কলকাতা, 11 ডিসেম্বর : ঐতিহাসিক আলিপুর জেল ৷ কথাই সার ৷ হতে চলল প্রায় নয় মাস, জেল এখন বন্দীশূন্য ৷ একটু একটু করে খালি হচ্ছে প্রেসিডেন্সি জেলও ৷ দুই জেলের কয়েদিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্য সংশোধনাগারে ৷ মূলত বারুইপুরে ৷ সেখানে তৈরি হয়েছে নতুন সংশোধনাগার । আলিপুর প্রেসিডেন্সি জেলের জমিতে হবে প্রোমোটিং ! থুরি গ্রিন সিটি । ইতিহাস সেখানে গা ভাসাবে গড্ডালিকা প্রবাহে । সেই লক্ষ্যে ওই দুই জেলের 100 একর জমির জন্য প্রশাসক বসানো হল রাজ্য সরকারের তরফে । গতকাল জারি হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তি । পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী জানাচ্ছে, প্রকল্প শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতির অপেক্ষা । মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সম্মতি দিয়েছেন বহু আগেই । এখন বিষয়টা সরকারি হওয়ার পর্যায়ে ।
1906 সাল । আদি গঙ্গার ধারে তৈরি হয় ইতিহাস । তৈরি হয় 21 ফুট পাঁচিল, আলিপুর জেল । স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রেপ্তার করে রাখা হতে থাকে সেখানে । কে ছিলেন না সেখানে । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত , অনন্তহরি মিত্র, প্রমথ রঞ্জন চৌধুরি , দীনেশ গুপ্ত, বিধানচন্দ্র রায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস আরও অনেকে । স্বাধীনতার পর এই জেলে তৈরি হয় নেহরু ভবন, নেতাজি ভবন । স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে ভাস্বর করে রাখতে এখানে বসেছে দেশবন্ধু, যতীন্দ্রমোহন, নেতাজিদের মুর্তি ও ফলক । সংরক্ষিত রয়েছে দেশবন্ধু বিধানচন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে রাখা অন্ধ কুঠুরি । চিহ্নিত রয়েছে অনন্তহরি, প্রমথ, দীনেশদের ফাঁসিকাঠ । জেলের প্রতি পদে রয়েছে ইতিহাস আর স্বাধীনতা সংগ্রামের না বলা কথা । এই জেলের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় "বন্দেমাতরম" ।
জেলের জমিতে প্রোমোটিং নিয়ে অবশ্য সতর্ক রাজ্য । এ যে সরকারি প্রকল্প । EENADU বাংলা করেছিল প্রথম খবর । জেলের জমিতে হবে প্রোমোটিং । জেল মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস তখন এডিটরকে ফোন করে আশ্বাস দিয়েছিলেন হবে না প্রোমোটিং । যদিও সূত্রের খবর ছিল, জেলের জমিতে হতে চলেছে প্রোমোটিং । জমি বিক্রির ভাগ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা কর্পোরেশনকে । ঠিক হয়, ফ্ল্যাটে ভাগ করে বিক্রি হবে জমি ।
নবান্ন সূত্রে খবর, সেই বিষয়েই দেখভালের জন্য আজ নিয়োগ করা হল প্রশাসক । পৌর ও নগর উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলেই নেমে পড়া হবে কাজে । মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য গত বছরই বেসরকারিভাবে এই প্রকল্পে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছিলেন ।
তবে বিতর্ক এড়াতে হেরিটেজ অংশগুলি সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে প্রশাসন । অর্থাৎ নেতাজি, দেশবন্ধু, জওহরলাল নেহরুদের ব্যবহার করা কুঠুরি সংরক্ষণ করা হবে । এমনকি পুরোনো গাছগুলিরও সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তবু বিতর্ক থামছে কি ? APDR-এর রঞ্জিত সূর বললেন, "জেল থেকে না কি কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে উঁকিঝুঁকি দেয় । আবার জেল থাকার জন্য মোবাইল টাওয়ারের জ্যামার লাগাতে হয় । তাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আসা লোকজনের অসুবিধে হয় । তার বাড়ির পাশে জেল, এ আবার কেমন কথা ! আর সেই কারণেই মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে ইতিহাস ।"