কলকাতা, 15 জানুয়ারি: শনিবার তাঁর প্রশংসা করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ৷ বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে ৷ দেশের এক প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সেই মমতা বন্দোপাধ্যায় বললেন, "তাঁর (অমর্ত্য সেনের) উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ (Mamata Banerjee on Amartya Sen) !"
উল্লেখ্য, শনিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন অমর্ত্য সেন (Amartya Sen Praised Mamata Banerjee) ৷ আর তারপর থেকেই অমর্ত্যের এই মন্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যেভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন, তাতে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই তাদের মতো করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: বয়স হয়েছে চুপচাপ বসুন, অসহিষ্ণুতা নিয়ে সরব অর্মত্যকে কটাক্ষ দিলীপের
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের এই বক্তব্যকে খোলা মনে স্বাগত জানিয়েছে ৷ কিন্তু, বিজেপি নেতাদের তরফ থেকে এই নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে ৷ দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই মন্তব্যের জন্য পালটা অমর্ত্যকেই আক্রমণ করেছেন ! বাংলার কৃতী সন্তানকে 'বিদেশি' বলে সম্বোধন করেছেন তিনি ! অন্যদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান সরাসরি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে 'নো ভ্যাকান্সি' ! রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আরও এক ধাপ এগিয়ে কার্যত ভবিষ্যৎবাণী করেছেন ! তাঁর কথায়, "এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তাঁর জীবদ্দশায় মমতা বন্দোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে পাবেন না ! তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, নরেন্দ্র মোদিই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন !"
এই প্রেক্ষাপেট বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন ৷ তবে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যে 'যোগ্যতা'র কথা বলেছেন, তা নিয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি মমতা ৷ বদলে তিনি বলেন, "অমর্ত্য সেন বিশ্ববরেণ্য পণ্ডিত, আমাদের গর্ব ৷ তাঁর পর্যবেক্ষণ আমাদের পথ দেখায় ৷ তাঁর উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ ৷"
এরই সঙ্গে মমতা যোগ করেন, "দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর (অমর্ত্য সেনের) পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চয় সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে ৷ বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান এবং গুরুত্ব অমর্ত্য সেন বুঝেছেন বলেই এই ব্যাপারে তিনি তাঁর বক্তব্য জানিয়ে সকলকে সজাগ করতে চেয়েছেন ৷ বিজেপি শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরই আঘাত হানছে, তা নয় ৷ উপরন্তু, যেসব রাজ্যে বিরোধী দলের সরকার রয়েছে, সেখানে তারা নানাভাবে দলীয় এবং কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ হানার চেষ্টা করছে ৷ এই পরিস্থিতিতে অমর্ত্য সেন তাঁর পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে বিরোধী দলগুলির আগামী কর্তব্য সম্পর্কে কিছুটা দিকনির্দেশ করেছেন ৷ সেখান থেকে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত ৷"
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য মমতা, মুখ্যমন্ত্রীকে দরাজ সার্টিফিকেট অমর্ত্য সেনের
এই নিয়ে কথা বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনও ৷ তিনি বলেন, "আমাদের গর্ব, দেশের গর্ব, বাংলার গর্ব প্রথিতযশা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যথার্থ উপলব্ধি করেছেন ৷ বিজেপির একনায়কতন্ত্র থেকে বাঁচতে গেলে যদি কোনও একটি মুখের উপর ভরসা করতে হয়, তাহলে তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷"
অন্যদিকে, রবিবার দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "অমর্ত্য সেন বিশ্লেষণ দিচ্ছেন, আর তা নিয়ে মন্তব্য করার জন্য দিলীপ ঘোষ যে সাহস দেখাচ্ছেন, এটা দেখেই আমি বিস্মিত ! দিলীপ ঘোষের জেনে রাখা উচিত, একদলীয় শাসনের পর আমাদের দেশে বহুদলীয় শাসন কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে জাতীয় দলগুলি এককভাবে আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না ৷ তার বিকল্প হিসাবে এই ছোট দলগুলির জোট উঠে আসছে ৷ এখানে সবথেকে বড় হল, দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা ৷ একাধিক রাজ্যের ছোট দলগুলি যদি সঙ্গবদ্ধ হয়ে সরকার গড়ে, সেটা তো অসম্ভব কিছু নয় ৷"