কলকাতা, 17 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন নেই ৷ বৃহস্পতিবার টানা তিন ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কার্যত এক প্রকার স্বীকার করে নিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়। অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি থেকে শুরু করে ছাত্রদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা কার্যকর করতে গেলে বিভিন্ন বহিরাগত এবং প্রাক্তন ছাত্রের অনুমতি নিতে হয়। আর সেখানেই যাবতীয় মুশকিল। জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীদের এমনটাই জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্ট ৷
একই সঙ্গে, এদিন রজত রায় দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে ছাত্ররা গর্জে উঠত। বিভিন্নভাবে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হত এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে কার্যত অচল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত বলেও এদিন দাবি করেন রজত রায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই নয় জনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু শুধু পড়ুয়ারা নয় তদন্তকারীদের অভিযোগ, এই ঘটনায় কোনওভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কাজেই বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়কে তলব করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়কে ঘেরাও করে রাখার ফলে তিনি লালবাজারে হাজিরা দিতে যেতে পারেননি।
এদিন দুপুরে লালবাজারে আসেন ডিন অফ স্টুডেন্ট ৷ তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান শঙ্খ শুভ্র চক্রবর্তী-সহ গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, সেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন রজত রায় ৷ তাঁর দাবি, পড়ুয়াদের জন্যই কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যায় না ৷ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলের অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এদিন রজত রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যে আইনের শাসন থাকা উচিত তা নেই কেন ? সূত্রের খবর, জবাবে ডিন অফ স্টুডেন্ট তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, বিভিন্ন বহিরাগত ছাত্রদের আনাগোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয়। তাঁর অভিযোগ, খাতায়-কলমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায় বা কন্ট্রোল থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় আসল চালিকা শক্তি হচ্ছে প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্ররা। তাদের ভয় সেখানে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। এরপরে তদন্তকারীরা ডিন অফ স্টুডেন্ট-এর কাছে আরও জানতে চান যে, ঘটনার দিন রাত সাড়ে 10টা থেকে সাড়ে 11টার মধ্যে হস্টেলের আবাসিকরা তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কেন তৃতীয়বারের ফোন আর ধরেননি ?
আরও পড়ুন: যাদবপুরের ঘটনার জন্য 4 সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গড়ল উচ্চশিক্ষা দফতর
জবাবে ডিন অফ স্টুডেন্ট কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানিয়েছেন যে, তিনি হস্টেলের আবাসিকদের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি শুনেছিলেন। এরপর তিনি গোটা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সুপারকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্তকারীরা জানতে চান যে, একজন পড়ুয়ার এই প্রকারের অবস্থা হল, অথচ তিনি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন না ? সেই বিষয়ে কার্যত নিরুত্তর থাকেন ডিন অফ স্টুডেন্ট। প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁর বয়ান বা স্টেটমেন্ট রেকর্ড করেন তদন্তকারীরা। পরে তিনি লালবাজার থেকে বেরিয়ে যান।