কলকাতা, 6 ডিসেম্বর: বাবরি মসজিদ ধংসের দিনে দেশজুড়ে বিভাজন-বিদ্বেষের রাজনীতি ও কর্পোরেটতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নিয়ে কলকাতা থেকে বেনারস 'জনচেতনা যাত্রা' । 12টি বিপ্লবী, সংগ্রামী বামপন্থী সংগঠন ও গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল চেতনার ব্যক্তিবর্গের যৌথ উদ্যোগে এই 'জনচেতনা যাত্রা' কলকাতা থেকে বুধবার শুরু হয়েছে । শেষ হবে বারাণসীতে ৷ এ দিন ধর্মতলায় যাত্রা শুরুর আগে কলকাতা পৌরনিগম ভবনের পাশে জমায়েতের পর সভা ও মিছিল হয় রাজাবাজার পর্যন্ত ৷
এদিন সিপিআই(এমএল) রেড স্টার নেতা অলীক চক্রবর্তী বলেন, "বিজেপি-আরএসএসের শাসন আদানি-আম্বানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশকে এক চরম সংকটের দিকে নিয়ে চলেছে । সাম্রাজ্যবাদ তথা বহুজাতিক সংস্থার স্বার্থে নয়া অর্থনৈতিক নীতি তথা নয়া উদারবাদের নামে লাগামছাড়া বেসরকারিকরণ চলছে । উন্নয়নের নামে কর্পোরেট পুঁজির লুঠের জন্য অবাধে খুলে দেওয়া হচ্ছে জল-জঙ্গল-জমি-খনি-পাহাড় । ব্যাপক জনগণকে জবরদস্তি উচ্ছেদ করে তাদের জমি ও জীবিকা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে ও পরিবেশ বাস্ততন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করা হচ্ছে । অর্থাৎ, যারা এসব করছে তারাই এক সময় বাবরি মসজিদের স্থাপথ্য ভেঙে ফেলেছিল । তারাই এখন দেশ চালাচ্ছে । তাদের থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য আমাদের ।"
যৌথ মঞ্চের আহবায়ক কুশল দেবনাথ জানান, এই যাত্রা হুগলি, পূর্ব বর্দ্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়খণ্ড, বিহার হয়ে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে গিয়ে শেষ হবে আগামী 20 ডিসেম্বর । স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও এই উদ্যোগে সামিল হয়ে এলাকায় এলাকায় একাধিক কর্মসূচি নেবে । বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অলীক চক্রবর্তী । তৃণমূল সিপিএমকে আক্রমণ করে তাঁর দাবি, বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট একটা নির্বাচনী জোট । আজ এখানে যে ক'টা রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা কেউই সেখানে নেই । কারণ, ওরা বিজেপি বিরোধী নয় । যে যার স্বার্থে একাট্টা হয়েছে ।
কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে আক্রমণ করে অলীক চক্রবর্তীর বক্তব্য, বিগত কিছু বছর ধরে যেন দ্রুত বদলে যাচ্ছে চেনা দেশটা । রেল-বন্দর-বিমান-শিল্পক্ষেত্র প্রভৃতি সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে জলের দরে । ব্যাংক থেকে বছর বছর লক্ষ- কোটি টাকা করে ঋণ নিয়ে শোধ করছে না সরকারি পার্টির 'বন্ধু' পুঁজিপতিরা। শ্রম আইন বদলের নামে মালিকদের সুবিধা দিতে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার, রচিত হচ্ছে শ্রমিকদের পিষে মারার ব্লুপ্রিন্ ট। কৃষি আইনের নামে জনগণের উপর ভয়াবহ নীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টাকে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের জেরে আপাতত আটকে দেওয়া গেলেও, কৃষকদের দুর্দশা বাড়িয়েই চলেছে এই সরকার ।
তাঁর কথায়, কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, ফলে চাষের খরচ বাড়ছে ৷ কিন্তু কৃষকরা পাচ্ছে না ফসলের লাভজনক দাম । এতে বহু কৃষক ঋণের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ও হচ্ছে । কৃষি সংকটের কারণে গরীব কৃষক ক্ষেতমজুররা সারা বছর কাজ পায় না । তারা কাজের সন্ধানে বাইরে যায়, এবং কোনও কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসে । বিজেপি শাসনে একদিকে যেমন ধারাবাহিক 100 দিনের গ্রামীণ রোজগার যোজনার ব্যয় বরাদ্দ কমেছে তেমনি সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পারস্পরিক দোষারোপের মাঝে এই কাজ পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, বকেয়া মজুরি পাননি বহু মানুষ ।
আরও পড়ুন: