কলকাতা, 6 অক্টোবর : ভবানীপুর উপনির্বাচিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেকর্ড মার্জিনে জেতাতে একমাসের বেশি সময় ধরে লড়ে গিয়েছিলেন তাঁর ভাইরা ৷ মমতার নির্দেশেই দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূলের তাবড় নেতারা ৷ তাঁদের কেউ মন্ত্রী, আবার কেউ বিধায়ক ৷ তবে, এরা সবাই দিদি মমতার ভাই ৷ ভাইফোঁটায় তাঁদের ফোঁটা দেন তিনি ৷ এমনকি পুজোয় দেন নতুন জামাকাপড়ও ৷ এবার নির্বাচনে তাঁরাই ছিলেন মমতার প্রধান সৈনিক ৷ ভবানীপুরের ঘরের মেয়েকে জয়ের হ্যাটট্রিক করতে যাঁরা উদায়াস্ত পরিশ্রম করেছেন ৷ একইসঙ্গে এরা দিদির গুডবুকে বাড়তি নম্বর আদায় করে নিয়েছেন ৷
পাঁচ মাস আগে যখন ভবানীপুরে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় লড়াই করেছিলেন, তখন তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল 28 হাজার 719 ভোট ৷ সাম্প্রতিক উপনির্বাচিনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মার্জিন সেখানে 58 হাজার পেরিয়ে গিয়েছে ৷ এই ব্যবধান অন্য একটি কারণে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ৷ তা হল, এবার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল অনেক কম ৷ 57 শতাংশের কিছু বেশি ৷ কম ভোট পড়লেও রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ তাছাড়া, শোভনদেব জিতলেও কাঁটা থেকে গিয়েছিল দু’ ওয়ার্ড ৷ কলকাতা পৌরনিগমের 70 ও 74 নং ওয়ার্ড ৷ এই দুই ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল ৷ 21’র নির্বাচনে 70 নম্বর ওয়ার্ডে দু’হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূলপ্রার্থী ৷ আর 74 নম্বরে 537 ভোটে পিছিয়ে ছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷
ভবানীপুরের ভোট ঘোষণা হতেই তৃণমূল কর্মীরা হাজরা মোড়ে একটি হোর্ডিং ঝুলিয়েছিলেন ৷ তাতে লেখা ছিল, ঘরের মাঠে খেলা হবে ৷ আর ভবানীপুর তার ঘরের মেয়েকেই চায় ৷ তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল, মমতার জয়ের ব্যবধান রেকর্ড জায়গায় পোঁছে দেওয়া ৷ চেতলার কর্মিসভা থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী ৷ 63 নম্বর ওয়ার্ডে মমতা দায়িত্ব দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ৷ পাঁচ মাস আগে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এই ওয়ার্ডে লিড পেরেছিলেন 413 ভোটে ৷ এবার তা পৌঁছেছে 2 হাজার 366 ভোটে ৷ বর্ষীয়ান সুব্রত মুখোপাধ্যায় পাঁচ মাসে ওই ওয়ার্ড থেকে ভোটের ব্যবধান বাড়িয়েছেন পাঁচ গুণেরও বেশি ৷
70নং ওয়ার্ডে মমতা ভরসা রেখেছিলেন দেবাশিস কুমারের উপর ৷ রাসবিহারীর বিধায়ক কার্যত এই ওয়ার্ডে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন ৷ কারণ এই ওয়ার্ডে শোভনদেৰ পিছিয়ে ছিলেন দু’হাজারের বেশি ভোটে ৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, দেবাশিস কুমারের কাছে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্ব সামলানো বিশাল বড় চ্যালেঞ্জে ছিল ৷ প্রসঙ্গত, মঞ্চে সবার সামনে মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেবা তুই কিন্তু 70টা দেখে নিস ৷ তোর উপরে ছাড়লাম ৷’’
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের হত্যার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায়, পুর রাজনীতিতে পোড় খাওয়া দেবাশিস 2 হাজারের ব্যবধান মিটিয়ে মমতাকে দেড় হাজারের বেশি ভোটে লিড পাইয়ে দেন ৷ 72 নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধায় এবং সুব্রত বক্সিকে ৷ এই ওয়ার্ডে তৃণমূল সুপ্রিমো সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভোটের লিড নিয়েছিলেন ৷ আর তাই গত রবিবার উননির্বাচনের ফলপ্রকাশের বিকেলে ভিকট্রি সাইন দেখিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘ভবানীপুরে একটা ওয়ার্ডেও হারিনি ৷’’ প্রায় সাড়ে পাঁচশ ভোটে পিছিয়ে থাকা 74 নম্বর ওয়ার্ডে মমতা তিন স্ট্রাইকার ফর্মে দল সাজিয়েছিলেন ৷ তাঁরা হলেন, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ উপনির্বাচনের ইভিএম খুলতে দেখা যায়, পিছিয়ে থাকা 74 নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল নেত্রী প্রায় 5 হাজার ভোটের লিড পেয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: মহালয়ায় মমতার কণ্ঠে রেকর্ড করা গান ‘জননী’র আত্মপ্রকাশ
মমতা প্রচার শুরু করেছিলেন 77 নম্বর ওয়ার্ডের ষোলোআনা মসজিদ পাড়া থেকে ৷ 21’র নির্বাচনে ওই এলাকায় ভোট পড়েছিল 85 শতাংশ ৷ তাতে রাজ্যের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী লিড পেয়েছিলেন 21 হাজার 379 ভোটে ৷ এবার সেই 77 নম্বরে ভোট পড়েছে 60 শতাংশের সামান্য বেশি ৷ অর্থাৎ, প্রায় 25 শতাংশ ভোট কম পড়েছে ৷ একটা ওয়ার্ডে 25 শতাংশ ভোট কম পড়া ছেলেমানুষি ব্যাপার নয় ৷ এই ভোটগুলির কারণে অনেক হিসেব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে ৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিপুল সংখ্যক মানুষ বুথমুখী না হলেও, মমতার জয়ের ব্যবধান সেখানে অনেকটাই বেড়েছে ৷ শোভনদেবের থেকে প্রায় তিনশো’র বেশি ভোটে লিড পেয়েছেন তিনি ৷ ফিরহাদ হাকিমের নিজের ওয়ার্ড 82 নম্বরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোট পেয়েছেন ৷ শোভনদেবের বেলায় যা ছিল হাজার পাঁচেক ৷ তা এবার 12 হাজার পেরিয়ে গিয়েছে ৷ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ি যে ওয়ার্ডে সেই 73 নম্বরের দায়িত্ব ছিল খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাই কার্তিক বন্দোপাধ্যায়ের উপর ৷
আরও পড়ুন : Suvendu Adhikari : সনাতন ধর্ম ও দেশকে রক্ষা করব বলেই মন্ত্রিত্ব ছেড়েছি, বললেন শুভেন্দু
ভোটের দিন সকালে নীল পাঞ্জাবি পরে ক্যাম্প অফিসে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে কার্তিক বলেছিলেন, ‘‘টেনশন হচ্ছে একটাই, দিদির মার্জিনিটা কত হবে ? এটা আমাদের কাছে রেকর্ড ভাঙার নির্বাচন ৷’’ সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঁচ হাজারের বেশি লিড দিয়েছেন কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ প্রসঙ্গত, 2019 লোকসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় পিছিয়ে ছিলেন ৷