কলকাতা, 29 এপ্রিল: রাজনৈতিক মহল থেকে পাড়ার গলি, এমনকী সোশাল মিডিয়া, সবেতেই এখন একটাই আলোচনার বিষয়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দু'টি মামলা থেকে সরেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষের দু'টি মামলা থেকেই শুক্রবার শীর্ষ আদালত অব্যাহতি দিয়েছে তাঁকে ৷ মামলা যাবে হাইকোর্টের অন্য কোনও বিচারপতির এজলাসে ৷ এরপর থেকেই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আন্দোলনকারী চাকরি প্রার্থীদের পাশাপাশি হতাশা ব্যক্ত করেছেন সোমা, প্রিয়াঙ্কার মতো বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি প্রাপকরাও ৷
সমাজের একাংশের কাছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এখন আর শুধু বিচারপতি নন, দিনের পর দিন তিনি হয়ে উঠেছেন 'ভগবান'। আর সেকারণেই সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন তাঁরা কার্যত 'অভিভাবকহীন' হয়ে পড়েছেন ৷ তবে শুধুই আবেদনকারীরা নন, সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে-শুনে রীতিমতো স্তম্ভিত দীর্ঘ আন্দোলনের পর চাকরি পাওয়া সোমা, প্রিয়াঙ্কারাও। বাড়িতে বৃদ্ধা মা-বাবাকে রেখে দিনের পর দিন ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমার দিন কাটাত গান্ধিমূর্তির পাদদেশে। তাঁর চোখে ছিল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। তবে দুর্নীতির জেরে বহু বছর নিজের যোগ্য স্থান থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন তিনি।
অবশেষে সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি তাঁকে ডেকে পাঠানোর পরই সোমা দাসের নিয়োগের চিঠি আসে নবান্ন থেকে। বর্তমানে তিনি নলহাটির একটি স্কুলের শিক্ষিকা। আর সেদিন থেকেই সোমার কাছে 'ঈশ্বর' বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার তিনি বলেন, "প্রথমে সত্যি আশাহত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আর বোধহয় এই দুর্নীতির কোনও কিনারা হবে না । যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরা মনে হয় ছাড় পেয়ে যাবেন। আমার সহযোদ্ধাদের আর চাকরি হবে না। তবে এখনও কিছু মামলা তাঁর (বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) হাতে আছে দেখে একটু খুশি হয়েছি। আসলে যাঁরা ভালো কাজ করেন তাঁদের ক্ষতি করা হয় ৷ সেই চেষ্টাই এখন চলছে।"
অন্যদিকে রয়েছে প্রিয়াঙ্কা সাউ। সোমার মতো তাঁকেও দেখা গিয়ে বারবার যোগ্য জায়গা আদায়ের জন্য আন্দোলনে সামিল হতে। সেই আন্দোলনেই অবশ্য জয় হয় তাঁর। বিচারপতির নির্দেশে নিজের অধিকার ফিরে পেয়েছিলেন ঢাকুরিয়ার প্রিয়াঙ্কা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে বহুবার গিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। শুধু নিজের অধিকার আদায়ের জন্য নয়। বিচারপতির কথা শুনতে তাঁর ভালো লাগত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর কাজ মুগ্ধ করত প্রিয়াঙ্কাকে। তাই এখনও প্রিয়াঙ্কার মনে আছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম দিনের কথা।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ধর্মযোদ্ধা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, প্রশংসা অধীরের
তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর প্রিয়াঙ্কা সাউয়ের মনে হয়েছে, একজন বিচারপতির সঙ্গে অবিচার হয়েছে। তিনি বলেন, "একজন বিচারপতি যিনি নিজের শিরদাঁড়া সোজা রেখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছিলেন, তাঁর বিষয়ে এই ধরণের নির্দেশে আমরা স্তম্ভিত।" অতএব বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলা সরলেও চাকরিপার্থীরা আজও বারবার মনে করছেন তাঁর বলা কথাগুলি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, "দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এই লড়াই চলবে।"