কলকাতা, 6 মে : ঘূর্ণিঝড় ফণীর দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে কারো হাত নেই । বিপর্যয় মোকাবিলা ও তার পরবর্তী পদক্ষেপ করাই সরকারের কাজ । কিন্তু, বিশ্বের বৃহত্তম এই গণতন্ত্রের দেশে ফণীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সৌজন্য ও কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল।
ফণীর দাপটে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ বিপর্যস্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ফোন করেছিলেন। কথা হয় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে । কিন্তু, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি । তারপর রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছ থেকে রাজ্যের খোঁজ নেন মোদি।
এরপরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে তৃণমূল নেতৃত্ব এই নিয়ে ক্ষুব্ধ। কেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বললেন না, সেই প্রশ্ন তোলে তৃণমূল । এরপরই প্রধানমন্ত্রী দপ্তর (PMO) থেকে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলাতে PMO থেকে দু'বার মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে ফোন করা হয়েছিল । কিন্তু, দু'বারই বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী সফরে রয়েছে । ফিরে এলে ফোন করা হবে । সেই ফোন আর পায়নি PMO ।
তবে এখানেই শেষ নয়। আজই ফণী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রিভিউ বৈঠক করার জন্য রাজ্যকে জানায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। PMO সূত্রে জানা গেছে, ফণীর রিভিউ বৈঠক নিয়ে তারা নবান্নে ফোন করেছিল। পাঠানো হয়েছিল চিঠিও। বলা হয়েছিল, ফণীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কিন্তু নবান্নের তরফে PMO-কে জানিয়ে দেওয়া হয় আজ বৈঠক সম্ভব নয় ।
ওড়িশা থেকে আজ রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে আসেন নরেন্দ্র মোদি। হলদিয়ার সভায় তিনি বলেন, "দিদি মানুষের কথা নিয়ে ভাবেন না । ফণীর বিষয়ে বৈঠক করার জন্য দিদিকে দু'বার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর এতটাই ঔদ্ধত্য।"
কেন প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে আপত্তি জানালেন ? আজ বাঁকুড়ায় জনসভা থেকে বৈঠক না করার যুক্তি অবশ্য দিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, "ভোট প্রচারে এসে বৈঠকের জন্য ডাকছেন মোদি । তাহলে আমরা যাব কেন ? আমি ওনার পাশে বসে বৈঠক করব। আর ছবি তুলে উনি বলবেন, আমি খোঁজ নিলাম । উনি যদি এমনি বৈঠকের জন্য আসতেন আমরা যেতাম ।" একইসঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, "প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে । নির্বাচনের সময় তাঁর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করব না। নতুন প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর সঙ্গে কথা বলব ।"
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে এখন ভোট চলছে । কোনও রাজনৈতিক দল কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়বে না। এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী যখন রাজ্যের প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে বৈঠক করতে চান, তা কি খারিজ করা উচিত আরেক প্রশাসনিক প্রধানের ? প্রশ্নটা উঠছে।