কলকাতা, 22 মার্চ: এবার নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টে শোনা গেল 'খেলা হবে' স্লোগান ৷ হাইকোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন এসএসসি গ্রুপ সি'র 842 জন কর্মী ৷ সেই শূন্যপদে ওয়েটিং লিস্টে থাকা বাকিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আদালতের নির্দেশে ৷ বৃহস্পতিবার থেকে এই নিয়োগের কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার কথা ৷ এই কাউন্সেলিংয়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন চাকরিহারাদের আইনজীবীরা (SSC Group C recruitment case) ।
বুধবার এই মামলার শুনানিতেই আদালতে 'খেলা হবে' স্লোগান শোনা যায় ৷ যদিও বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এই স্লোগানের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ভর্ৎসনা করেন ও 'খেলা হবে' শব্দবন্ধটি প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন (Khela Hobe slogan at Cal HC) । যদিও এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাউন্সেলিংয়ে কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ এদিন দেয়নি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷ এদিন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতীম ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে ৷
এদিন চাকরিহারাদের আইনজীবীর তরফে আদালতে বলা হয় 'খেলা শুরু হয়েছে, খেলা হবে ।' আবেদনকারীদের যুক্তি স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি), মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধেও তো বিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন । কারণ এসএসসি'র সুপারিশ পত্র, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়োগপত্র এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকের অনুমোদন নিয়ে তবেই কাজে যোগদান করেছিলেন চাকরিহারারা । তাই এই তিন সংস্থার ভূমিকা কেন খতিয়ে দেখা হবে না, সেই প্রশ্ন তোলেন আবেদনকারীদের আইনজীবীরা ৷
চাকরি খোয়ানো প্রার্থীদের তরফে মূল্যায়নকারী সংস্থা এনওয়াইএসএ (NYSA)-এর ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলা হয়েছে আবেদনকারীদের আইনজীবীদের তরফে । কারণ উত্তরপ্রদেশ সরকারও এনওয়াইএসএ-কে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল । এদিন নিজের কম্পিউটার থেকে ওএমআর শিটের স্বাক্ষর পরিবর্তন করে এনে আদালতে দেখান চাকরিহারাদের আইনজীবী ।
অন্যদিকে আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, সিবিআই'য়ের বাজেয়াপ্ত করা ওএমআর শিট বিকৃত এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই । এটা শুধুমাত্র স্ক্যান কপি নয়, এর একটা জটিল প্রযুক্তিগত দিক রয়েছে । ওএমআর কোনও সাধারণ কাগজের টুকরো নয় । এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ প্রযুক্তি রয়েছে । এর সঙ্গে একটা উত্তরের অংশ যুক্ত থাকে, যার দ্বারা এর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয় । ওএমআর এসএসসি'র অফিসে স্ক্যান করা হয় ।
এদিন সিবিআই'য়ের আইনজীবী নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলেন, "আর্থিক দুর্নীতির সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে, মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগছে, খুব তাড়াতাড়ি মাথার সন্ধান পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী ।" এদিন আদালতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের যুক্তি, তারা সিবিআইয়ের দেওয়া ওএমআর শিট পরীক্ষা করে দেখেছে । তারপরেই তারা সুপারিশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এখন পুরনো প্যানেল থেকে যাঁদের নাম ওয়েটিং লিস্টে ছিল তাঁদের নাম কাউন্সেলিংয়ের পর সুপারিশ করা হবে ।
আরও পড়ুন: প্রোমোটার, টলিউডে যোগ, আইটি সংস্থার পর হোটেল ব্যবসার খোঁজ, অয়নের 'বহুমুখী প্রতিভা'য় অবাক তদন্তকারীরা
কিন্তু এর পালটা চাকরিহারাদের আইনজীবীদের যুক্তি, যে নিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে ফসিলে পরিণত হয়েছে, সেই প্যানেল থেকে আবারও নিয়োগ করা যায় না ! এরপর বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ব্যাঙ্গের ছলে মন্তব্য করেন, "ফসিল না, মিশরীয় ফসিল ।" আপাতত স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন করে কাউন্সেলিংয়ের উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানায় ডিভিশন বেঞ্চ ।