কলকাতা, 27 অক্টোবর: প্রতিবছর দুর্গাপুজোর (Durga Puja) দিনগুলিতে শহরে বাড়তি যানজট এড়াতে পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও ট্রেলারের ক্ষেত্রে শহরে প্রবেশ এবং বেরোবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় (No Entry on Goods Vehicle) । তবে এই বছর কালীপুজো এবং তারপর ছট পুজো উপলক্ষেও পণ্যবাহী যানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন ট্রাক মালিকরা (Truck Owners) ।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর দুর্গাপুজোয় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে শহরে পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ এবং বেরোবার সময়সীমা । অন্যদিকে অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এই নিষেধাজ্ঞা, যা চলেছে একেবারে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত । এবার আবারও ট্রাফিক বিভাগের তরফে থেকে কালীপুজোর (Kali Puja) সময় অর্থাৎ 24 অক্টোবর থেকে শুরু কালীপুজোর ভাসান অর্থাৎ 28 অক্টোবর পর্যন্ত এবং ছটপুজোর জন্য 29 এবং 30 অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিফিকেশন প্রকাশ করা হয়েছে ।
নির্দেশিকা অনুসারে, এই দিনগুলিতে সকাল 8টা থেকে শুরু করে ভোর 4টে পর্যন্ত শহরের কোনও পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে না । শুধুমাত্র দু’ঘণ্টা অর্থাৎ ভোর 4 থেকে সকাল 6টা পর্যন্ত ট্রাক বা লরি তাদের গন্তব্যে মাল খালাস করতে পারবে ।
এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়েছেন ট্রাক মালিকরা । আগে দুর্গাপুজোর সময় রাত 12টার পর থেকে সকাল 8টা পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারতো ট্রাক ও লরি । তবে এই বছর দুর্গাপুজোর সময় থেকেই নো এন্ট্রির দিন যেমন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তেমনই ট্রাক শহরের মধ্যে চলাচলের সময়ও অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । অন্যদিকে আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকতো বছরে পুজোর মাত্র পাঁচ দিন । পঞ্চমী থেকে দশমী । তবে এবার তৃতীয়া থেকেই শহরের মধ্যে পণ্যবাহী যানের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে । পাশাপাশি এই বছর থেকে নির্দেশিকা জারি হয়েছে কালীপুজো এবং ছট পুজোর ক্ষেত্রেও ।
এই প্রসঙ্গে ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, "আগে এমনটা হতো না । আমরা জানি না কেন এই বছর থেকে আবার এই নতুন নিয়ম শুরু হল । এর ফলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে । কারণ, এখন বড় পণ্যবাহী গাড়ি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাল খালাস না করতে পারে, তবে সেই ক্ষেত্রে প্রায় 10 থেকে 15 হাজার টাকার লোকসান হয় প্রতিদিন । এমনিতেই গত দুই বছরে করোনার (Covid Pandemic) জন্য আমাদের ব্যবসার বেহাল অবস্থা । তার উপর যদি ট্রাকগুলো পথেই দাড়িয়ে থাকে তাহলে আরও ক্ষতি । যেই দুই ঘণ্টা সময় ট্রাকের প্রবেশ এবং বেরোবার জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই দুই ঘণ্টার মধ্যে শহরে ঢুকে মাল খালাস করে আবার বেরোতে বেরোতেই তো সময় কেটে যাচ্ছে ।"
তিনি আরও জানান যে যেহেতু একেবারে দুর্গাপুর, আসানসোল, খড়গপুর, কৃষ্ণনগর থেকে নো এন্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে তাই রাজ্যের তিনটি জাতীয় সড়কে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর এক ট্রাক । এর ফলে সেই রাস্তাগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে । এরপর আবার যখন নো এন্ট্রি তুলে নেওয়া হয়, তখন দু’ঘণ্টার মধ্যে ওই গাড়িগুলো শহরে ঢুকতে পারছে না । 34, 6 ও 2 নম্বর জাতীয় সড়কে একের পর এক প্রচুর গাড়ি দাঁড়িয়ে গিয়েছে ।
তাঁর কথায়, পচনশীল সামগ্রীর লরি এবং কিছু বন্দরের গাড়ির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ঠিকই, কিন্তু একের পর এক লরি যখন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তখন সেই লাইন ডিঙিয়ে পচনশীল সামগ্রীর গাড়িগুলিত সামনে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না । অন্যদিকে পুলিশই বা বুঝবে কী করে যে কোন গাড়িতে খাবার বা দুধ রয়েছে । এর ফলে গাড়ির মালিকদের অনেকটাই আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাবে । শুধু তাই নয় এই পণ্যবাহী গাড়ির একাধিক গাড়িতে থাকে প্রাণদায়ী ওষুধ ৷ তাই সেগুলিও শহরে বিভিন্ন দোকানে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে । দুধ, মাছ, শাকসবজি ও ফলের মতো সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
অন্যদিকে মুম্বই, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে যেই সামগ্রী পশ্চিমবঙ্গে আসে, তা আসা অনেকটাই কমে গিয়েছে । কারণ, সময় মতো মাল খালাস না হওয়ার আশঙ্কায় অন্যান্য রাজ্যের মালিকরা এই রাজ্যে মাল পাঠাতে চাইছে না ।
আরও পড়ুন: সীমান্তে এখনও আটকে বহু পণ্যবাহী ট্রাক, রাজ্যকে কড়া চিঠি কেন্দ্রের