কলকাতা, 16 মার্চ: বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি আজ 22 নম্বরে নেমে এসেছেন ৷ ভারতের এই শিল্পপতি গৌতম আদানির পতনের নেপথ্যে রয়েছে আমেরিকার একটি শর্ট সেলিং সংস্থা হিন্ডেনবর্গ রিসার্চ রিপোর্ট ৷ 24 জানুয়ারি 32 হাজার শব্দের 106 পাতার এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ৷ তারপর শেয়ার বাজারে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে আদানিরা ৷ এ নিয়ে সংসদে বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে শাসক-বিরোধী তুমুল তরজা হয়েছে ৷ এখনও চলছে (Paranjoy Guha Thakurta at Unmasking Adani event in Press Club Kolkata) ৷
তবে অনেকের কাছে এটা অজানা যে, হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্টের বহু আগে বর্ষীয়ান বাঙালি সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা এ বিষয়ে সরব হয়েছিলেন ৷ তাঁর কথায় তেমন কোনও মূল্য দেয়নি কেউ ৷ বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি আলোচনা সভায় এসেছিলেন এই সাংবাদিক-লেখক ৷ গৌতম আদানি যখন বম্বের (অধুনা মুম্বই) জাভেরি বাজারে হিরে ব্যবসায়ী ছিলেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় পরঞ্জয়ের ৷ প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠানের ফাঁকে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে আদানির সম্পর্কে তাঁর মতামত জানালেন পরঞ্জয় ৷
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টটি নিয়ে দুনিয়ায় টানটান উত্তেজনা চলছে ৷ সেই সময় নিজের কাজ নিয়ে মুখ না খুলে এত দেরিতে কেন কথা বললেন সাংবাদিক ? এই প্রসঙ্গে পরাঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা বলেন, "আজ দেড় মাস পর আমি কেন মুখ খুললাম, কারণ এতদিন পর্যন্ত আমার উপরে গ্যাগ অর্ডার ছিল ৷ অর্থাৎ আমি চাইলেও কোথাও এ বিষয়ে কথা বলতে পারতাম না ৷ তাই আমি এতদিন পর্যন্ত কোথাও কিছু বলিনি ৷ তবে আমার মনে হয়, এবার সময় এসেছে ৷ আমি আদালতের সম্মতিক্রমে আজ আপনাদের সঙ্গে এই বিষয় কথা বলছি ৷"
আদানির সঙ্গে পরঞ্জয়ের প্রথম দেখা নিয়ে তিনি বলেন, "একদা হিরের ব্যবসায়ী গৌতম আদানি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে রকেট গতিতে উপরে ওঠেন ৷ শুধু তাই নয়, করোনাকালে যখন সারা বিশ্ব এক অজানা অতিমারির সঙ্গে লড়াই করছে, তখন ঠিক একইভাবে উল্কার গতিতে আদানি গোষ্ঠীর সম্পত্তির গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী ৷ আমার মনে হয় না ভারতের আর কোনও শিল্পপতির এত তাড়াতাড়ি এত বিপুল সম্পত্তি অধিকারী হয়েছেন ৷ ভারতীয় অর্থনীতির বহুদিকে এই আদানি গোষ্ঠী নিজেদের শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে ৷ আর এই রিপোর্টের ফলে যে কেবলমাত্র আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে ধস নামবে, এই বিষয়টি আরও বেশি আশ্চর্য করেছে মানুষকে ৷ পৃথিবীর আর পাঁচটা সভ্য দেশে এমনটা হয় বলে আমার জানা নেই ৷"
আরও পড়ুন: আদানি নয়, উদ্বেগের কারণ বিকেন্দ্রীকরণ ! দাবি এলআইসি কর্মীদের
আদানি সম্পর্কিত হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পাশাপাশি গুজরাত দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে বিবিসি তথ্যচিত্র নিয়েও তুমুল চর্চা চলছে ৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে মোদি সরকারকে টার্গেট করেই হয়তো এটি একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত ৷ শিল্পপতি গৌতম আদানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ৷ তাই রিপোর্ট ও তথ্যচিত্র কি কোনও ভাবে লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকারকে প্রভাবিত করতে পারে ? এ বিষয়ে যদিও পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার সাফ জবাব, "আমি জ্যোতিষী নই । ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না ৷ তাই এই রিপোর্ট আগামী বছর নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে করবে কি না, সেটা এক বছর আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয় ৷"
একদিকে আদানি-আম্বানিদের মতো গোষ্ঠী, অন্যদিকে দেশের আমজনতা ৷ তবে দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের কিছুটা হলেও জীবনধারণ উন্নত হয়েছে কি ? সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি সাংবাদিক ৷ তবে একটা বিষয়ে তিনি একমত, দেশের ধনীরা নিজেদের সম্পত্তি বৃদ্ধি করে আরও ধনী হয়েছে ৷ পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা বলেন, "মোদি সরকার মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন ৷ কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে যে গত কয়েক বছরে ধনী দেশের ধনী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে যে ব্যবধান সেটা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে । "