কলকাতা, 20 মে: ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চূড়ান্ত সেমেস্টারের বহু পড়ুয়া চাকরি পেয়ে গেছেন । তাঁদের 30 জুনের মধ্যে দিতে হবে মার্কশিট । বর্তমান পরিস্থিতিতে সিট-ইন তথা সশরীরে পরীক্ষা নিয়ে ওই সময়ের মধ্যে মার্কশিট দেওয়া সম্ভব নয় । তাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পড়ুয়াদের জন্যে সশরীরে পরীক্ষার বিকল্প পদ্ধতি খুঁজতে আগেই উদ্যত হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় । এবার অন্যান্য ফ্যাকাল্টির জন্যও 'নো কন্ট্যাক্ট মোডে' পরীক্ষা নেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় । জানা গেছে, গতকাল আর্টস ফ্যাকাল্টির বৈঠকে তিনটি ছাড়া বাকি সব বিভাগ নো কন্ট্যাক্ট মোডেই পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে ।
আগামী 10 জুন পর্যন্ত বন্ধ রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলি খোলার পরই চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হবে জোরকদমে । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চিরাচরিত সিট-ইন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে । কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক বাধা দেখা দিয়েছে ।
প্রথমত, 11 জুন আদৌ প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে । প্রতিষ্ঠান খুললেও গণপরিবহন স্বাভাবিক না হলে সব পড়ুয়া ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছাতে পারবেন এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই । আবার পড়ুয়াদের জন্য হস্টেল খুলে দিলে কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে সেই বিষয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কর্তৃপক্ষ । এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট সেল ও ট্রেনিং সেল থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, 30 জুনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চূড়ান্ত সেমেস্টারের সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে । কারণ অধিকাংশ কম্পানি জুলাই মাসেই পড়ুয়াদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য জোর দিচ্ছে । তার জন্য পড়ুয়াদের 30 জুনের মধ্যে মার্কশিট লাগবে । কিন্তু 30 জুনের মধ্যে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া ও তার ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব নয় । তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের জন্য সশরীরে পরীক্ষার বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা আগে থেকেই করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বর্তমানে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে নো কনট্যাক্ট মোডে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছাড়াই চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নিতে হবে । কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হবে সেবিষয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের ।
আগামী বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠক হবে । সেখানেই বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে । শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্টস ফ্যাকাল্টির অধিকাংশ বিভাগই নো কন্ট্যাক্ট মোডে পরীক্ষা নিতে চাইছে । গতকাল আর্টসের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠকে এমনই মত দিয়েছে বিভাগগুলি । তবে, তিনটি বিভাগ সিট-ইন পরীক্ষায় রাজি ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিট-ইন পরীক্ষার বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, "এখন যে রকম পরিস্থিতি তাতে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে পরীক্ষা হয় সেটা সম্ভব নয় । এটা বাস্তব । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, ছাত্র, সব অংশীদাররাই মনে করছেন, এভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় । তাই আপাতত আমরা বিকল্প কোনও পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি । সেটা টেলিফোনিক ভাইবা হতে পারে । আবার হোম অ্যাসাইনমেন্ট হতে পারে, যা আমরা ই-মেলে পাঠাতে পারি । আবার ই-মেইল মারফত জমা নিতে পারি । যাঁরা ই-মেলে পারবেন না তাঁরা পোস্টের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন । এই রকম বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ভাবা হচ্ছে । বাস্তব হচ্ছে, চূড়ান্ত সেমেস্টারের ক্ষেত্রে নো কন্ট্যাক্ট মোড করতে হবে ।"
সশরীরে পরীক্ষা নিতে হলে পড়ুয়াদের ফিরে আসতে হবে । সেক্ষেত্রে হস্টেল খুলে দিতে হবে । সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে যাদবপুর কর্তৃপক্ষকে। এ বিষয়ে চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, "সংক্রমণ চলতে থাকলে হস্টেল খোলা বিপজ্জনক হয়ে যাবে । আমাদের হস্টেলের এক একটা রুমে চারজন করে পড়ুয়া থাকেন । সেখানে আমরা একজন করে রাখতে পারব না । সামাজিক দূরত্ব কী করে বজায় রাখা হবে? যাদবপুর আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নয় । আমরা হস্টেল পরিষেবা যাঁদের খুব দরকার তাঁদের দিই । যেমন, যাঁরা অনেক দূরে থাকেন বা যাঁরা আর্থিকভাবে দুর্বল তাঁদের দিই । কিন্তু, হস্টেলে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারব না । আবার বহু পড়ুয়া মেসে থাকেন । এই পরিস্থিতিতে মেসে থাকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । তাহলে বাইরে থেকে যে সব পড়ুয়া আসবেন তাঁরা কোথায় থাকবেন? কীভাবে পরীক্ষা দেবেন?"