কলকাতা, 14 অগস্ট: দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টর সাংবিধানিক বেঞ্চের নির্দেশ উপেক্ষা করে সংসদে বিল নিয়ে এসেছে কেন্দ্র। আর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সোমবার তা নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্টতই অভিযোগের সুরে জানান, প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটিতে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে বসানো হচ্ছে, যাতে ইভিএম হ্যাক করা যায় ৷ একই সঙ্গে, নিয়োগ কমিটি থেকে যেভাবে দেশের প্রধান বিচারপতিকে সরানো হয়েছে তা লজ্জাজনক বলেও ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
সোমবার বেহালায় প্রাক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে একের পর এক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তির ছোঁড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একদিকে যেমন তিনি এদিনও 'ইন্ডিয়া' জোটের পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছেন, তেমনই রীতিমতো হুঙ্কার ছেড়েছেন, এই স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি শেষবারের মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন ৷ এরপরই কেন্দ্রের আনা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিলের তীব্র বিরোধীতা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি এদিন বলেন, "বিচারের প্রতি এখনও আমাদের শ্রদ্ধা আছে ৷ ওরা (বিজেপি) যদিও সবাইকে ভয় দেখায় ৷ ভয় দেখিয়ে সব কেড়ে নেয় ৷ আইনমন্ত্রক থেকে বিচারপতিদের নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ এই কেসে এই রায় দিতে হবে ৷ তারপরও কিছু বিচারপতি আছেন যারা নির্ভয়ে কাজ করেন ৷ তাদের উপরও অবশ্য অঙ্গুলি হেলন করার চেষ্টা করা হয় ৷" মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে বসিয়ে দিতে হচ্ছে ইলেকশন কমিশনার নিয়োগ কমিটির মাথায় ৷ যাতে ইভিএম হ্যাক করা যায়, লুঠ করা যায় ৷ এটা চরম লজ্জার ৷"
তবে এই প্রথম নয়, এর আগে যখন কেন্দ্র বিল আনে লোকসভায় সেদিনও টুইট করে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ টুইটারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, "যে সময় গোটা দেশের উচিত বিচারব্যবস্থার কাছে মাথা নত করা, সে সময় কেন্দ্র অরাজকতা আর নৈরাজ্যের কাছে মাথা নত করছে।" তিনি আরও লিখেছিলেন, "মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন সদস্যের কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে একজন মন্ত্রিসভার সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছি।"
আরও পড়ুন: যাদবপুর এখন আতঙ্কপুর, ছাত্রের রহস্যমৃত্যু নিয়ে মমতার নিশানায় মার্কসবাদীরা
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা করছেন, বিজেপির ভোট ম্যানিপুলেশনের প্রভাব পড়তে পারে বুঝতে পেরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। দেশ বাঁচাতে বিচারালয়কে এগিয়ে আসার ডাকও দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত নয়া এই বিলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্যানেলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নামই থাকছে না। তার বদলে 'দ্য চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনার্স (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশন অফ সার্ভিসেস অ্যান্ড টার্ম অফ অফিস) বিল, 2023'-এ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষমতা থাকছে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সরকার মনোনীত এক মন্ত্রীর প্যানেলের হাতে।