কলকাতা, 30 মে : জামাত-উল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রধান সালাউদ্দিন ৷ যদিও এখনও অধরা সে । NIA, STF সহ দেশের তাবর গোয়েন্দা সংস্থার কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড । 2014 সালে বাংলাদেশ পুলিশ তার মাথার দাম ঠিক করেছিল 5 লাখ টাকা । আবদুল ওরফে বড় করিমকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা মনে করছে সালাউদ্দিন সম্পর্কে বড়সড় খবর পাওয়া যাবে । কারণ জামাত-উল মুজাহিদিন জঙ্গিদের অন্দরমহলে সালাউদ্দিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এই করিম । ঠান্ডা মাথার করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও তেমন বিশেষ তথ্য পায়নি পুলিশ । তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সাধারণ কোনও মেসেঞ্জার কিংবা মোবাইলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা হত না করিমের । কথা হতো “প্রোটেক্টেড টেক্সটে"র মাধ্যমে ।
গতকাল মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় করিমকে । প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা জানাতো না আবদুল করিম নামে মুর্শিদাবাদ থেকেই 2 জন সঙ্গীর অপারেশন চালাচ্ছে । 2017 সালে প্রথম উঠে আসে করিমের নাম । সে বছর 29 নভেম্বরের কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের FIR-এ তার নাম ছিল । 2018 সালের অগাস্ট মাসে গ্রেপ্তার হয় সে । কেরলের মালাপ্পুরমের বাঙালি কলোনি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে । তার সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে । বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের । আর তখনই প্রকাশ্যে আসে আবদুল করিম একজন নয় । গোয়েন্দারা জানতে পারে, আবদুল করিমের আরেক নাম ছোট্ট । মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায় আরেক আবদুল করিম জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত । তার কাজকর্মের ব্যাপ্তি অনেক বেশি । সামশেরগঞ্জের করিমকে বড় করিম নামে ডাকা হয় সংগঠনে । 2018 সালেই বড় করিমের বাড়িতে হানা দেয় স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । কারণ, ততদিনে গোয়েন্দারা জেনে গেছে 2017 সালের FIR-এ যে আব্দুল করিমের নাম ছিল সে আর কেউ নয়, বড় করিম । 2018 সালের সেই রেডে আবদুল করিমের সামশেরগঞ্জের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর বিস্ফোরক ও জিহাদি প্রচারপত্র, বইপত্র, বিস্ফোরক বানানোর ফর্মুলা । কিন্তু সেবার গোয়েন্দারা বড় করিমকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়নি । কোনওভাবে সে পালিয়ে যায় । কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি । গতকাল সকালে সুতির মাসির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে ।
ধৃত করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইতিমধ্যেই গোয়েন্দারা জানতে পারে মুর্শিদাবাদে এলে সালাউদ্দিন তার সামশেরগঞ্জের বাড়িতেই আশ্রয় নিত । গোয়েন্দারা নিশ্চিত সালাউদ্দিনের সঙ্গে এখনও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে করিমের । সেই সূত্র ধরেই জামাতুল মুজাহিদীনের উপমহাদেশের শীর্ষনেতার নাগাল পেতে চাইছে গোয়েন্দারা । সেই সূত্র ধরেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । আর সেখানেই জানা গেছে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সালাউদ্দিনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে জঙ্গি নেতারা ।
এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে সিম কার্ডের প্রয়োজন হয় না । শুধু ওয়াইফাইয়ের ব্যবহারে ফোনে ইন্টারনেট থাকলেই হল । মুহুর্তের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভব এই প্রোটেক্টেডটেক্সটের মাধ্যমে । অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করছে জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া । গোয়েন্দারা যেকোনওভাবে টেক্সটের সেই হিস্ট্রি বের করতে চাইছে । এজন্য লালবাজারের সায়েন্টিফিক সেলের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে । পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে । সালাউদ্দিনের পাশাপাশি ধুলিয়ান মডিউলে করিমের সঙ্গে কারা কাজ করত সে সম্পর্কেও খোঁজখবর নিচ্ছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স । আশা করা হচ্ছে, আরও কয়েকজনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সম্ভব হবে ।