কলকাতা, 25 ডিসেম্বর : গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে ঢুকে আজ ভোর সাড়ে 4 টে নাগাদ ক্যাম্পাস ছাড়লেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস । না, এবার আর ঘেরাও নয়। পড়ুয়াদের তোলা 64 দফা দাবি নিয়ে বৈঠক করেই 14 ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনে কাটিয়ে দিলেন উপাচার্য । গতকাল দুপুর আড়াইটে নাগাদ ক্যাম্পাসে আসেন উপাচার্য । বৈঠক শুরু হয় 3 টে নাগাদ । সেই বৈঠক শেষ হয় পরের দিন অর্থাৎ 25 ডিসেম্বর ভোর 4 টে 25 মিনিট নাগাদ । তারপরেই ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে বাড়ি যান উপাচার্য ।
ভরতি প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, ভুলভ্রান্তিতে ভরা উত্তরপত্র, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (JUMS) সমস্যা নিয়ে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (FETSU) আন্দোলনের সূত্রপাত হয় । অবিলম্বে সেই সমস্যাগুলির সমাধানের দাবি তুলে 9 ডিসেম্বর উপাচার্য সুরঞ্জন দাস সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহ-উপাচার্যকে ঘেরাও করেছিল FETSU-র সদস্যরা । সেদিন ভরতি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, ফলপ্রকাশ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য একটি কমিটি গড়ার আশ্বাস দেওয়া হলে ঘেরাও তোলা হয় ।
কিন্তু, 11 ডিসেম্বর JUMS কমিটির সেই বৈঠকের দিনও সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন সহ কয়েকজন কর্তাকে ফের গভীর রাত পর্যন্ত ঘেরাও করা হয় । পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে গিয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে চায় না বলে জানিয়ে দিয়েছিল যাদবপুরের অধ্যাপক সংগঠন JUTA । তারপরেও পড়ুয়াদের দাবিতে 23 ডিসেম্বর সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে গেলে তাঁকে, তিন ফ্যাকাল্টির ডিন ও কয়েকজন অধ্যাপককে রাত দেড়টা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখে FETSU-র সদস্যরা । পরিস্থিতি দেখে ওইদিন রাতেই পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাশ ।
আরও পড়ুন : ঘেরাও-আন্দোলনে জেরবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
কর্তৃপক্ষের তরফে পরের দিন অর্থাৎ 24 ডিসেম্বর ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল ও অ্যাডমিশন কমিটির যৌথ বৈঠক ডাকার আশ্বাসে অবশেষে উঠে ঘেরাও । কিন্তু, নিয়মের বাঁধা থাকায় ওইদিন শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, ডাকা হয় আর ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল বৈঠক । অনলাইন ও অফলাইনে মিলিয়ে এই বৈঠক হয় । তবে, 23 ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে ঘেরাও হয়ে থাকার কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য । তাই তিনি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন । পড়ুয়াদের তরফে তখন দাবি উঠেছিল, উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে এসে বৈঠক করতে হবে । পড়ুয়াদের দাবি মেনে গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে আসেন উপাচার্য ।
দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ শুরু হয় আর ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল বৈঠক । সেখানে উপাচার্যের সঙ্গে ডিন অফ সায়েন্স এবং কয়েকজন বিভাগীয় প্রধান ছিলেন । বাইরে আর্টস, সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং, তিন ফ্যাকাল্টিরই স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সদস্যরা । সাড়ে 4 টে থেকে ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বৈঠকে গিয়ে নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করে । সংখ্যার বিচারে মোট 64 দফা দাবি তোলা হয় ওইদিন । যা পেশ করতে করতেই বেজে যায় রাত সাড়ে 10 টা । তারপরে সেই দাবিদাওয়া নিয়ে চলে বৈঠক । রাত আড়াইটে নাগাদ ফের ডেকে পাঠানো হয় ছাত্রদের । তাঁদের প্রতিটি দাবি নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা জানানো হয় । 64 দফা দাবির উত্তর দিয়ে বৈঠক শেষ হয় 4টে 25 মিনিট নাগাদ । তারপরেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে পারেন উপাচার্য সহ উপস্থিত অন্যান্য আধিকারিক ও অধ্যাপকরা ।
একদিনে 64 দফা দাবি তুলে কৌশলে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখারই একটা উপায় বলে মনে করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট মহল । যদিও, উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এ-বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি । তিনি বলেন, "আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না । ভোর চারটে পর্যন্ত মিটিংয়ে ছিলাম এটুকুই বলব ।"
ছাত্রদের আন্দোলনের বর্তমান রূপ নিয়ে এর আগেও সোচ্চার হয়েছিলেন যাদবপুরের আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ওমপ্রকাশ মিশ্র। তিনি আজ বলেন, "ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ কিছু দাবির যৌক্তিকতা ছিল । আমরা মাস্টারমশাইরাও তাঁদের সেই দাবিগুলির সমর্থনেই ছিলাম । কিন্তু, আমরা দেখছি, ছাত্র সংগঠনগুলি দাবিগুলি পেশ করতে আসবার পরে তাঁরা কার্যত এটাকে ঘেরাওয়ের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে । সেটা একেবারেই কাম্য নয় । ইতিমধ্যেই আমাকে ঘেরাও করা হয়েছিল । আমার বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার, ফিজিক্যাল কনফিইনমেন্ট করা হয়েছিল। সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য মাস্টারমশাইরা, ডিনরা ঘেরাও হয়েছিলেন। গতকাল উপাচার্য ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তাঁর কাছে এই সমস্ত দাবিগুলি তাঁরা রেখেছেন। আমি আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে নিজে রাত ১২টা থেকে পৌনে তিনটে পর্যন্ত বৈঠকে ছিলাম। কিন্তু, এই দাবিগুলো এমনও নয় যেগুলো নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ করছি না। দাবিগুলিকে ছোট করছি না । কিন্তু, যে পদ্ধতিতে করা হচ্ছে সেটা ঠিক নয় । বিশেষত, এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে এই রকমভাবে যেটা করছে সেটা সমর্থনযোগ্য নয় ।"