কলকাতা, 15 মে: "ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি ৷" সোমবার এই প্রবাদটি শোনা গেল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে ৷ প্রসঙ্গ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারাণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলিকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ ৷ তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ইডি বা সিবিআই ৷ সোমবার এই বিষয়ে শুনানি ছিল বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চে ৷ সেখানেই ওঠে এল ওই প্রসঙ্গ ৷
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্রান্ত মামলা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে সরিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানে ছিল এদিন ওই মামলার শুনানি ৷ অভিষেকের আইনজীবীরা আবেদন জানিয়েছিলেন, অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক ৷ সিবিআই তাঁকে হেনস্তা করতে পারে এই আশঙ্কা প্রকাশ করে আদলতের রক্ষাকবচও দাবি করেন তাঁর আইনজাবীরা ৷ কিন্তু সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের উপরে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ ৷
এদিন মামলার শুনানিতে ইডি, সিবিআই ও চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে ওই নির্দেশের স্বপক্ষে একের পর এক যুক্তি সাজান । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কোনও একতরফা নির্দেশ দেননি বলেও আইনজীবীরা দাবি করেন । ইডি'র তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী জানান, এতবড় একটা পাবলিক স্ক্যাম । কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে তা স্পষ্ট । বিচারপতি একপেশে নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ । কিন্তু তা সত্য না ৷
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের স্বপক্ষে এদিন আদালতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় বলা বক্তৃতার কথা উল্লেখ করেন ইডি'র আইনজীবী । যেখানে অভিষেক শহিদ মিনারের সভা থেকে বলেছিলেন, "কাস্টডিতে যাঁরা আছেন তাঁদের বলা হচ্ছে আমার নাম নিতে ।" 29 মার্চ অভিষেক এই কথা বলার পরদিন কুন্তল ঘোষ আলিপুর আদালতে যাওয়ার পথে বলেন,"অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথা বলছেন মানে আমাদের নেতা আমাদের পাশে আছেন ৷" উল্লেখ্য, অভিষেকের ওই মন্তব্যের পরেই কুন্তল ঘোষ আদালতে চিঠি দিয়ে দাবি করেছিলেন, তাঁকে অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা চাপ দিচ্ছে ৷
এদিন আদলতে, ইডির আইনজীবী জানান, কুন্তল ঘোষ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একই রাজনৈতিক দলের সদস্য । যদি 29 মার্চের বক্তব্যকে না ধরাও হয় তাহলেও এই মামলায় ইতিমধ্যে তদন্ত চলছে ৷ ইডি চাইলে যে কোনও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে । সুপ্রিমকোর্ট এই মামলা শোনার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করতে পারেন না। কারণ হাইকোর্টের বিচারপতির সেই এক্তিয়ার নেই ।
আরও পড়ুন: ফের হরিশ মুখার্জি রোডে মিছিলের অনুমতি বিচারপতি মান্থার
অন্যদিকে, চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যও একই যুক্তি দেন । তাঁদের কথায়, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন আগে থেকে ঠাকুর ঘরে কে আমি তো কলা খাইনি বলে চেঁচাচ্ছেন?" উল্লেখ্য, গত মাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশের পরেই সিবিআই সমন পাঠিয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ যদিও সে যাত্রায় সুপ্রিম কোর্ট সেই সমনে স্থগিতাদেশ দেয় ৷ তবে সে স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত মাসের শেষের দিকেই শেষ হয় ৷ বর্তমানে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন ৷
অন্যদিকে, কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইয়ের তৎপরতা নিয়ে এদিন কিছু প্রশ্ন তুলেছেন, বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তিনি এদিন সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চান,"28 এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার নিষ্পত্তি করেছে । তারপর থেকে আপনারা পদক্ষেপ করেননি কেন ?" অর্থাৎ স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পরেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ কেন করা হয়নি সেই প্রশ্ন এদিন তোলেন বিচারপতি। উত্তরে সিবিআই অবশ্য জানায়, এজলাস বদল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। "এজলাস বদলের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের কি সম্পর্ক ?" পালটা প্রশ্ন করেন বিচারপতি সিনহা। এদিন ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে কোনও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত। পাশাপাশি সিবিআই'কে তাদের কাজের ব্যাপারে মঙ্গলবার একটি রিপোর্ট দিতে বলেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।