কলকাতা, 8 মে: জগদীপ ধনকড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদ থেকে চলে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সে ভাবে মুখ খুলতে দেখা যায়নি । বরং সাম্প্রতিক অতীতে রাজভবনও সরকারের মধ্যে সুসম্পর্কের একটা ছবি তুলে ধরেছিল । যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, অতি সম্প্রতি এই সম্পর্ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঠান্ডা যুদ্ধের । অবশেষে রাজ্যপাল নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন মমতা । রবীন্দ্রভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের করা প্রতিক্রিয়ার পালটা জবাব দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন সমাবর্তনের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, রাজ্যে আইনি বা সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে তিনি শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের মতো চুপ করে বসে থাকবেন না । জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "তাহলে কি করবেন, চাকরি খাবেন ?" হঠাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী যে এভাবে রাজ্যপাল সম্পর্কে এমন প্রতিক্রিয়া দেবেন কেউ ভাবতেও পারেননি । সাম্প্রতিক অতীতে সিভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হওয়ার পর রাজভবনের লনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালের বাংলায় হাতে খড়ির অনুষ্ঠানে বর্ণপরিচয় এবং সহজ পাঠ উপহার দিতে দেখা গিয়েছিল ৷ আবার রাজ্যপালকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিলিট প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়শী প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছিল ৷ এর পরে তিনি এই জবাব দেওয়ায় ভ্রু কুঁচকেছে রাজনৈতিক মহল ।
রাজ্যপালকে নিয়ে এই মুহূর্তে সংঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ যে শিক্ষাক্ষেত্র, তা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আরও একবার প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করা নিয়ে সরকারের পাঠানো বিল আটকে রাখা নিয়ে এ দিন তিনি রাজ্যপালকে নিশানা করেছেন । রাজ্যপাল প্রসঙ্গে ঠিক কী বলেছেন মমতা ? তিনি বলেন, "যখন রাজ্যপালকে আচার্য রাখা হয়েছিল তখন রাজ্যে মাত্র দশটা বারোটা ইউনিভার্সিটি ছিল । এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, তাই বিষয়টা নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ রয়েছে ।"
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, আচার্যের চেয়ারটা শ্রদ্ধার, তবে আলংকারিক । বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয় চালায় উচ্চশিক্ষা দফতর । মমতার কথায়, "আমিও কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করি না । এ কথা আমিও বলতে পারি না আমার কথা না শুনলে আমি অ্যাকশন নেব । আমরা যেন প্রত্যেকেই মনে রাখি, আমাদের প্রত্যেকের একটা সীমাবদ্ধতা আছে । রাজ্যে এখন 42টা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে । সেই পুরনো প্রথা মেনে একই নিয়ম চলছে ৷ এখন তো একই নিয়ম চলতে পারে না । এই নিয়মটা যখন তৈরি হয়েছিল, তখন মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল । এখন হিউজ বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে । প্রত্যেককে যদি বলেন সাত দিনের মধ্যে হিসেব দিতে হবে না হলে ব্যবস্থা নেব, এমনটা হতে পারে না ।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উপাচার্যরা এখন ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন, তাঁদের পরীক্ষা নেবেন, নাকি তাঁর কাছে গিয়ে প্রতিদিন হিসেবে দেবেন । মমতার মতে, হিসেব বাস্তবেই যদি দিতে হয়, সেটা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে । রাজভবনকে নয় । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "রাজ্য সরকার এমন কিছু করে না, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা বিপদে পড়েন । আমরা প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনভাবে চলার পক্ষে ।"
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমার মনে হয় রাজ্যপালকে কেউ ভুল বোঝাচ্ছেন ৷ আমি বলব, আপনি চান্সেলর । এই চ্যান্সেলর নিয়ে আমরা বিল তৈরি করে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিলাম । নয় আপনি ওটাকে সমর্থন করবেন অথবা ফেরত পাঠাবেন । তিনি সমর্থনও দেননি, আবার ফেরতও পাঠাননি । আমি বলব, যদি বিলটা পছন্দ না হয় আমাদের ফেরত পাঠান । যাতে আর একবার আমরা বিলটা বিধানসভায় পাশ করতে পারি । অনেক বিধানসভা বিলটাকে পাশও করেছে ।"
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে শেক্সপিয়রের হ্যামলেট হয়ে বসে থাকব না, কড়া বার্তা রাজ্যপালের