কলকাতা, 23 জুলাই : আগামী সোমবার দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি নিজেই জানিয়েছেন, পিএমও থেকে সময় দিলে এবারের সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন । কি নিয়ে হতে পারে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে ? দেশের মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে তা নিয়ে । আসলে একদিকে মোদি বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়ে দিল্লির পথে রওনা দিচ্ছেন মমতা । অন্যদিকে, আবার সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেই সাক্ষাৎ করবেন বলছেন । আর এই দুইয়ের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ।
যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ দিল্লির দিকে । গোটা দেশে নরেন্দ্র মোদির বিজয় রথ বাংলার মাটিতে এসে মুখ থুবরে পড়েছে । খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই জয় তৃণমূল কংগ্রেসকে যথেষ্ট উজ্জীবিত করেছে । এর উপর ভরসা করে দিল্লির উদ্দেশ্যে পা বাড়াচ্ছেন মমতা । তাঁর মূল লক্ষ্য দেশজুড়ে মোদি বিরোধী শক্তির সামনের সারির মুখ হয়ে ওঠা । এই অবস্থায় অন্য কোনও সমীকরণ ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয় ।
যদিও রাজ্যে প্রথম সারির এক নেতা শুক্রবার কটাক্ষের সুরে জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় ভাল ফলের পর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন । স্বপ্ন দেখতে তো আর পয়সা লাগে না । কাজেই সে স্বপ্ন তিনি দেখতেই পারেন । কিন্তু তাঁর মুখের কথা আর কাজের মধ্যে কোথায় যেন অমিল । তিনি বলেন, ‘‘যারা একুশের ভাষণ একটু মন দিয়ে শুনেছেন তারা নিশ্চয়ই শুনবেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তার ক্ষোভ ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে নয় । তিনি নাকি এমন অনেক কিছুই জানেন না যা অমিত শাহ করছেন । তবে কি এইটা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশংসা ।’’
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : মমতাকে চেয়ারপার্সন করে 24-এর লড়াইয়ে গতি আনার লক্ষ্য তৃণমূলের
একদিকে মোদি বিরোধিতা আর অপরদিকে তাঁরই প্রশংসা এটা দ্বিচারিতা নয় কি? যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখনই মোদি বিরোধিতার রাস্তা থেকে সরে আসার আশু সম্ভাবনা নেই । গত কয়েক বছরে তিল তিল করে মোদি বিরোধী হিসাবে তিনি যে মাটি তৈরি করেছেন তাকে এত সহজে নষ্ট করতে দেবেন না । সেক্ষেত্রে এ প্রশস্তি একজন প্রশাসনিক প্রধানের । যাকে দিল্লিতে দরবার করে রাজ্যের জন্য দাবি আদায় করে আনতে হবে । তাই তাঁর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও আবার প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতাও আছে । একে রাজ্যের মাথায় বিপুল দেনার বোঝা, তার উপর লম্বা-চওড়া কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ বাকি । বাবা-বাছা করে সেই বকেয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাটাও একজন সফল মুখ্যমন্ত্রীর কাজ । আর সে কারণেই হয়তো আক্রমণের পরেও সুর নরম । সবচেয়ে বড় কথা গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে টানা কোভিড প্যানডেমিক গৌরী সেনের ভান্ডারেও টান ফেলতে বাধ্য । এখানে তো আবার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার নামে একাধিক নতুন প্রকল্পের খরচ হয়েছে । আর তাই একদিকে যেমন নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে মোদি বিরোধীতা করতে হচ্ছে । একইভাবে প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রশস্তিও গাইতে হচ্ছে । এখান দেখার এই আক্রমণ বা প্রশস্তি দুইয়েরই ফল সোমবার থেকে শুরু হতে চলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরে কীভাবে দেখা দেয় ।