কলকাতা, 4 জুন: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বাংলার 62 জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে ৷ এমনই পরিসংখ্যান দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ মৃতদের জন্য ইতিমধ্যেই পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এবার আহত না-হলেও ঘটনার আকস্মিকতায় ট্রমায় থাকা যাত্রীদের জন্য সাহায্যের ঘোষণা করল রাজ্য সরকার ৷ রবিবার মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুর্ঘটনায় আহত তেমন না-হলেও এর ফলে মানসিকভাবে অনেকেই আঘাতপ্রাপ্ত ৷ তাদেরও 10 হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করবে সরকার ৷ একইসঙ্গে সেই সংখ্যাটাও নেহাত কম নয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত রাজ্যের 62 জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যা যাদের সনাক্ত করা গিয়েছে তাদের। কিন্তু যাদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি, সেই সংখ্যা প্রায় 182 বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লুকোনো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, শনিবারই রেল দুর্ঘটনার পর বালাসোর পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পাশাপাশি তিনি হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। এরপর রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলাম। আমরা মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে অফিসারদেরও একটি টিম পাঠিয়েছি।" দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে দাঁড়াতে প্রায় 150 টা অ্যাম্বুলেন্স, 50 জন চিকিত্সক এবং উদ্ধারকারী বাস এ রাজ্য থেকে গিয়েছিল বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের তরফে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় যারা বিশেষ আহত হননি অথচ ট্রমার মধ্যে রয়েছেন তাদের জন্য আলাদা ভাবনা রয়েছে রাজ্যের। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, তাদের এককালীন 10 হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী তিন মাস তাঁদের দু'হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সঙ্গে ত্রাণ সামগ্রীও দেওয়া হবে।
এদিন মমতা বলেন, "দুর্ঘটনার খবর আসার পর থেকেই ওড়িশা সরকারের সঙ্গে আমরা সমন্বয় রেখে উদ্ধারের কাজ চালিয়েছি।" তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার উদ্ধার কাজে যতটা না হাত লাগিয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করেছে ৷ উদ্ধারের কাজটা আসলে করেছে দুই রাজ্যের সরকার। এদিন এ রাজ্যের হতাহতের সংখ্যা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা 62 জন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে এই সংখ্যাটা তাদের, যাদের এখনও পর্যন্ত সনাক্ত করা গিয়েছে। তবে এই সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। চিহ্নিত বা শনাক্ত করা যায়নি এমন মৃতের সংখ্যা 182 বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, এই মুহূর্তে আহত 206 জনকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে এনে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ওড়িশার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন 73 জন। আর 56 জনকে প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রেলকে বেচে দেওয়ার ছক কষছে কেন্দ্র, বালাসোর বিপর্যয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত মমতা
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই দুর্ঘটনার পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও এদিন তুলে ধরেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওড়িশা থেকে উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা করে ইতিমধ্যে প্রায় 800 জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এদিন আরও একবার রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা।