কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজ্য সরকারের কথা না শুনে রাজ্যপালের কথা মেনে চললে, অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করা হবে ৷ শিক্ষাব্যবস্থায় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের পালটা জবাব দিতে সরকার প্রয়োজনে এই পথে হাঁটবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দেগে মমতা বলেছেন, "টাকা দেব আমরা, পলিসি করব আমরা ৷ আর আপনি খবরদারি করবেন ! দেখি কাকে আপনি বেতন দেন !"
মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসে শিক্ষারত্ন প্রদান অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্যপাল নিয়োগ করতে পারেন, কিন্তু উপাচার্যদের বেতন দেয় রাজ্য সরকারই ৷ তাই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজ্যপালের কথা শুনলে রাজ্য সরকার অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তিনি এ দিন বলেন, "এখানে বসে আছেন মাননীয় রাজ্যপাল ৷ তিনি বলছেন তিনি সব দেখবেন ৷ আমি বলি আইন মেনে চলুন ৷ যদি তিনি মনে করেন যে তিনি সবকিছু করবেন, তাহলে নির্বাচিত সরকারের কোনও দরকার নেই ৷ আপনি নমিনেটেড পোস্ট ৷ আপনি মনে করেন আপনি মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও বড় ৷ আপনি শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আপনার কথা শুনলে আমি অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব ৷ টিট ফর ট্যাট ৷ এ ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ ৷ দেখি কাকে আপনি বেতন দেন ! টাকা দেব আমরা, পলিসি করব আমরা ৷ আর আপনি খবরদারি করবেন !"
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, "কেউ ভয় পাবেন না ৷ টাকা যখন আমরা দিই ৷ উনি নিয়োগ দেবেন ৷ অ্যাপয়েন্ট লেটার নিয়ে বসে থাকুন ৷ টাকা তো আমরা দেব ৷" এ বিষয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল, প্রাক্তন ভিসি ও রেজিস্ট্রারদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে বৈঠক করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর হুংকার, "কার কী করার আছে আমরা দেখছি ৷"
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে পারে শাসক দল
রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছেমতো উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ফের রাজ্যপালের তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর কথায়, "নিয়ম এটাই যে, সরকার যে সার্চ কমিটি পাঠাবে, তার থেকে আপনি একজনকে উপাচার্য করবেন ৷ ইউজিসির নিয়ম মেনে আমরা পাঁচজনের নাম পাঠিয়েছি ৷ মধ্যরাতে হঠাৎ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চেঞ্জ হয়ে গেল ৷ কেরল থেকে একজন আইপিএস অফিসার, যাঁর কোনও শিক্ষার অভিজ্ঞতাই নেই, তাঁকে উপাচার্য করে দিল ৷ রবীন্দ্রভারতীতে একজন এক্স জাজকে উপাচার্য করা হল ৷ তিনি তো শিক্ষকতাই করেননি ৷ রাজ্যপালের বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্বর লাগানো আছে ৷ এগুলো হৃদয় বিদারণ করে ৷ আমি ওনাকে অনেকবার বলেছি, এটা করবেন না ৷"
এ দিন উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ভেবেছিলাম আজ বিতর্কিত কথা বলব না ৷ আমাদের কাছে কোনও বাধা আসেনি বলেই শিক্ষায় এতকিছু করতে পেরেছি ৷ বলছেন, শিক্ষা দফতরের রাজ্য সরকারের হাতে থাকবে না ৷ আমরা শিক্ষায় কখনও কোনও হস্তক্ষেপ করি না ৷ আপনারাই আমাদের গুরুজন ৷ আপনারাই আমাদের শিক্ষা দেন ৷ বাবা-মায়ের পরই শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের মানুষ করে ৷ আজ যাঁরা এখন গুরুজন হয়েছেন তাঁরা বাংলাকে চেনেনই না ৷"