কলকাতা, 2 ফেব্রুয়ারি: গতবছর একরাশ আনন্দ থাকলেও বিষাদের সুরে তাল কেটেছিল কলকাতা বইমেলার (Kolkata Book Fair 2023)৷ করোনার আবহে তিন টুকরো হয়েছিল লিটল ম্যাগাজিনের (Little Magazine) আসর ৷ কমেছিল তাদের জায়গা ৷ তবে এ বছর আবার তারা এক ছাতার তলায় ৷ স্বাভাবিক ভাবেই খুশি প্রকাশকরা ৷
তাঁদের কাছে বইমেলা শুধুমাত্র একটি মেলা নয় ৷ তার থেকেও অনেক বেশি কিছু । একটা গোটা বছরের অপেক্ষা শেষে আসে এই মাহেন্দ্রক্ষণ । বহু দিনের অপেক্ষার পর তাঁরা দিন গুনতে থাকেন, কবে আবার দেখা হবে বন্ধুদের সঙ্গে । হয়তো তাঁদের প্রকাশনী আলাদা, কিন্তু বইমেলার এই কয়েকদিন তাঁরা থাকেন একটা পরিবারের মতো । এই সংগঠনের নাম লিটল ম্যাগাজিন ।
প্রতি বছর বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ এই লিটল ম্যাগাজিন । বিভিন্ন প্রকাশকের নতুন-পুরনো বই নিয়ে স্টল সাজান তাঁরা । তবে গত বছর সেই স্টল থেকে শোনা গিয়েছিল বিষাদের সুর । কারণ করোনার কথা মাথায় রেখে গিল্ডের পক্ষ থেকে এই লিটল ম্যাগাজিনকে ভেঙে তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ তবে 46তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় তাঁরা আবারও একত্রিত । বইমেলার 9 নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলেই দেখা মিলবে সেই বৃহৎ লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের ।
পুরনো জায়গা পুরনো ছন্দ ফিরে পেয়ে খুশি লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশকরা । কারণ তাঁদের কাছে বইমেলা মানেই 'গেট টুগেদার'। বিক্রিবাটার পাশাপাশি চলছে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া ও বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুষ্ঠান । আর সকলে মিলে উপভোগ করছে সেটাই ।
আরও পড়ুন: মাদ্রিদ বইমেলায় থিম কান্ট্রি হিসেবে আমন্ত্রণ পেল ভারত
লিটল ম্যাগাজিনের অন্যতম প্রকাশক 'প্রাচ্য প্রাশ্চাত্য'-এর সহ-সম্পাদক বিউটি পাল জানালেন, "গত বছর ভাগ করে দেওয়ার ফলে অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম ৷ যোগাযোগ করতে পারছিলাম না ঠিক ভাবে । এ বার আবার একসঙ্গে হয়েছি ৷ যার জন্য প্রকাশক, সম্পাদক, পাঠক সবাই একত্রিত হয়েছে বলা চলে । এর ফলে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি ।"
লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত ত্রিদিবেশ চৌধুরী জানান, "একসঙ্গে হয়ে বেশ ভালো লাগছে কারণ একত্রে না বসলে আমাদের বেশ কিছু সমস্যা হয় । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লেখা সংগ্রহ। নামী সাহিত্যিক-কবিদের পাশাপাশি প্রকাশকরা একে-অন্যের লেখাও নিজেদের বইয়ে ছাপেন ৷ যেটা একসঙ্গে থাকার অন্যতম সুবিধা ৷ গত বছর সেইসব সুযোগ-সুবিধা ছিল না । এছাড়াও আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেগুলি আগের বছর আমরা পাইনি ৷ এ বছর আবার ফিরে পেয়েছি ।"
তবে কয়েকজন প্রকাশক আবার লিটল ম্যাগাজিনের ছড়িয়ে যাওয়াতেও সুবিধে দেখছেন ৷ তাঁদের মতে, পাঠকরা বিভিন্ন গেট দিয়ে ঢুকেও লিটল ম্যাগাজিনের স্টল পাচ্ছিলেন আগের বার ৷ ফলে পাঠকদের কাছে সহজেই লিটল ম্যাগাজিন পৌঁছে যাচ্ছিল । দলিত মেয়েদের নিয়ে লেখা প্রকাশনীর সম্পাদক কল্যাণী ঠাকুর বললেন, "মেলাটা এত বড় ফলে 1 নম্বর গেট দিয়ে যে ঢুকবে তার পক্ষে 9 নম্বর গেটের কাছে এসে লিটল ম্যাগাজিন থেকে কেনা হয়তো সম্ভব হবে না । তাই ছড়িয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়ায় একটা লাভও রয়েছে । যারা লিটল ম্যাগাজিন থেকে কেনেন তাঁরা এসে খোঁজ করে গিয়েছেন । বিক্রিও ভালো হয়েছিল । আমার মনে হয় যদি ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে লিটল ম্যাগাজিনে আরও প্রসার ঘটবে, তাতে ক্ষতি হবে না ।"