন্ডন যেতেন, এখন জেলায় জেলায় যাচ্ছেন । আর দিল্লি যাওয়ার সুযোগে, নিজের লক্ষ্য পূরণ করছেন তিনি ৷"
তবে বিরোধীদের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, "1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন বাংলার বুকে দু'জন মহীয়সী মহিলা ঘুরে ঘুরে বাংলার বুকে শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন ৷ যাতে অশান্তি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন ৷ তাঁদের মধ্যে একজন আমাদের মধ্যে নেই ৷ তিনি মাদার টেরেসা ৷ আরেকজন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করেন ৷ তাই তিনি বলতে পারেন, 'ধর্ম যার যার, নিজের উৎসব সবার' । ভারতীয় জনতা পার্টি, যাঁরা ধর্মের নামে দেশ বিভাজন করে এবং যাদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আতঙ্কের কারণ, তারা এই ধরনের কথা বলে মিথ্যে প্রচারের চেষ্টা করে ।"
আরও পড়ুন: এবার আর মোদি-মমতা বৈঠক নয়, কী বলছে বিজেপি ?