কলকাতা, 4 সেপ্টেম্বর: দিনে দিনে বাড়ছে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যাত্রী ও চালকদের ক্ষোভ । রাজ্যের অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য শেষ করতে গত মার্চ মাসেই এগ্রিগেটার গাইডলাইন বা আইন বলবৎ হওয়ার কথা ছিল (App Cab Aggregators Guidelines)। গাড়ির চালক ও মালিকরা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছিলেন । তবে এখন এই আইনের ভবিষৎ বিশ বাঁও জলে । তাই ফের অ্যাপ ক্যাব চালক মালিক সংগঠন নয়া পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর (Snehasis Chakraborty) দ্বারস্থ হতে চলেছে ৷
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পাঁচটি সংস্থা এগ্রিগেটার লাইসেন্স পেয়েছে । তবে একটি নামজাদা সংস্থা এই আইন প্রণয়ন করার মত পরিকাঠামো নেই এহেন কারণ দেখিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে । স্টেট ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (State Transport Authority)-এর এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "ইতিমধ্যেই অনেকগুলি সংস্থা এগ্রিগেটার লাইসেন্স নিলেও তারা কোনও নিয়ম মানতে শুরু করেনি । এই লাইসেন্সের মেয়াদ 6 মাস । তাই এই সময়ের মধ্যে সংস্থাগুলি নির্দিষ্ট আইনগুলি না মানলে মেয়াদ শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে ।"
আরও পড়ুন: এগ্রিগেটর আইন প্রণয়নে অ্যাপ ক্যাব সংস্থা পেল আরও কিছুটা সময়
এই বিষয় অনলাইন ক্যাব অপারেটরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগ্রিগেটার আইনে (Aggregators Guidelines) একটি ধারা রয়েছে যেখানে পরিবহণ দফতরকে যাত্রী-চালক-সহ গাড়ির সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে বা প্রধান সার্ভার দেখার অনুমতি দিতে হবে । দীর্ঘদিন ধরে চালকদের যে অধিকারের জন্য লড়াই করছিলাম এই আইনটি লাগু হবে শুনে খুব আশাবাদী হয়েছিলাম । কিন্তু এই আইন প্রণয়নের ভবিষৎ অন্ধকারে । তাই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সুরাহার পথ বের করতে বর্তমান পরিবহণমন্ত্রীর কাছে আমরা সময় চেয়েছি ।"
পাশাপাশি এআইটিইউসি (All India Trade Union Congress) অনুমোদিত ওয়েস্টবেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটরস কোর্ডিনেশন কমিটির কনভেনার নাওয়াল কিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, "এভাবে রাজ্য সরকার ঘুরপথে সংস্থাগুলিকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে । চালক এবং মালিকরা আরও বেশি পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন । দিনে দিনে রাস্তা থেকে অ্যাপ ক্যাবের সংখ্যা কমছে এবং যাত্রীদের 'ওয়েটিং টাইম' বা অপেক্ষার সময় বাড়ছে । এখন সংস্থাগুলি 30 শতাংশ কমিশন কেটে নিচ্ছে । কিন্তু একবার এগ্রিগেটার আইন (Aggregators Guidelines) চালু হয়ে গেলে 20 শতাংশর বেশি কমিশন কাটা যাবে না । শুধু চালক বা মালিকদের ক্ষেত্রেই নয় যাত্রীদের থেকেও ইচ্ছেমতো ভাড়া নিতে পারবে না ক্যাব সংস্থাগুলি । তাই এই আইনটি প্রণয়ন করতে যত দেরি হবে তত বেশি সমস্যায় পড়বে চালক মালিক ও যাত্রীরা ।"
আরও পড়ুন: ফের পিছল অ্যাপ ক্যাব নিয়ে নয়া নির্দেশিকা প্রণয়ন, ক্ষুব্ধ মালিক-চালকরা
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই নিয়মটি লাগু হলে কি ধরনের সুবিধা হবে চালক মালিক এবং যাত্রীদের:
1. সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দেওয়া হবে ।
2. চালকদের নুন্যতম 30 ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে ।
3. প্রত্যেকটি গাড়িতে বাধ্যতামূলকভাবে প্যানিক বাটন ও এআইএস 180 ট্রাকিং সিস্টেম থাকতে হবে ।
4. মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালেই কড়া ব্যবস্থা।
5. অ্যাপে যাত্রীদের লোকেশন শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
6. চালক রাইড বাতিল করলে জরিমানা বাবদ দিতে হবে 100 টাকা । সেই জরিমানার টাকা চলে যাবে যাত্রীর অ্যাকাউন্টে ।
7. যাত্রী যদি নির্দিষ্ট অপেক্ষার সময়ের আগেই রাইড বাতিল করেন তবে সে ক্ষেত্রে যাত্রীকেও 100 টাকা জরিমানা দিতে হবে । সেই টাকা চলে যাবে চালকের অ্যাকাউন্টে ।
8. অ্যাপ চালকে ন্যূনতম 5 লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা ও 10 লক্ষ টাকার মেয়াদী বীমার ব্যবস্থা করতে হবে ।