কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী 51 পীঠের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পীঠ হল কলকাতার কালীঘাট মন্দির । প্রতিদিন হাজারো ভক্তদের আনাগোনা এখানে । রয়েছে প্রচুর দোকানও ৷ তবে সরু গলি, ঘিঞ্জি এলাকায় একের পর এক দোকান, সব মিলিয়ে অপরিচ্ছন্ন এক ছবি উঠে আসে কালীঘাট মন্দির চত্বরের। আদালত ইতিমধ্য়েই নির্দেশ দিয়েছে প্রাচীন এই মন্দির চত্বর সংস্কারের (Kalighat Temple Renovation Work) ৷ আবার রাজ্য সরকারও এই মন্দিরের বাইরে দক্ষিণেশ্বরের মতো স্কাইওয়াক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ 2018 সালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । 2021 এর মধ্যে এই সমস্ত কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও মন্দিরের অভ্যন্তর সংস্কার বা স্কাইওয়াকের কাজ কোনওটাই শেষ হয়নি এখনও । কাজের গতিও একদম শ্লথ । করোনা, দীর্ঘ লকডাউনের প্রভাবও পড়েছে গোটা কাজে ৷ প্রশ্ন উঠছে কবে শেষ হবে এই কাজ ৷
আর এই ধীর গতির সংস্কারের কাজ ঘিরেই কালীঘাট মন্দির চত্বরের হকার ও অন্যান্য ব্য়বসায়ীদের মনে নানা আশঙ্কা দানা বাঁধছে ৷ মন্দির লাগোয়া হকারদের কাছেই স্টল করে দেওয়া হয়েছে । তবে এসপি মুখার্জি রোডোর মুখে যে হকাররা বসতেন তেমন প্রায় 180 জনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাজরা মোড়ের হাজরা পার্কে । ফলে তাঁদের বিক্রিবাট্টা কমেছে অনেকটাই । মন্দিরে যাওয়ার পথে বসে থাকা হকারদের গলায়ও শোনা গিয়েছে আশঙ্কা ও উদ্বেগের সুর । হাজরা পার্কে উঠে যাওয়া ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের বলা হয়েছিল 2021 এর মধ্যে এই কাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন তাঁরা আবার মন্দির সংলগ্ন এলাকাতেই ব্য়বসা করতে পারবেন ৷ কিন্তু বছর শেষ হতে চললেও এখনও কাজ শেষ হয়নি ৷ ফলে ব্যবসায়ীরা ফিরতে পারছেন না ৷ নতুন জায়গায় তাঁদের ব্যবসাও ভাল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ীরা ৷
আরও পড়ুন : 2 নম্বর বরোর একদিকে ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, অন্যদিকে আজও অবহেলিত যৌনপল্লি
আদালতের নির্দেশে কালীঘাট মন্দিরের সংস্কার কাজ করছে কলকাতা পৌরনিগম । পাশাপাশি কালীঘাট সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্যায়নের জন্য এবং স্কাইওয়াক তৈরির জন্য উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে ৷ 2018 সালে তৈরি করা পরিকল্পনা অনুযায়ী মন্দিরের ভিতর সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন এবং আলোর জন্য প্রায় 16 কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা । সেই টাকা দেওয়া হবে পৌর ও নগর উন্নয়ন দফতরের তরফে । কাজের দেখভাল করবে কলকাতা পৌরনিগম ৷ নতুন প্রকল্পে ওই এলাকার পুজোর সামগ্রী বিক্রির প্রায় 85টি দোকানকে মূল মন্দির চত্বরের বাইরে অস্থায়ী ভাবে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে । পরিকল্পনা অনুযায়ী, মূল মন্দির, নাটমন্দির, ভোগঘর, মন্দির কমিটির অফিস-সহ আরও একাধিক মন্দির এবং কুণ্ডপুকুরকে ভিতরে রেখে চারপাশ পুরো ঘিরে দেওয়া হবে । পাঁচ মিটার উচ্চতার দেওয়াল তোলা হবে । একই উচ্চতার ছ’টি প্রবেশদ্বার থাকবে। প্রবেশদ্বারগুলি তৈরি হবে কারুকার্য করা কাঠের উপর পিতলের নকশা করে । নতুন পরিকল্পনায় মন্দিরের দেওয়ালের বাইরের দিকে পুরো চৌহদ্দি জুড়ে পরপর পুজোর সামগ্রী বিক্রির স্টল করে দেওয়া হবে । প্রবেশদ্বার লাগোয়া জায়গা জুড়ে 10 মিটার চওড়া এবং 100 মিটার লম্বা নতুন রাস্তা বানানো হবে । এখন যেখানে পিচের রাস্তা রয়েছে, তার সঙ্গে নতুন রাস্তার মাঝে আরও একটি লম্বা কাঠামো গড়ে তোলা হবে । পাঁচ মিটার উচ্চতার ওই কাঠামোর মাথায় সারি সারি বড় পিতলের ঘণ্টা ঝোলানো থাকবে । এই সংস্কার কাজ শেষ করার সময় ধরা হয়েছিল দেড় বছর । বাইরে স্কাইওয়াকের ক্ষেত্রেও তেমন। তবে দু‘বছর সময় কেটে গেলেও প্রায় অধিকাংশ কাজই হয়নি । সবে মন্দির এলাকায় থাকা 85টি দোকানকে সামনেই কংক্রিটের অস্থায়ী দোকান করে দেওয়া হয়েছে ৷ মন্দিরের চারপাশের দেওয়াল জুড়ে স্থায়ী দোকান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে । তবে স্কাইওয়াক কবে হবে জানা নেই। এসপি মুখার্জি রোডের মুখে থেকে 180 জন হকারকে তুলে হাজরা পার্কে নিয়ে আসা হয়েছে । ওই জায়গায় চারতলা একটি ভবন হওয়ার কথা, তার দু‘টি তলায় হাজরা পার্কে যাওয়া হকারদের জায়গা দেওয়ারও কথা ৷ কিন্তু কবে এইসব বাস্তবায়িত হবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন এখানকার ব্য়বসায়ীরা ৷