কলকাতা, 21 জুলাই : পূর্বপুরুষের নেশা ছিল মানব সেবা । সেই ঐতিহ্য বজায় রাখতেই মানুষের পাশে উত্তরসূরিরা । উত্তর কলকাতার পাল বাড়িতে ঘণ্টা বাজালেই পাওয়া যায় অক্সিজেন । তবে এই জরুরি পরিষেবা মেলে শুধুমাত্র রাত 11 টা থেকে সকাল 8 টা পর্যন্ত । এই বাড়ির মালিক বি কে পাল অর্থাৎ, বটকৃষ্ণ পাল । 1857-58 সাল থেকে এই পরিষেবা চালু হয়েছে বলে জানান বটকৃষ্ণ পালের প্রপৌত্র অনুপকুমার পাল ।
92 নম্বর শোভাবাজার স্ট্রিটে বটকৃষ্ণ পালের বাড়ির নিচের তলায় রয়েছে দোকান । এই দোকানে দিনের বেলাতেও অক্সিজেন পাওয়া যায় । তবে, রাত 11 টা থেকে সকাল 8 টা পর্যন্ত চালু থাকে রাতের অক্সিজেনের জরুরি পরিষেবা । এই পরিষেবা পেতে হলে দোকানের সামনে একটি ঘণ্টা রয়েছে । যার নাম 'নাইট বেল' । এই ঘণ্টা বাজানো হলে, অক্সিজেন দেওয়া হয় । এক সময় এই দোকানের কর্মীরা এই পরিষেবা দিতেন । বর্তমানে বটকৃষ্ণ পালের বংশধররা এই পরিষেবা দেন ।
তবে শুধুমাত্র অক্সিজেন নয় । বটকৃষ্ণ পালের আমলে তৈরি হয়েছিল এডওয়ার্ডস টনিক । ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য জ্বর এবং অন্য বিভিন্ন অসুখে এই ওষুধ কাজ করে বলে জানান অনুপবাবু । অক্সিজেনের পাশাপাশি রাতের বেলায় ঘণ্টা বাজালে ওষুধও পাওয়া যায় । শুধুমাত্র এডওয়ার্ডস টনিকই নয়, বাজারে চালু অন্য কিছু ওষুধও এখানে পাওয়া যায় । যার মধ্যে জীবনদায়ী ওষুধ রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে । তবে, বেশিরভাগ মানুষ অবশ্য রাতে অক্সিজেন নিতেই আসেন এখানে । তার কারণ, কলকাতায় অন্য কোথাও সেভাবে রাতের বেলায় অক্সিজেন পাওয়া যায় না ।
ওষুধের পাশাপাশি ডাক্তারের চেম্বার এবং একটি অপারেশন থিয়েটারও রয়েছে এই বাড়িতে । এই চেম্বারে এক সময় রোগী দেখেছেন ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় । চেম্বার এবং অপারেশন থিয়েটারটি এখনও রয়েছে, তবে চালু নেই পরিষেবা । এই বাড়ির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস । অনুপকুমার পাল বলেন, "ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি বুঝি না । আমাদের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্য আগে । ঐতিহ্য বজায় রাখার লক্ষ্যেই অক্সিজেন পরিষেবা দেওয়া হয় । এরদ্বারা আমরা মানুষের অনেক কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছি ।"
অনুপকুমার পাল বলেন, বটকৃষ্ণ পালের জন্ম শিবপুরে । সেখান থেকে 20 নম্বর খ্যাংড়াপট্টি স্ট্রিটে চলে আসেন তিনি । 1857-58 সালে খ্যাংড়াপট্টি স্ট্রিটের একটি দোকানে কাজ করতেন তিনি । সেই দোকানে ওষুধের জন্য ব্যবহার করা হয় এমন গাছ বিক্রি হত । ওই দোকানেই গাছ কিনতে গেছিলেন এডওয়ার্ডস সাহেব । তিনি ভুল বশত টাকার থলি দোকানেই ফেলে যান । পরে তা খোঁজ করতে গিয়ে ফিরে পেলেও ফিরিয়ে নেননি সেই থলি । টাকার থলির খোঁজ মেলায় তিনি আনন্দে বটকৃষ্ণ পালকে ম্যালেরিয়ার ওষুধের জন্য একটি ফর্মুলা বলে দেন । কারণ, তখন শহরে খুব ম্যালেরিয়া হচ্ছিল । এরপর বটকৃষ্ণ পাল ওই ফর্মুলা জেনে তা তৈরি করে বিক্রি করেন । ওষুধের নাম দেন এডওয়ার্ডস টনিক । এরপর ধীরে ধীরে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন বটকৃষ্ণ পাল । ভূতনাথ পাল ও হরিশংকর পাল ছিলেন বটকৃষ্ণ পালের দুই ছেলে । হরিশংকর পাল কলকাতা পৌরনিগমের মেয়র ছিলেন । তাঁর প্রচেষ্টায় এডওয়ার্ডস টনিকের বিস্তার ঘটে । লন্ডনেও একটি অফিস ছিল । পাশাপাশি দমদমের ঘুঘুডাঙায় এই টনিক তৈরির জন্য বড় ফ্যাক্টরি ছিল । এই টনিককে সাধারণ মানুষ বলেন 32 রোগের ওষুধ ।
অনুপবাবু আরও জানান, 92 নম্বর শোভাবাজার স্ট্রিটের এই বাড়িতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহরু, রামকৃষ্ণর মতো মনীষীদের পা পড়েছে ৷