কলকাতা, 22 জানুয়ারি : আবেগের অন্য আর এক নাম নেতাজি ৷ তাঁর জীবন, স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ, মতের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে চর্চা অব্যাহত । চিরকালীন এই মহান দেশনায়ক বেঁচে থাকলে একশো তেইশ বছরে পা দিতেন । তবে, এখনও তাঁকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ অনির্বাণ । দেশনায়কের জীবন মানেই তাঁর কর্মপন্থার আজীবন কাঁটাছেড়া । তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নিরন্তর আলোচনা । যার আড়ালে রয়ে যায় ব্যক্তি মানুষটা । সুভাষচন্দ্র বসুকে ঘিরেও অন্যথা হয়নি ।
কটকে জন্ম, বাংলায় উচ্চ শিক্ষা এবং কাজের জগত । কিন্তু কী রকম ছিল তাঁর খাদ্যভ্যাস? কলকাতায় কোন হোটেলে সুযোগ পেলেই পাত পেড়ে খেয়ে আসতেন তা অনেকেরই অজানা । কটকে ছেলেবেলা কেটেছে । ওখানে সুভাষচন্দ্র বসু জীবন্ত বিগ্রহ । কটকবাসীর প্রতি কিংবদন্তী দেশনায়কের একটা বিশেষ জায়গা ছিল । তাই প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় ক্লাসের ফাঁকে চলে আসতেন মানবেন্দ্র পাণ্ডার হোটেলে । সেই সময় তরুণ মানবেন্দ্র কলকাতায় এসেছিলেন চাকুরির খোঁজে । কিন্তু চাকুরি জোটেনি । ফলে ভালো রান্না করার বিদ্যা কাজে লাগিয়ে খুলে ফেলেছিলেন হিন্দু হোটেল ।
আরও পড়ুন :চা শ্রমিকদের 26 টাকা মজুরি বৃদ্ধিতে নারাজ শ্রমিক ও বিরোধী সংগঠন
সালটা 1915 ৷ আজকের মতো কলেজস্ট্রিট তখন, এতটাও জমজমাট ছিল না । হোটেল ছিল হাতেগোনা । সেখানে ওড়িশা থেকে আসা মানব ঠাকুরের হোটেল ভালো রান্নার জন্য লোকপ্রিয় হয়ে ওঠেন । অমনি, খবর পৌঁছল প্রেসিডেন্সি কলেজের দাপুটে, মেধাবী ছাত্র সুভাষচন্দ্র বসুর কানে । ওড়িয়া ঠাকুরের হাতের রান্নার স্বাদ পেতে সুভাষচন্দ্র আসলেন মানব পাণ্ডার হোটেলে । আজকের মতো চেয়ার টেবিলে খাওয়ার চল ছিল না । হাঁটু মুড়ে বাবু হয়ে বসে কলাপাতায় ভুড়িভোজ । মনপসন্দ স্বাদ পেতেই কলেজ পড়ুয়া সুভাষের ক্লাসের ফাঁকে একাধিক দিন চলে আসতেন এখানে । শুধু নিজে নয়,বন্ধুরাও সঙ্গে আসতেন । পুঁই-শাকের চচ্চড়ি, মৌরলা মাছ, বেগুন পোড়া, কাটা দিয়ে ডাল ছিল সুভাষচন্দ্র বসুর প্রিয় পদ । কিংবদন্তী দেশনায়কের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান নিয়ে চর্চা অব্যাহত ।
চলতি বছরে 125 তম জন্মদিবস পালিত হচ্ছে এই দেশ নায়কের । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাঙালি খাবারের প্রতি ভালোবাসার গল্প শোনাচ্ছিলেন মানবেন্দ্র পাণ্ডার নাতি অরুণাংশু পাণ্ডা । দাদুর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর বহু গল্প শুনেছেন । শুধু নিজে আসেননি, সঙ্গে এনেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকেও ৷ হোটেলে নিয়ে এসে মানবঠাকুরের রান্নার স্বাদ পাইয়েছিলেন । কালে কালে সেদিনের হিন্দু হোটেলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পেটপুজো এবং আলোচনার স্থান হয়ে উঠেছিল । তার কেন্দ্র বিন্দুতে অবশ্যই সুভাষচন্দ্র বসু ।
1915সালে কলেজ স্ট্রিটে হিন্দু হোটেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল । 1927 সালে তা উঠে আসে আজকের জায়গায় ভবানীদত্ত লেনে । স্থান পরিবর্তন হলেও মাহাত্ম বদল হয়নি । পরবর্তী জীবনে কর্মজীবনের ব্যস্ততার মধ্যে নিয়মিত আসা হয়ে উঠত না । তবে এলগিন রোডের বসু পরিবারের সঙ্গে পাণ্ডা পরিবারের সখ্যতা গড়ে উঠেছিল । সুভাষচন্দ্র বসুর ভাই-ভাইপোরা এই হোটেলে এসে ভালো রান্নার স্বাদ নিয়ে গিয়েছেন । রাঙাকাকার প্রিয় খাবারের স্বাদ চেখে দেখেছেন ।
এর মাঝে দেশ স্বাধীন হয়েছে । সে দিনের হিন্দু হোটেল নাম বদলে হয়েছে স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল । এই নাম পরিবর্তন করেছিলেন মানবেন্দ্র পাণ্ডা । তবে কিংবদন্তী দেশনায়কের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা না চালানোর উপদেশ মানবেন্দ্র পাণ্ডা তাঁর পরের প্রজন্মকে দিয়ে গিয়েছিলেন । সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে নতুন প্রজন্ম । শুধু তাই নয়, সুভাষচন্দ্র বসু বাটা মশলার রান্না পছন্দ করতেন । এখনও সেভাবেই রান্না হয় । নানা রকম সবজিতে তৈরি হয় তরকারি । অরুণাংশু পাণ্ডা বলছেন, সুভাষচন্দ্র বসু তাঁদের কাছে পণ্য নয়, দেশের মহান নেতা তাঁদের কাছে চরম শ্রদ্ধার মানুষ । তাই দাদুর আমল থেকে প্রতি বছরের মত এখানে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন হয় । যেখানে ভবানী দত্ত লেন জুড়ে যায় এলগিন রোড,কটকের সঙ্গে ।