কলকাতা, 6 এপ্রিল: আগেই জানা গিয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রভাবশালীদের নাম নিতে কুন্তল ঘোষকে ইডির চাপ দেওয়ার প্রসঙ্গে আদালতে চিঠি পাঠিয়েছেন ধৃত এই তৃণমূল নেতা ৷ এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে পেশ করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কুন্তল বলেন,"আগে যা জানিয়েছি সেটাই এবার আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছি । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে । আমি সেই কথাই বিচারককে জানিয়েছি ।"
এদিন আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয় কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ ও তাপস মণ্ডলকে । বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে শুনানি হয় মামলার । শুরুতেই বিচারক বলেন, "টাকার বিনিময়ে চাকরি দেবার অভিযোগ । তাতে সরকারি কর্মচারীদের প্রভাব খাটানো হয়েছে । সিবিআই যদি তাদের হাজির না করেন আমি কতদিন এদের আটকে রাখব ? আমি তো সারা জীবন এদের আটকে রাখতে পারব না ৷"
এই বিষয়ে নীলাদ্রি ঘোষের আইনজীবী বিচারককে বলেন, "আমি অনুরোধ করছি আমার মক্কেলকে আটকে রাখুন কিন্তু আইনি পথে করুন । কোনও আইনি নিয়মে জেলে থাকবেন উনি ৷ বলা হচ্ছে নীলাদ্রি, তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষের বন্ধু । যদিও নীলাদ্রির বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ নেই । এমনকী তাপস বা কুন্তল কেউই নীলাদ্রির নাম বলেনি ।"
তাপস মণ্ডলের আইনজীবী বলেন, "আমায় বলছে কোনও সাহায্য করছি না । কিন্তু আমায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকেনি ।তাহলে আমায় আটকে রেখে কী লাভ ? আমি প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের কেউ নয় । সিবিআই কেস ডায়েরিতে আছে তাপস মণ্ডল টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছে । সেটা করতে গেলে তো ওই দফতরের লোক হতে হয় ৷"
আইনজীবীদের কথা শুনে বিচারক বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে জানতে চান, "ক্রমশ অভিযোগগুলো বদলে যাচ্ছে । সব সময় আপনাদের অভিযোগগুলো বদলে যাচ্ছে । আপনার কেসের মূল অভিযোগটা কী ?"
উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, "আমরা সব অভিযোগগুলো একসঙ্গে করেছি । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিক নজরে পড়েছে । আমরা নথিভুক্ত করেছি । এই কেসের জাল অনেকদূর বিস্তৃত । কুন্তল, তাপস, নীলাদ্রির কেস ডায়েরিটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন । তাতে উল্লিখিত প্রভাবশালীদের নামগুলো দেখুন । প্রকাশ্য আদালতে সেই নামগুলো বলতে পারছি না । দেখলেই বুঝবেন, ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে ।"
এরপর বিচারক বলেন, "একবার বলছেন তাপস কুন্তলকে টাকা তুলে দিত । আবার বলছেন তাপস মার্কেট থেকে টাকা নিজেই তুলত । আবার বলছেন কুন্তল মূল ষড়যন্ত্রকারী । এতো পিয়াঁজের খোলার মত তদন্ত । আপনারা কি কোনও টাকা পেয়েছেন এদের কারোর থেকে ? কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ? সিজ হয়ছে কিছু ?"
এই বিষয়ে কুন্তল ঘোষের আইনজীবী বলেন, "তদন্তকারী সংস্থা বলছে আমার মক্কেল টাকা দিয়ে চাকরি করে দিত । তাহলে একজন সাক্ষী জোগাড় করুক যারা চাকরি পেয়েছে তাঁর টাকা দিয়ে । আর একটা আবেদন জেল হেফাজতে কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে আইনজীবীর সামনে করুক ।"
সিবিআইয়ের বক্তব্য, কুন্তল ঘোষ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন । বিচারক বলেন, "আমি মানছি । কিন্তু সেই সরকারি কর্মচারী কারা জানতে চায় আদালত । বলুন আপনার মক্কেলকে । যা করার তাড়াতাড়ি করুন । অন্তত একজন দু'জনকে নিয়ে আসুন । সেটা না হলে আমার কিছু করার থাকবে না ৷ আইন সবার জন্য সমান ।"
আরও পড়ুন : প্রভাবশালীদের নাম নিতে চাপ দিচ্ছে ইডি, বিচারককে চিঠি পাঠালেন কুন্তল