ETV Bharat / state

বেগুনি জলের তোড় কি নবান্নের রং পরিবর্তনের পূর্বাভাস ?

রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, আজ যদি চারমুখী BJP-র এই মিছিলকে এভাবে রোখার চেষ্টা না করা হত তাহলে পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যেত । জলের সঙ্গে বেগুনি রং মিশিয়ে ছেটানো, মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো, একাধিক BJP নেতাদের হাসপাতালে পাঠানো, লাঠিপেটা, দফায় দফায় ইট-পাটকেলের বৃষ্টি - এ-সবই যেন BJP-র TRP বাড়িয়ে দিল ।

Nabanna Chalo
BJP-র নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার
author img

By

Published : Oct 8, 2020, 6:14 PM IST

Updated : Oct 8, 2020, 8:40 PM IST

কলকাতা, 8 অক্টোবর : আশঙ্কাটাই যেন সত্যি প্রমাণিত হল । BJP-র নবান্ন অভিযানকে ঘিরে যে লঙ্কাকাণ্ডের সাক্ষী থাকল মহানগর তা যেন একুশের নির্বাচনের উত্তাপকেই বাড়িয়ে দিল ।

আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন । গত লোকসভায় BJP-র রকেট গতিতে উত্থানের পরই রাজ্যজুড়ে গেরুয়া আবিরের বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়েছিল । আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মমতার তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরা যে সহজ হবে না, নবান্নের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে চাওয়া দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, তেজস্বী সূর্যদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ যেন তাই বুঝিয়ে দিল ।

প্রায় মাসখানেক আগেই রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক 'ব্যর্থতা'-র অভিযোগ তুলে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ-রা । রাজ্যে ধর্ষণ, চাকরি-শূন্যতা, প্রাইমারি ও SSC দুর্নীতি সহ একাধিক ইশুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তোলাই ছিল আজকের নবান্ন অভিযানের মূল লক্ষ্য । সেই মতো প্রস্তুতিও সারা হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু মাত্র 24 ঘণ্টা আগে রাজ্যের মুখ্য সচিবালয় থেকে যেভাবে জীবাণুমুক্তকরণের ঘোষণা করা হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বড় চমক ছিল । অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, কর্মী-নেতা-মুখ্যমন্ত্রীশূন্য নবান্ন অভিযান গেরুয়া শিবিরের কাছে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে । কিন্তু কলকাতা পুলিশ তথা রাজ্য প্রশাসন যেভাবে "বাফার জ়োন" তৈরি করে দিলীপ-কৈলাসদের রোখার চেষ্টা করল এবং লাঠিপেটা করতে শুরু করল তাতে যে BJP-রই হাত শক্ত হল, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ।

সমালোচকরা বলছেন, আজ যদি চারমুখী BJP-র এই মিছিলকে এভাবে রোখার চেষ্টা না করা হত তাহলে পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যেত । জলের সঙ্গে বেগুনি রং মিশিয়ে ছেটানো, মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো, একাধিক BJP নেতাদের হাসপাতালে পাঠানো, লাঠিপেটা, দফায় দফায় ইট-পাটকেলের বৃষ্টি - এ-সবই যেন BJP-র TRP বাড়িয়ে দিল ।

রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ মেননের মতো নেতাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে কার্যত নবান্নই তাদের প্রচারের আলোয় নিয়ে এল । আজ যেভাবে BJP-র প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে প্রথমে জলকামান, তারপর লাঠি, তারপর টিয়ার গ্যাস, শেষে গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গেল, তাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার গেরুয়া শিবিরের হাত শক্ত হল বলেই মনে করছেন অনেকে ।

BJP-র নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কলকাতা

আরও পড়ুন : দফায় দফায় লাঠিচার্জ , অবরোধ ; যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান ঘিরে দিনভর ধুন্ধুমার

নির্ধারিত সময় বেলা বারোটায় কলকাতার চার গুরুত্বপূর্ণ প্রান্ত থেকে মিছিল শুরু হয় BJP-র । হাওড়া ময়দান, হেস্টিংস, এম জি রোড-সহ প্রতিটি প্রান্তেই পুলিশি ব্যারিকেড ছিল প্রথম থেকেই । নবান্নের কয়েক কিলোমিটার দূরেই বিক্ষোভকারীদের আটকানো হয় । তারপরই শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ । প্রায় চার ঘণ্টায় পুলিশ ও BJP নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় বিক্ষোভে তপ্ত হয় মহানগরের বিভিন্ন প্রান্ত । পুলিশের তরফে অভিযোগ করা হয়, বোমা-বন্দুক নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা । পালটা বিক্ষোভকারীদের দাবি, অকারণে শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশি নির্যাতন প্রত্যক্ষ করল গোটা দেশ । BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার টুইট, "বাংলায় তৃণমূলের দিন শেষ । সেটা বুঝতে পেরেই এই বর্বোরোচিত ঘটনা ঘটাল রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশ ।" যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্যের অভিযোগ, রঙ মেশানো তরল ব্যবহার করে এক হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করল পুলিশ । যেভাবে BJP কর্মীদের লাঠিপেটা করা হল তা বুঝিয়ে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়ে গেছেন । আর এক ধাপ এগিয়ে রাজ্য BJP-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়ে নবান্ন থেকে পালিয়ে গিয়েছেন । বাংলায় স্বেচ্ছাচারী সরকার চলছে । পুলিশের কোনও প্রশিক্ষণ নেই । যেভাবে নির্বিচারে BJP কর্মীদের লাঠিপেটা করা হল তা পুলিশের ব্যর্থতাকেই প্রমাণ করে ।

তবে BJP নেতাদের এই বক্তব্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন । মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, পুলিশ যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে । দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে পুলিশ । যাতে অভিযুক্ত-বিক্ষোভকারী-আইনভঙ্গকারীদের সহজে চিহ্নিত করা যা, সেজন্যই রং ব্যবহার করা হয়েছিল । কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি । রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক মিছিলে বন্দুক-বোমা থাকে না । কেন আজকের মিছিল থেকে বন্দুক পাওয়া গেল তার তদন্ত করা উচিত ।

আরও পড়ুন : লাইভ : রণক্ষেত্র হেস্টিংস, হাওড়ায় উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র জানাচ্ছে পুলিশ

অভিযোগ, পালটা অভিযোগ চলবেই । কিন্তু বন্ধ নবান্নকে ঘিরতে গিয়ে যে ধুন্ধুমার ঘটনার সাক্ষী থাকল সবাই, তা যেন নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করল । নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ততই তপ্ত হচ্ছে, তা স্পষ্ট হচ্ছে । BJP যে ক্রমাগত তৃণমূলের উপর চাপ বাড়িয়েই চলেছে সেটাও স্পষ্ট হচ্ছে বারবার । শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই পায়ের তলা থেকে ক্রমাগত মাটি সরে যাচ্ছে তৃণমূলের । যেভাবে দলের শীর্ষ নেতারা মমতার সঙ্গ ছেড়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, তাতে ক্রমাগত চাপ বেড়েছে ঘাসফুলের উপর । পরিস্থিতি জটিল হয়েছে মুকুল রায়ের মতো এককালে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড যখন BJP-র সেকেন্ড ইন কমান্ডে পরিণত হয়েছেন । প্রায় শূন্য থেকে শুরু করা গেরুয়া শিবিরের নেতারা যেভাবে বাংলার মাটিতে মাত্র দশ বছরের মধ্যে কার্যত চালকের আসনে পৌঁছে গিয়েছেন, তা যেন ফের একবার পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের । যদিও BJP-র এই মিছিল-প্রতিবাদকে তেমন আমল দিতে রাজি নয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব । তাই সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো কেউই BJP-কে আক্রমণের পথে যাননি । পুরো কাজটাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ ফিরহাদ হাকিমকে । যেভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে ফিরহাদ হাকিম বারবার বিবৃতি দিয়েছেন তাতে যে কালীঘাটের নির্দেশ রয়েছে, বুঝতে একটু অসুবিধা হয় না । দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, "BJP-র ফ্লপ শো । লোকের ঘাটতি ঢাকতে পরিকল্পিত হামলা করেছে । পুলিশ সংযত ছিল । বাংলার মানুষ অশুভ শক্তিকে বরদাস্ত করবে না ।"

কিন্তু আজকের নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার কলকাতা কি একুশের পরিবর্তনের আভাস দিল ? যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলার রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তাঁদের মতে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় আসেনি । এগারোর নির্বাচনের আগে বামেদের শেষ ব্রিগেডে যেভাবে জনসমুদ্র প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল তাতে অতি বড় তৃণমূল সমর্থকও ভাবেননি রাজ্যে পরিবর্তন আসবে । কিন্তু এসেছিল । অর্থাৎ, বাংলার রাজনীতি বারবার প্রমাণ করেছে, রাজনৈতিক নেতারা কী ভাবছেন তা কোনওদিনই ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলে না । একটা আভাস দেয় মাত্র । আজকের জনজোয়ার - বিক্ষোভ - প্রতিবাদ - বেগুনি রং মেশানো জলকামানের তোড় কি নবান্নের রং পরিবর্তনের আভাস দিল ?

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষ করার এখনও কয়েক মাস বাকি রয়েছে ।

কলকাতা, 8 অক্টোবর : আশঙ্কাটাই যেন সত্যি প্রমাণিত হল । BJP-র নবান্ন অভিযানকে ঘিরে যে লঙ্কাকাণ্ডের সাক্ষী থাকল মহানগর তা যেন একুশের নির্বাচনের উত্তাপকেই বাড়িয়ে দিল ।

আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন । গত লোকসভায় BJP-র রকেট গতিতে উত্থানের পরই রাজ্যজুড়ে গেরুয়া আবিরের বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়েছিল । আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মমতার তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরা যে সহজ হবে না, নবান্নের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে চাওয়া দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, তেজস্বী সূর্যদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ যেন তাই বুঝিয়ে দিল ।

প্রায় মাসখানেক আগেই রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক 'ব্যর্থতা'-র অভিযোগ তুলে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ-রা । রাজ্যে ধর্ষণ, চাকরি-শূন্যতা, প্রাইমারি ও SSC দুর্নীতি সহ একাধিক ইশুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তোলাই ছিল আজকের নবান্ন অভিযানের মূল লক্ষ্য । সেই মতো প্রস্তুতিও সারা হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু মাত্র 24 ঘণ্টা আগে রাজ্যের মুখ্য সচিবালয় থেকে যেভাবে জীবাণুমুক্তকরণের ঘোষণা করা হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বড় চমক ছিল । অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, কর্মী-নেতা-মুখ্যমন্ত্রীশূন্য নবান্ন অভিযান গেরুয়া শিবিরের কাছে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে । কিন্তু কলকাতা পুলিশ তথা রাজ্য প্রশাসন যেভাবে "বাফার জ়োন" তৈরি করে দিলীপ-কৈলাসদের রোখার চেষ্টা করল এবং লাঠিপেটা করতে শুরু করল তাতে যে BJP-রই হাত শক্ত হল, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ।

সমালোচকরা বলছেন, আজ যদি চারমুখী BJP-র এই মিছিলকে এভাবে রোখার চেষ্টা না করা হত তাহলে পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যেত । জলের সঙ্গে বেগুনি রং মিশিয়ে ছেটানো, মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো, একাধিক BJP নেতাদের হাসপাতালে পাঠানো, লাঠিপেটা, দফায় দফায় ইট-পাটকেলের বৃষ্টি - এ-সবই যেন BJP-র TRP বাড়িয়ে দিল ।

রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ মেননের মতো নেতাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে কার্যত নবান্নই তাদের প্রচারের আলোয় নিয়ে এল । আজ যেভাবে BJP-র প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে প্রথমে জলকামান, তারপর লাঠি, তারপর টিয়ার গ্যাস, শেষে গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গেল, তাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার গেরুয়া শিবিরের হাত শক্ত হল বলেই মনে করছেন অনেকে ।

BJP-র নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কলকাতা

আরও পড়ুন : দফায় দফায় লাঠিচার্জ , অবরোধ ; যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান ঘিরে দিনভর ধুন্ধুমার

নির্ধারিত সময় বেলা বারোটায় কলকাতার চার গুরুত্বপূর্ণ প্রান্ত থেকে মিছিল শুরু হয় BJP-র । হাওড়া ময়দান, হেস্টিংস, এম জি রোড-সহ প্রতিটি প্রান্তেই পুলিশি ব্যারিকেড ছিল প্রথম থেকেই । নবান্নের কয়েক কিলোমিটার দূরেই বিক্ষোভকারীদের আটকানো হয় । তারপরই শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ । প্রায় চার ঘণ্টায় পুলিশ ও BJP নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় বিক্ষোভে তপ্ত হয় মহানগরের বিভিন্ন প্রান্ত । পুলিশের তরফে অভিযোগ করা হয়, বোমা-বন্দুক নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা । পালটা বিক্ষোভকারীদের দাবি, অকারণে শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশি নির্যাতন প্রত্যক্ষ করল গোটা দেশ । BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার টুইট, "বাংলায় তৃণমূলের দিন শেষ । সেটা বুঝতে পেরেই এই বর্বোরোচিত ঘটনা ঘটাল রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশ ।" যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্যের অভিযোগ, রঙ মেশানো তরল ব্যবহার করে এক হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করল পুলিশ । যেভাবে BJP কর্মীদের লাঠিপেটা করা হল তা বুঝিয়ে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়ে গেছেন । আর এক ধাপ এগিয়ে রাজ্য BJP-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়ে নবান্ন থেকে পালিয়ে গিয়েছেন । বাংলায় স্বেচ্ছাচারী সরকার চলছে । পুলিশের কোনও প্রশিক্ষণ নেই । যেভাবে নির্বিচারে BJP কর্মীদের লাঠিপেটা করা হল তা পুলিশের ব্যর্থতাকেই প্রমাণ করে ।

তবে BJP নেতাদের এই বক্তব্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন । মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, পুলিশ যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে । দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে পুলিশ । যাতে অভিযুক্ত-বিক্ষোভকারী-আইনভঙ্গকারীদের সহজে চিহ্নিত করা যা, সেজন্যই রং ব্যবহার করা হয়েছিল । কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি । রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক মিছিলে বন্দুক-বোমা থাকে না । কেন আজকের মিছিল থেকে বন্দুক পাওয়া গেল তার তদন্ত করা উচিত ।

আরও পড়ুন : লাইভ : রণক্ষেত্র হেস্টিংস, হাওড়ায় উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র জানাচ্ছে পুলিশ

অভিযোগ, পালটা অভিযোগ চলবেই । কিন্তু বন্ধ নবান্নকে ঘিরতে গিয়ে যে ধুন্ধুমার ঘটনার সাক্ষী থাকল সবাই, তা যেন নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করল । নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ততই তপ্ত হচ্ছে, তা স্পষ্ট হচ্ছে । BJP যে ক্রমাগত তৃণমূলের উপর চাপ বাড়িয়েই চলেছে সেটাও স্পষ্ট হচ্ছে বারবার । শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই পায়ের তলা থেকে ক্রমাগত মাটি সরে যাচ্ছে তৃণমূলের । যেভাবে দলের শীর্ষ নেতারা মমতার সঙ্গ ছেড়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, তাতে ক্রমাগত চাপ বেড়েছে ঘাসফুলের উপর । পরিস্থিতি জটিল হয়েছে মুকুল রায়ের মতো এককালে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড যখন BJP-র সেকেন্ড ইন কমান্ডে পরিণত হয়েছেন । প্রায় শূন্য থেকে শুরু করা গেরুয়া শিবিরের নেতারা যেভাবে বাংলার মাটিতে মাত্র দশ বছরের মধ্যে কার্যত চালকের আসনে পৌঁছে গিয়েছেন, তা যেন ফের একবার পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের । যদিও BJP-র এই মিছিল-প্রতিবাদকে তেমন আমল দিতে রাজি নয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব । তাই সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো কেউই BJP-কে আক্রমণের পথে যাননি । পুরো কাজটাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ ফিরহাদ হাকিমকে । যেভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে ফিরহাদ হাকিম বারবার বিবৃতি দিয়েছেন তাতে যে কালীঘাটের নির্দেশ রয়েছে, বুঝতে একটু অসুবিধা হয় না । দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, "BJP-র ফ্লপ শো । লোকের ঘাটতি ঢাকতে পরিকল্পিত হামলা করেছে । পুলিশ সংযত ছিল । বাংলার মানুষ অশুভ শক্তিকে বরদাস্ত করবে না ।"

কিন্তু আজকের নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার কলকাতা কি একুশের পরিবর্তনের আভাস দিল ? যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলার রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তাঁদের মতে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় আসেনি । এগারোর নির্বাচনের আগে বামেদের শেষ ব্রিগেডে যেভাবে জনসমুদ্র প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল তাতে অতি বড় তৃণমূল সমর্থকও ভাবেননি রাজ্যে পরিবর্তন আসবে । কিন্তু এসেছিল । অর্থাৎ, বাংলার রাজনীতি বারবার প্রমাণ করেছে, রাজনৈতিক নেতারা কী ভাবছেন তা কোনওদিনই ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলে না । একটা আভাস দেয় মাত্র । আজকের জনজোয়ার - বিক্ষোভ - প্রতিবাদ - বেগুনি রং মেশানো জলকামানের তোড় কি নবান্নের রং পরিবর্তনের আভাস দিল ?

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষ করার এখনও কয়েক মাস বাকি রয়েছে ।

Last Updated : Oct 8, 2020, 8:40 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.