কলকাতা, 4 নভেম্বর: কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের কাছেই 20 বিঘারও বেশি জমি নিয়ে অবস্থান ইংরেজ আমলে তৈরি কলকাতা পৌরনিগমের (KMC) সাউথ ধোবিখানা । চুন-সুরকির গাথনি দিয়ে ইটের প্রাচীরে ঘেরা গোটা চত্ত্বর । প্রবেশ পথে ঢুকতেই লোহার ফ্রেমে কাঠের স্লিপারে হাল্কা সাদা রঙে ইংরেজিতে লেখা ‘সাউথ ধোবিখানা’ (Health Centre in South Dhobikhan)। আর এই ধোবিখানা রক্ষা করা এখন কর্তৃপক্ষের কাছে হাতি পোষার সমান । নামমাত্র আয় হয়, তার থেকে ঢের গুণ বেশি ব্যয় । আবার পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ জমিও । তাই এ বার পড়ে থাকা জংলা জমি সাফ করে তার একাংশ নিয়ে তৈরি হবে পৌরনিগমের স্বাস্থ্যকেন্দ্র । এমনটাই প্রাথমিকভাবে চিন্তা ভাবনা করেছেন পৌরনিগমের কর্তারা ৷ কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে । সেই প্রস্তাব আদৌও অনুমোদিত হয় কি না তা ভবিষ্যতই বলবে ।
মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলে দুপাশে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ঘর টালির চালের । এখানে পৌর নিগমের শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে থাকেন । আছে একটা অফিস ঘর । খানিক এগোলেই জামা কাপড় ধোয়ার কাজ চলছে ৷ বড় বড় বাঁশে তার লাগিয়ে সার দিয়ে টাঙানো পরিষ্কার করা কাপড়-চোপড় ৷ খোলা আকাশের নিচে শুকোতে দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়েছে: ফাইল ফেলে রাখার অভিযোগ, কলকাতা পৌরনিগমের 3 আধিকারিককে শো-কজ
পৌরনিগম সূত্রে জানা যাচ্ছে, 1889 সালে এই ধোবিখানা তৈরির পরিকল্পনা হয় ৷ পরের বছর 1890 সালে অর্থ বরাদ্দ হয় । তারপর শুরু হয় কাজ । 1902 সালে সেটি চালু হয় । এখানে মোট 182টি হজ বা কংক্রিটের বাঁধন । যেখানে ধোপারা ময়লা কাপড় পরিষ্কারের কাজ করেন । চালু হওয়ার পর পর 167টি হজ ব্যবহার হত । এক একটি হজের ভাড়া ছিল দু টাকা । শ্রমিকপিছু নির্ধারিত ছিল এক টাকা । সেই সময় ধোবিখানা থেকে বছরে পৌরনিগমের আয় হত 6,068 টাকা । এখন প্রতিটি হজের জন্য মাসে 200-250 টাকা দিতে হয় । শ্রমিক পিছু 50 টাকা । নামমাত্র আয় । বিপুল জমি পড়ে রয়েছে ।
প্রত্যেকটি হজের নীচে জল ধরার জন্য চৌবাচ্চা আছে । ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কাজ । 245 জন ধোপা এখন এই ধোবিখানা ব্যাবহার করেন ।অর্থের অভাবে পৌরনিগম যে আগের মতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে না, তা ধোপাদের কথাতেই স্পষ্ট । বেশ কয়েক জনের দাবি, এখন জল পর্যাপ্ত না পাওয়াতে তাঁদের এই ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় । স্থানীয় ভাবে অলিগলিতে এই কাজ ও পরিষেবা মেলায় তাঁদের ব্যবসা আগের থেকে কমে গিয়েছে । বিরাট পরিমাণ জমি আগাছায় ভরা । এ বার সেই পড়ে থাকা জমির একাংশ নিয়ে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ । পরে প্রয়োজন পড়লে বাকি পরিত্যক্ত জমিতেও পৌরনিগমের বিভিন্ন কাজকর্ম করার ভাবনা-চিন্তা আছে বলে জানা যাচ্ছে কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে ।