কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর: অপরাধমূল কাজ থেকে দুর্ঘটনা, ঝামেলা থেকে হাতাহাতি, তথ্য আরও স্পষ্ট হবে অত্যাধুনিক ক্যামেরায় ৷ দিন থেকে রাত আরও কড়া নজরদারির ঘেরাটোপে মহানগর ৷ এ বার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মতো নজরদারি চালাতে চাইছে লালবাজার । তার জন্য বিএসএফের ব্যবহার করা অত্যাধুনিক ক্যামেরা কিনতে চলেছে কলকাতা পুলিশ ।
লং রেঞ্জ ক্যামেরা কিনছে লালবাজার
বর্তমানে সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ লং রেঞ্জ ক্যামেরা ব্যবহার করছে । মাইলের পর মাইল ফাঁকা জায়গায় কাঁটাতার পেরিয়ে কেউ বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে কি না, তা নজরে রাখতে এই ধরনের ক্যামেরা কাজে লাগে । এ বার শহরের নিরাপত্তার কাজেও এই ক্যামেরাই ব্যবহার করতে চাইছে লালবাজার । এই বিষয়ে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা একজন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক বলেন, "সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত করতে হচ্ছে কলকাতা পুলিশ বাহিনীকে । শুধু পুলিশ বাহিনী উন্নত হচ্ছে না, বরং পুলিশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে অপরাধীরা বা অভিযুক্তরা । ফলে অপরাধীদের দমনে এই প্রকারের আধুনিক পদ্ধতির ক্যামেরা চালু করতে চলেছে লালবাজার ।"
লং রেঞ্জ ক্যামেরা দিয়ে বহু দূরে নজরদারি
কলকাতা পুলিশের তরফে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে আপাতত চারটি লং রেঞ্জ ক্যামেরা কেনা হবে । এক-একটি ক্যামেরার দাম কয়েক লক্ষ টাকা । প্রথমে শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় এই ক্যামেরা বসিয়ে মহড়া দেওয়ার কাজ চালানো হবে । পরে ভালোভাবে কাজ করলে ক্যামেরাগুলি সেখানেই রেখে দেওয়া হবে ৷ তবে এই ক্যামেরাগুলি কেনার পরে শহরের কোথায় কোথায় বসানো হবে, তা নিয়ে লালবাজারের কোনও কর্তা এখনই কিছু বলতে চাননি । তবে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, রেড রোড সংলগ্ন রাস্তায় প্রথমে ক্যামেরাগুলি বসানো হবে ।
রেড রোডে বসছে লং রেঞ্জ ক্যামেরা
লালবাজারের তরফে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে শহরের আনাচে-কানাচে নজরদারি চালিতে বেশ কিছু অত্যাধুনিক মানের ক্যামেরা বসানো রয়েছে । এছাড়াও 'নির্ভয়া' প্রকল্পের অধীনে আরও কয়েক হাজার ক্যামেরা বসতে চলেছে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে । এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন , "যে ক্যামেরাগুলি ইতিমধ্যে মহানগরে রয়েছে সেগুলি দিয়ে নির্দিষ্ট কয়েক মিটার এলাকার উপরেই নজরদারি চালানো যায় । যার ফলে একটি রাস্তার গোটা অংশ কোনওভাবেই ক্যামেরার নজরে থাকে না ।" আবার এ বিষয়ে পুলিশের অপর একাংশ জানিয়েছেন, রেড রোডে বিভিন্ন দূরত্বে ক্যামেরা বসানো রয়েছে । তবে এই লং রেঞ্জ ক্যামেরা বসানো হলে আরও বেশি সুবিধা হবে ৷ লং রেঞ্জের একটি ক্যামেরার মাধ্যমেই রেড রোডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সহজে নজরদারি চালানো সম্ভব হবে ।
ক্যামেরাগুলিতে বৃষ্টির মধ্যেও মিলবে পরিষ্কার ছবি
এই ক্যামেরাগুলিতে অপটিক্যাল জুমিং লেন্স নামক একটি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে ৷ এর ফলে খুব সহজেই দূরের দৃশ্য কাছে চলে আসবে । তাও আবার চকচকে ও স্পষ্টভাবে । আবার কুয়াশা বা মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও পরিষ্কার ছবি মিলবে এই ক্যামেরায় ।
পুলিশ কর্মীদের জন্য হেলমেট ক্যামেরা
লালবাজারের তরফে কেনা হবে কিছু হেলমেট ক্যামেরা ৷ এই হেলমেট ক্যামেরা থেকেই সরাসরি ফুটেজ তোলা যাবে ৷ আর সেই ছবি বা ফুটেজ পাঠানো যাবে দফতরে । কিন্তু তা সরাসরি নয় । ক্যামেরার মধ্যে থাকবে 32 জিবি মেমরি কার্ড । তাতেই ওই ফুটেজ জমা হবে এবং পরে তা দেখতে পারবেন পুলিশকর্তারা । ক্যামেরা বসানো ওই হেলমেট দেখতে অবিকল ক্রিকেটের হেলমেটের মতোই । তাতে শুধু বাইরে থেকে লাগানো থাকবে ক্যামেরা । যা সহজে নজরে পড়বে না সকলের ।
আরও পড়ুন: নেট জগতের অপরাধ রুখতে লালবাজারের নয়া হাতিয়ার 'সাইবার সাথী'
এলাকায় কোন গণ্ডগোল বা মিটিং মিছিলে কোন ঝামেলা হলে ঘটনার ছবি সরাসরি তোলা যাবে হেলমেট ক্যামেরার মাধ্যমে । এছাড়াও কলকাতার শহরে কোন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে, সেখানে যারা ঝামেলা করছে তাদের ছবি সরাসরি উঠবে এই ক্যামেরায় । পরে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করণে সুবিধা হবে পুলিশ কর্মীদের । এই দুই প্রকারের ক্যামেরায় পুজোর আগেই কিনে ফেলার চেষ্টা করছে লালবাজার ।