কলকাতা, 7 জুলাই : আপাতত অ্যামেরিকায় গিয়ে চাকরি করতে পারবেন না বিদেশি IT ইঞ্জিনিয়ররা । এক বছরের জন্য অ্যামেরিকা প্রশাসনের তরফে সাসপেন্ড করা হয়েছে H-1B ভিসা । সাসপেনশনের তালিকায় রয়েছে L-1, H-2B ও J1 ভিসাও । এর জেরে সমস্যায় পড়েছেন ভারতসহ নানা দেশের IT কর্মীরা । বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলিই নয়, আর্থিক মন্দার মুখে পড়তে পারে অ্যামেরিকার সংস্থাগুলিও । হ্রাস পেতে পারে বহু প্রজেক্টের সংখ্যাও । সুন্দর পিচাই থেকে সত্য নাদেল্লা ইতিমধ্যে অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচা করেছেন ।
কী এই H-1B ভিসা
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের 101(a)(15)(H)-র ধারা অনুযায়ী অ্যামেরিকায় এই H-1B ভিসা দেওয়া হয় । এই ভিসার মাধ্যমে বিদেশের কর্মীদের নিয়োগ করতে পারে অ্যামেরিকার সংস্থাগুলি । মূলত চাকরির ভিত্তিতেই অ্যামেরিকায় থাকার সুযোগ পায় অন্য দেশের কর্মীরা । এই ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে অ্যামেরিকায় থাকার মেয়াদ 3 বছর । যা 6 বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে । 6 বছরের মেয়াদ শেষ হলে ভিসার জন্য ফের আবেদন করতে হয় অ্যামেরিকা প্রশাসনের কাছে ।
ভিসা সাপপেনশনের সিদ্ধান্ত
বেশ কয়েকমাস ধরেই আলোচনা চলছিল । অবশেষে ট্রাম্প সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । জানিয়ে দেওয়া হয়, 24 জুন থেকে একবছর পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হচ্ছে H-1B, L-1, H-2B ও J1 ভিসা । ভিসা বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়, দেশের কর্মীদের আরও বেশি করে চাকরির সুযোগ দেওয়া । কারণ কোরোনার জেরে অ্যামেরিকার অর্থনীতিতে বড়সড় প্রভাব পড়েছে । বাড়ছে বেকারত্বও । এই পরিস্থিতিতে বিদেশি কর্মীদের বদলে দেশের মানুষদের কর্মসংস্থানের কথা ভাবা হচ্ছে । তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভেবে দেখা যেতে পারে । যদিও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অনেকেই নির্বাচন পূর্ববর্তী কৌশল হিসেবে কটাক্ষ করেছেন । গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফ্টের মতো সংস্থাগুলির শীর্ষস্থানীয় কর্তারাও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ।
ভারতীয় IT সংস্থা, কর্মী ও অর্থনীতিতে প্রভাব
এই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে TCS, WIPRO, ইনফোসিস, HCL-র মতো দেশের বড় সংস্থাগুলি । 24 জুনই নিফটি সূচক নেমে গেছে 0.16 শতাংশে । সেদিন TCS সবচেয়ে খারাপ ওপেনিং পেয়েছিল । যার পরিমাণ 11.15 শতাংশ । ইনফোসিস, উইপ্রোর একই দশা । প্রতিবছর বহু বিদেশি ইঞ্জিনিয়ররা এই ভিসার দৌলতে অ্যামেরিকায় গিয়ে কাজে করেন । এপ্রিল মাস থেকে চালু হয় আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া । তবে বিদেশিদের মধ্যে ভারতীয় ও চিনের কর্মীদের সংখ্যা সর্বোচ্চ । সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর প্রায় 85,000 H-1B ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয় । যার মধ্যে প্রায় 75 শতাংশ ভিসা পায় ভারতের ইঞ্জিনিয়ররা । অ্যামেরিকায় যেতে হলে তাঁদের প্রয়োজন হয় H-1B ভিসা বা প্রফেশনাল ওয়ার্ক পারমিটের । কিন্তু এবার ভিসায় সাসপেনশনের জেরে আপাতত বিপাকে IT কর্মীরা । একইভাবে সমস্যায় পড়েছেন ওখানে থাকা ভারতীয় কর্মী ও তাঁদের পরিবারও । এই সবকিছু ছাপিয়ে এখন সবেচেয়ে বেশি সমস্যায় দেশের নতুন ইঞ্জিনিয়ররা । বেশ কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন তাঁরা । তাঁদের কেরিয়ারেও সাময়িকভাবে এক বড় ধাক্কা এটি ।
ভিসা সাপপেনশনের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ গুগল, মাইক্রোসফ্টের
গুগল, মাইক্রোসফ্ট থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির শীর্ষস্থানীয় কর্তারা অ্যামেরিকা প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন । এই বিষয়ে গুগলের অ্যালফাবেটের CEO সুন্দর পিচাই বলেন, "অ্যামেরিকার অভিবাসন নীতি এই দেশের উন্নতির জন্য অনেক বড় ভূমিকা নিয়েছে । তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গ্লোবাল লিডার বানিয়েছে অ্যামেরিকাকে । এই জন্যই গুগল আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়ে । কিন্তু, ভিসা নিয়ে এই সিদ্ধান্তে আমি হতাশ । আমরা সকল অভিবাসীর পাশে রয়েছি ।"
-
Immigration has contributed immensely to America’s economic success, making it a global leader in tech, and also Google the company it is today. Disappointed by today’s proclamation - we’ll continue to stand with immigrants and work to expand opportunity for all.
— Sundar Pichai (@sundarpichai) June 22, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
">Immigration has contributed immensely to America’s economic success, making it a global leader in tech, and also Google the company it is today. Disappointed by today’s proclamation - we’ll continue to stand with immigrants and work to expand opportunity for all.
— Sundar Pichai (@sundarpichai) June 22, 2020Immigration has contributed immensely to America’s economic success, making it a global leader in tech, and also Google the company it is today. Disappointed by today’s proclamation - we’ll continue to stand with immigrants and work to expand opportunity for all.
— Sundar Pichai (@sundarpichai) June 22, 2020
মাইক্রোসফ্টের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথও এই পদক্ষেপের জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন । টুইট বার্তায় তিনি বলেন, এখনই আমাদের দেশকে বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রতিভা থেকে বিচ্ছিন্ন করার সঠিক সময় নয় । আমাদের দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
-
Now is not the time to cut our nation off from the world’s talent or create uncertainty and anxiety. Immigrants play a vital role at our company and support our country’s critical infrastructure. They are contributing to this country at a time when we need them most.
— Brad Smith (@BradSmi) June 23, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
">Now is not the time to cut our nation off from the world’s talent or create uncertainty and anxiety. Immigrants play a vital role at our company and support our country’s critical infrastructure. They are contributing to this country at a time when we need them most.
— Brad Smith (@BradSmi) June 23, 2020Now is not the time to cut our nation off from the world’s talent or create uncertainty and anxiety. Immigrants play a vital role at our company and support our country’s critical infrastructure. They are contributing to this country at a time when we need them most.
— Brad Smith (@BradSmi) June 23, 2020
তাঁর টুইটের রিটুইট করেন সত্য নাদেল্লাও । একই বক্তব্য টুইটারেরও । টুইটারের মুখপাত্র জানান, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অ্যামেরিকার বৃহৎ অর্থনৈতিক সম্পদ ও বৈচিত্র্যকে ছোটো করা হচ্ছে ।
-
Statement on US high-skilled immigration proclamation:
— Twitter Public Policy (@Policy) June 22, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
"This proclamation undermines America’s greatest economic asset: its diversity. People from all over the world come here to join our labor force, pay taxes, and contribute to our global competitiveness on the world stage.
">Statement on US high-skilled immigration proclamation:
— Twitter Public Policy (@Policy) June 22, 2020
"This proclamation undermines America’s greatest economic asset: its diversity. People from all over the world come here to join our labor force, pay taxes, and contribute to our global competitiveness on the world stage.Statement on US high-skilled immigration proclamation:
— Twitter Public Policy (@Policy) June 22, 2020
"This proclamation undermines America’s greatest economic asset: its diversity. People from all over the world come here to join our labor force, pay taxes, and contribute to our global competitiveness on the world stage.
কী বলছেন IT কর্মীরা
এবিষয়ে এক IT ইঞ্জিনিয়র কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, "IT ইঞ্জিনিয়রদের ক্ষেত্রে এটা সত্যিই খুব খারাপ একটি খবর । কারণ, বেশিরভাগেরই ইচ্ছা থাকে অ্যামেরিকায় (onsite)-এগিয়ে কাজ করা । এই ভিসা জট না কাটলে শুধুমাত্র ভারত নয়, অ্যামেরিকার সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে। ওখানকার ইঞ্জিনিয়রদের দিয়ে যদি কাজ করাতে হয়, তাহলে সংস্থাগুলির অনেক বেশি খরচ পড়ে যাবে । কিন্তু, চিন বা ভারতের দক্ষ ইঞ্জিনিয়রদের নিয়ে কাজ করতে অনেক কম খরচ হয় । তাই প্রতিটি প্রজেক্টের ক্ষেত্রে যদি খরচ বাড়তে থাকে, তাহলে আগামী দিনে একাধিক প্রজেক্ট বাতিল বা স্থগিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ।"
IT ইঞ্জিনিয়র সৈকত ঘোষ বলেন, " বেশ কয়েক বছর ধরে বিদেশিদের অ্যামেরিকায় গিয়ে কাজ করার বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ওখানকার সরকার। অ্যামেরিকার সংস্থাগুলিও তাঁদের দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি থেকে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের নিযুক্ত করতে শুরু করে । ভারতীয় IT সংস্থাগুলি আগের থেকেই অ্যামেরিকার মনোভাবে আঁচ করতে পেরেছিল। তাই কয়েক বছর ধরেই H1B ভিসার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে শুরু করেছে । তবে এই সিদ্ধান্তে সমস্যা দেখা দেবে ।"
ইতিমধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন দা ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস কোম্পানিজ় (NASSCOM)বিষয়টির বিরোধিতা ও তীব্র সমালোচনা করেছে । NASSCOM-র একই বক্তব্য, শুধুমাত্র ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা নয় অ্যামেরিকা-সহ সারা বিশ্বের উপরে এর প্রভাব পড়তে পারে ।