ETV Bharat / state

Opposition Meeting: সিপিএম বিরোধিতা থেকে যে তৃণমূলের জন্ম, বিজেপিকে হারাতে বামেদের সঙ্গেই জোট কতটা বাস্তব ! - তৃণমূল

তৃণমূল দলটাই তৈরি হতো না যদি সিপিএম না থাকত । ফলে সেই দলের সঙ্গে সঙ্গে জোট যতই জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে হোক, রাজ্যের মানুষের কাছে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে ? সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে মমতাকে একমঞ্চে দেখার পর এই প্রশ্নই তুলছে ওয়াকিবহাল মহল ৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By

Published : Jun 23, 2023, 9:42 PM IST

Updated : Jun 24, 2023, 9:09 AM IST

কলকাতা, 23 জুন: কথায় বলে, নেসেসিটি ইজ দ্য মাদার অফ ইনভেনশন অর্থাৎ, প্রয়োজনীয়তায় উদ্ভাবনের জননী । আর রাজনীতিতে চিরন্তন বন্ধু যেমন হয় না, চিরন্তন শত্রুও তেমন হয় না । তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল শুক্রবার বিরোধীদের জোট বৈঠক । খাতায়-কলমে যাদের এক মঞ্চে আসার কথা কল্পনাও করা যায় না । পটনায় নীতিশ কুমারের আহ্ববানে বিরোধীদের জোট বৈঠকে সেই চিত্রই চোখে পড়ল শুক্রবার । শুধু চোখে পড়াই নয়, তারা শপথ নিলেন জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে লড়াই করবেন ।

আদৌ কি তৃণমূলের জন্ম সিপিএম বিরোধিতা থেকে । অর্থাৎ, তৃণমূল দলটাই তৈরি হত না, যদি সিপিএম না থাকত । ফলে সেই দলের সঙ্গে সঙ্গে জোট যতই জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে হোক, রাজ্যের মানুষের কাছে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে ? প্রসঙ্গত, শুক্রবার মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে এই গুরুত্বপূর্ণই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে বিজেপি । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সংবাদমাধ্যমকে জানান, এটা ভাবতে অবাক লাগছে, যে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা চুলের মুটি ধরে প্রকাশ্য রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমানিত করেছিলেন, ওই কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেই এক হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা কখনও কল্পনা করেননি যে 'কংগ্রেস কর্মীদের রক্তস্নাত' হাত একদিন রাহুল গান্ধির মাথায় দেখা যাবে । ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সবটাই আসলে স্বার্থের জোট ।

মাত্র 7 দিন আগের কথা । কংগ্রেসকে কড়াবার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী । নবজোয়ার কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কাকদ্বীপে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কংগ্রেস যেন বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে ঘর করে তৃণমূলের সাহায্য প্রত্যাশা না-করে । কিন্তু কি এমন ঘটল, যার কারণে সাত দিনের ব্যবধানে রাহুল গান্ধি, সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পাশে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে হল, বিজেপিকে হারাতে একসঙ্গে লড়াইয়ে প্রস্তুত ।

যদিও এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাই বড় হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল । রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক রাজু রায়ের মতে, জাতীয় রাজনীতিতে এমন জোট এই প্রথম নয় । বিজেপি বিরোধিতাই এই মুহূর্তে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । রাজ্য তথা জাতীয় ক্ষেত্রে সিপিএম তার আগের অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে । তার একটা কারণ, এরাজ্য তথা জাতীয় ক্ষেত্রে সিপিএম এই মুহূর্তে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি । রাজনীতিতে অবস্থানগত পরিবর্তন কোনও নতুন বিষয় নয় । 89 সালে রাজীব গান্ধির বিরোধিতায় এই কলকাতার রাজপথেই হাতে হাত ধরে দেখা গিয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ী আর জ্যোতি বসুকে ।

তারও আগে জরুরি অবস্থার পরে ইন্দিরা গান্ধিকে হারাতে জনসংঘ এবং কংগ্রেসের একাংশকে একজোট হতে দেখা গিয়েছিল । তাঁর মতে সবটাই বৃহত্তর স্বার্থের উপর নির্ভর করে । এই মুহূর্তে বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলো মনে করছে মোদি সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোই এই মুহূর্তে সবথেকে বড় বিষয় । আর সেই জায়গা থেকেই একজোট হয়েছে এমন কিছু দল, যারা অতীতে কখনও এক জায়গায় আসতে পারে ভাবা যায়নি । কিন্তু জাতীয় ক্ষেত্রে এই জোট রাজ্যস্তরে ভাবলে ঠিক হবে না । কারণ রাজ্যের সমীকরণ আলাদা সেক্ষেত্রে প্রত্যেক আঞ্চলিক দল বা রাজ্যস্তরে দলগুলির আলাদা সমীকরণ রয়েছে । সেই সমীকরণ থেকে আদৌ কতটা সরে আসা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ।

আরও পড়ুন: পটনার বিরোধী বৈঠকে মধ্যমণি মমতা

এদিন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিতারাম ইয়েচুরির গলাতেও একই সুর শোনা গিয়েছে । পটনায় বৈঠকের পর তিনি বলেন, "আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি তার কারণ আমাদের দেশ ও আমাদের সংবিধান এই মুহূর্তে সংকটের মধ্যে । দেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র তা বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে । ব্যক্তিগত সংঘাত থাকলেও দেশের হিতের কথা ভেবে এই পদক্ষেপ ।" তিনি আরও জানান, আগামিদিনে আমাদের এই পথে সাফল্য আসবে । একসঙ্গে চলার বার্তা এদিন দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । তিনি বলেন, "স্বৈরাচারী এই সরকারকে হটাতে দেশের একসঙ্গে লড়াই জরুরি ।"

কিন্তু প্রশ্ন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথের লড়াইয়ে যে সিপিএম কর্মী আজ তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে মার খাচ্ছে, তাঁর কাছে এই বার্তা গ্রহণযোগ্য হবে তো ? অথবা বাম আমলে সিপিএমের অত্যাচারে যে মানুষটি দিনের পর দিন ঘরছাড়া ছিলেন, তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে এই বৃহত্তর লড়াইয়ের স্বার্থের কথা বুঝবেন তো ? বাংলায় এক প্রচলিত গানের লাইন আছে, 'থাকিলে ডোবাখানা হবে কচুরিপানা, বাঘে হরিণে খানা একসাথে খাবে না ।' তাহলে কি এই প্রচলিত লোকসংগীতের লাইনও এবার বদলাতে চলেছে বাংলায় !

কলকাতা, 23 জুন: কথায় বলে, নেসেসিটি ইজ দ্য মাদার অফ ইনভেনশন অর্থাৎ, প্রয়োজনীয়তায় উদ্ভাবনের জননী । আর রাজনীতিতে চিরন্তন বন্ধু যেমন হয় না, চিরন্তন শত্রুও তেমন হয় না । তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল শুক্রবার বিরোধীদের জোট বৈঠক । খাতায়-কলমে যাদের এক মঞ্চে আসার কথা কল্পনাও করা যায় না । পটনায় নীতিশ কুমারের আহ্ববানে বিরোধীদের জোট বৈঠকে সেই চিত্রই চোখে পড়ল শুক্রবার । শুধু চোখে পড়াই নয়, তারা শপথ নিলেন জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে লড়াই করবেন ।

আদৌ কি তৃণমূলের জন্ম সিপিএম বিরোধিতা থেকে । অর্থাৎ, তৃণমূল দলটাই তৈরি হত না, যদি সিপিএম না থাকত । ফলে সেই দলের সঙ্গে সঙ্গে জোট যতই জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে হোক, রাজ্যের মানুষের কাছে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে ? প্রসঙ্গত, শুক্রবার মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে এই গুরুত্বপূর্ণই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে বিজেপি । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সংবাদমাধ্যমকে জানান, এটা ভাবতে অবাক লাগছে, যে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা চুলের মুটি ধরে প্রকাশ্য রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমানিত করেছিলেন, ওই কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেই এক হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা কখনও কল্পনা করেননি যে 'কংগ্রেস কর্মীদের রক্তস্নাত' হাত একদিন রাহুল গান্ধির মাথায় দেখা যাবে । ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সবটাই আসলে স্বার্থের জোট ।

মাত্র 7 দিন আগের কথা । কংগ্রেসকে কড়াবার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী । নবজোয়ার কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কাকদ্বীপে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কংগ্রেস যেন বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে ঘর করে তৃণমূলের সাহায্য প্রত্যাশা না-করে । কিন্তু কি এমন ঘটল, যার কারণে সাত দিনের ব্যবধানে রাহুল গান্ধি, সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পাশে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে হল, বিজেপিকে হারাতে একসঙ্গে লড়াইয়ে প্রস্তুত ।

যদিও এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাই বড় হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল । রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক রাজু রায়ের মতে, জাতীয় রাজনীতিতে এমন জোট এই প্রথম নয় । বিজেপি বিরোধিতাই এই মুহূর্তে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । রাজ্য তথা জাতীয় ক্ষেত্রে সিপিএম তার আগের অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে । তার একটা কারণ, এরাজ্য তথা জাতীয় ক্ষেত্রে সিপিএম এই মুহূর্তে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি । রাজনীতিতে অবস্থানগত পরিবর্তন কোনও নতুন বিষয় নয় । 89 সালে রাজীব গান্ধির বিরোধিতায় এই কলকাতার রাজপথেই হাতে হাত ধরে দেখা গিয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ী আর জ্যোতি বসুকে ।

তারও আগে জরুরি অবস্থার পরে ইন্দিরা গান্ধিকে হারাতে জনসংঘ এবং কংগ্রেসের একাংশকে একজোট হতে দেখা গিয়েছিল । তাঁর মতে সবটাই বৃহত্তর স্বার্থের উপর নির্ভর করে । এই মুহূর্তে বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলো মনে করছে মোদি সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোই এই মুহূর্তে সবথেকে বড় বিষয় । আর সেই জায়গা থেকেই একজোট হয়েছে এমন কিছু দল, যারা অতীতে কখনও এক জায়গায় আসতে পারে ভাবা যায়নি । কিন্তু জাতীয় ক্ষেত্রে এই জোট রাজ্যস্তরে ভাবলে ঠিক হবে না । কারণ রাজ্যের সমীকরণ আলাদা সেক্ষেত্রে প্রত্যেক আঞ্চলিক দল বা রাজ্যস্তরে দলগুলির আলাদা সমীকরণ রয়েছে । সেই সমীকরণ থেকে আদৌ কতটা সরে আসা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ।

আরও পড়ুন: পটনার বিরোধী বৈঠকে মধ্যমণি মমতা

এদিন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিতারাম ইয়েচুরির গলাতেও একই সুর শোনা গিয়েছে । পটনায় বৈঠকের পর তিনি বলেন, "আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি তার কারণ আমাদের দেশ ও আমাদের সংবিধান এই মুহূর্তে সংকটের মধ্যে । দেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র তা বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে । ব্যক্তিগত সংঘাত থাকলেও দেশের হিতের কথা ভেবে এই পদক্ষেপ ।" তিনি আরও জানান, আগামিদিনে আমাদের এই পথে সাফল্য আসবে । একসঙ্গে চলার বার্তা এদিন দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । তিনি বলেন, "স্বৈরাচারী এই সরকারকে হটাতে দেশের একসঙ্গে লড়াই জরুরি ।"

কিন্তু প্রশ্ন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথের লড়াইয়ে যে সিপিএম কর্মী আজ তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে মার খাচ্ছে, তাঁর কাছে এই বার্তা গ্রহণযোগ্য হবে তো ? অথবা বাম আমলে সিপিএমের অত্যাচারে যে মানুষটি দিনের পর দিন ঘরছাড়া ছিলেন, তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে এই বৃহত্তর লড়াইয়ের স্বার্থের কথা বুঝবেন তো ? বাংলায় এক প্রচলিত গানের লাইন আছে, 'থাকিলে ডোবাখানা হবে কচুরিপানা, বাঘে হরিণে খানা একসাথে খাবে না ।' তাহলে কি এই প্রচলিত লোকসংগীতের লাইনও এবার বদলাতে চলেছে বাংলায় !

Last Updated : Jun 24, 2023, 9:09 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.