কলকাতা, 16 অক্টোবর: রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি এবং চাকরিপ্রার্থীদের রাস্তায় বসে থাকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া আক্রমণ করলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার (Manik Sarkar) । ব্যাংক কর্মীদের বার্ষিক সম্মেলনে শনিবার কলকাতায় আসেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার । তিনি ছিলেন প্রধান বক্তা । টানা 48 মিনিটের বক্তব্যে দেশের একাধিক জ্বলন্ত ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করেন তিনি । পরে ইটিভি ভারতকে এক প্রশ্নের উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকেও কড়া আক্রমণ করেন ।
রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি এবং যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় বসে থাকার ঘটনাকে কলঙ্কিত অধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি । তিনি বলেন, "রাজ্য সরকারই এর জন্য দায়ী । এতটাই দুর্নীতিতে ডুবে আছে যে সারা দেশের কাছে কলঙ্কিত অধ্যায় তৈরি করেছে । এই দায় সরকারের । সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবেন । পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আন্দোলন সংগঠিত করছেন ।"
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না মিললে বিজেপিকে মিটিং মিছিলের অনুমতি নয়, হুঁশিয়ারি দেবু টুডুর
দিন কয়েক আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বলতে শোনা যায়, আমি মনে করি না যে আরএসএস এতটা খারাপ । এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মানিক সরকার বলেন, "এ সমস্ত কথাবার্তা বলে তিনি তাঁর দুর্বলতা ঢেকে রাখতে পারছেন না । মানুষের সামনে বারবার ধরা পড়ে যাচ্ছেন তিনি ।"
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে মানিক সরকার জানান, অগ্নিপথের নাম করে সরকার বাজারে নেমেছে । ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার পর বিজেপি নেতা বলেন বাদ পড়ে যাওয়া অগ্নিবীররা তাদের পার্টি অফিসে ভলান্টিয়ারের কাজ করবে । তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, সরকারি অর্থানুকুল্যে ট্রেন্ড বাহিনী তৈরি করে নিজেদের সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করছে বিজেপি । এটা স্বৈরাচারী মনোভাব । বিপদ তৈরি করা হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্বের উপর । এই চ্যালেঞ্জ বেকার যুবকদের একার নয়, সকলের । ট্রেড ইউনিয়নকে এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । কৃষক সমস্যা জাতীয় সমস্যা । এর থেকে ট্রেড ইউনিয়ন আলাদা করতে পরে না । এটার বিরুদ্ধে সমস্ত অংশের মানুষকে ঐকবদ্ধ হতে হবে ।
আরও পড়ুন: বাস্তব পরিস্থিতি দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত, বউবাজারের সংকট নিয়ে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
তিনি আরও জানান, ব্রিটিশদের থেকে ধার করে নেওয়া ভেদাভেদের করে শাসনের কায়দা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বিজেপি । বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করার চেষ্টা করছে । জীবনের মূল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে এসব করছে । সমস্যায় মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে । তাই সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে । সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে ।
তাঁর আরও দাবি, বিচার বিভাগেও প্রভাব খাটানো হচ্ছে । যারা বাবরি মসজিদ ভাঙলেন তাদের জমি দিয়ে মন্দির নির্মাণ করার সুযোগ করে দিলেন । যিনি রায় দিলেন তিনি রাজ্যসভায় গেলেন । বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে ৷ সামগ্রিকভাবে দেশের সংবিধানের উপর আক্রমণ চলছে । ইতিহাস তৈরির চেষ্টা চলছে । এই সমস্ত বিষয়গুলিতে কিন্তু দেশের মানুষ আক্রান্ত হবে । এই সমস্যাগুলি থেকে ট্রেড ইউনিয়ন সমাধান করতে না পারে তাহলে নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না । কৃষি শ্রমিকদের, মজুরদের সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে ।