কলকাতা, 9 মার্চ: বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ভাঙ্গড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, তৃণমূল নেতৃত্বের আর ফুরফুরা শরিফে দরবার করে কোনও লাভ হবে না ! ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে (Nawsad Siddique comment in Assembly) ! এই দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙ্গড়ে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহত দেওয়া হতে পারে আরাবুল ইসলামকে ৷ তাঁর বদলে দায়িত্বে আসতে পারেন অন্য কেউ ৷ এদিকে, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভরাডুবির (Sagardighi Bypoll Result 2023) পর সংখ্যালঘুদের মন বুঝতে পাঁচ সদস্যের কমিটি (TMC Five Members Committee) গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ এই কমিটি একদিকে যেমন সাগরদিঘির নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে কাঁটাছেড়া করবে, একইসঙ্গে খতিয়ে দেখবে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা শাসকদলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কিনা ! যদি তা ঘটে, তাহলে এরও কারণ অন্বেষণ করতে হবে ৷
এদিন বিধানসভায় সাগরদিঘি উপনির্বাচনের বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে বসেছিল মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন, গোলাম রাব্বানি, জাভেদ খান এবং সংসদ আখরুজ্জামানের পাঁচ সদস্যের এই কমিটি ৷ প্রথম দফায় নির্বাচনী ফলাফল পর্যালোচনার পর রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানিয়েছেন, "রাজ্যের শাসকদল সংখ্যালঘুদের সমর্থন হারাচ্ছে, এমন বক্তব্য সঠিক নয় ৷" তিনি স্পষ্ট ভাষায় এও জানিয়ে দিয়েছেন, "নওশাদ সিদ্দিকীর প্রভাব সাগরদিঘির ভোটে পড়েনি ৷ এসব সংবাদমাধ্যমের একপেশে প্রচার ! রাজ্যের এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম এসব করে আসলে সংখ্যালঘু ভোট বিভাজনের চেষ্টা করছে ! কিন্তু রাজ্যের সংখ্যালঘুরা এই কৌশল ধরে ফেলেছেন ৷ তাই তাঁরা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন না ৷"
সূত্রের খবর, গত সোমবার এই পাঁচ সদস্যের কমিটির সঙ্গে বৈঠকের সময়েই মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ভাঙড় নিয়ে শীঘ্রই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন ৷ মনে করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমের পর ভাঙড়ের বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করবেন মমতা ৷ সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের মন বুঝে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে আরাবুলকেও ৷ তবে, শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ঠিক করবেন একমাত্র দলনেত্রী ৷ শোনা যাচ্ছে, আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে যে অশান্তি হয়েছিল, তাতে আরাবুলের ভূমিকা কী ছিল, তা দলের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ সেই তথ্য হাতে আসার পরই আরাবুলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা ৷
সংশ্লিষ্ট পাঁচজনের কমিটির অন্যতম সদস্য জাভেদ খান এই প্রসঙ্গে বলেন, "বাংলার সংখ্যালঘুরা এখনও যদি কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে 100 শতাংশ বিশ্বাস করেন, তাহলে তিনি হলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রাজ্যে তাঁর কোনও বিকল্প নেই ৷ নওশাদ সিদ্দিকী সংবাদ মাধ্যম অনেক কথা বলছেন ৷ আমি এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না ৷ কিন্তু এটি স্পষ্ট যে বাংলার সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস শুধুমাত্র একটি নির্বাচনে প্রতিফলিত হয় না ৷ মমতার প্রতি সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস অটুট রয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: মমতার অবর্তমানে অভিষেককে খুঁজে পাওয়া যাবে না, মন্তব্য ত্বহা সিদ্দিকির
প্রসঙ্গত এদিন সকালেই ভাঙড়ের বিধায়ক সাগরদিঘির ফল এবং তৃণমূল নেতৃত্বের ফুরফুরা শরিফ যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করেন ৷ তিনি বলেন, "যে কেউ ফুরফুরা শরিফে আসতে পারেন ৷ কিন্তু কেউ যদি রাজনৈতিক জমি ফেরাতে এখানে আসতে চান, তা হলে আমি বলব, এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে ৷ পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই ৷ শাসকদলের প্রকৃত চেহারা মানুষের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে ৷" মনে করা হচ্ছে, নওশাদ সিদ্দিকীর এই মন্তব্যের পালটা জবাব দিতেই উপরোক্ত কথাগুলি বলেন জাভেদ খান ৷
এদিকে, বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে বসবে পাঁচ সদস্যের সংশ্লিষ্ট কমিটি। দু'দিনের আলোচনার ফল মিলিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হবে ৷ সেই রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে দলের সুপ্রিমোর হাতে ৷