কলকাতা, 27 জুন: স্কুলে স্কুলে আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট নিয়ে আগ্রহ থাকলেও মৃৎশিল্পের প্রতি অনুরাগ দেখা যায় না ডিজিটাল যুগের শিশুদের ৷ এমনকী কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী পরিবারের ছেলেমেয়েরাও এই কাজ থেকে সরে যাচ্ছে । এ রকম আবহে মৃৎশিল্পের প্রতি উৎসাহ বাড়াতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এই শিল্পের পাঠ দিচ্ছেন কুমোরটুলির এক দিদিমণি ৷ মালা পালের পাঠশালায় মূর্তি গড়ার কাজ শিখছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েরা । এদের বেশিরভাগই আসে এমন পরিবার থেকে যাদের মৃৎশিল্পের সঙ্গে কোনও যোগ নেই ৷ তারা সবাই এই শিক্ষিকার অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যতে মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার স্বপ্ন দেখছে ।
কুমোরটুলির বনমালী সরকার স্ট্রিটের একটি ঘোলাটে অন্ধকার ঘরে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মালা পাল । এখন সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা 50 । ছাত্রছাত্রী ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় মালা পাল পাঠশালা স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন । কুমারটুলির কারিগর সমিতি সংলগ্ন রবীন্দ্র সরণির একটি বড় ঘরে আপাতত ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা । মালা পাল জানান, নতুন প্রজন্মের এই ছেলেমেয়েরা শুধু কলকাতার নন । কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলি থেকেও আসতে শুরু করেছে । শিক্ষার্থীরা 5 থেকে 17-18 বছর বয়সি । সপ্তাহে চার দিন ক্লাস হয় । সোমবার, বুধবার, শনিবার এবং রবিবার ৷ বিকাল তিনটে থেকে 4.30টা পর্যন্ত ।
আরও পড়ুন: কুমোরটুলি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে এবার কুলিদের মুখেও স্বস্তির ছাপ
মালা পালের কথায়, “মূর্তি তৈরিতে অনেক দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রম লাগে । কিন্তু এই শিল্প যথেষ্ট সম্মান পায় না । প্রতিমা পূজা আমাদের সংস্কৃতির একটি অন্তর্নিহিত অঙ্গ এবং এটি অব্যাহত থাকবে । তাই আমি মনে করি আমাদের কর্তব্য, এই শিল্পকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা । যাতে তারা উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে । আমার স্কুল সেই দিকে একটি ছোট পদক্ষেপ । হাতেকলমে মূর্তি তৈরি শিখতে গিয়ে বাচ্চাদের আনন্দের সীমা নেই ।"
বছর বাহান্নর মালা পাল মৃৎশিল্পের জন্য একদিন ঘর ছেড়েছিলেন । ভিন রাজ্যে কাজ শিখে কলকাতায় ফেরেন তিনি । এখন কুমোরটুলি তথা বাংলার মৃৎশিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম । প্রতিবছর পুজোয় ভিন দেশে পাড়ি দেয় তাঁর তৈরি মূর্তি । এ বছরও জার্মানি পাড়ি দিচ্ছে মালা পালের গড়া দুর্গা মূর্তি । ইতিমধ্যে 175টির বেশি পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে আছে । নতুন করে জাতীয় স্তরের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার আভাসও পেয়েছেন তিনি । তবে এখনই তা তিনি খোলসা করতে চাননি ৷ সরকারি সহায়তা পেলে মৃৎশিল্পের ভবিষ্যৎ আরও দৃঢ় ভাবে গড়ে তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন মালা পাল ৷